পিরোজপুর: ‘আমাদের মাকে ছেড়ে দেন। মাকে নিয়ে গেলে আমরা খাবো কি? ঘরেতে কোনো খাবার নাই।
মঠবাড়িয়ায় গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি মরিয়ম বেগমকে (৩৮) গ্রেফতার করার সময় তার সন্তানদের বলা এ কথাগুলো বিষাদের সুরে বাজছিল মঠবাড়িয়া থানা পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. জাহিদ হোসেনের কানে।
তাইতো মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) দুপুরে তিনি গ্রেফতারকৃত মরিয়মের বাড়িতে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেন। এএসআই জাহিদ হোসেন জানান, আসামি ধরতে গিয়ে এমন দৃশ্য আমাকে চরমভাবে আঘাত দিয়েছে। আসামির ঘরে ছিল না কোনো খাবার। কিন্তু কি আর করার গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি। আদালতের আদেশ তামিল করতেই হবে। তাই সোমবার (৩০ আগস্ট) মরিয়মকে গ্রেফতার করা হয়। পরের দিন মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) দুপুরে তিনি আসামির বাড়িতে তার সন্তানদের জন্য খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেন।
মরিয়ম বেগম পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার পশ্চিম সেনের টিকিকাটা গ্রামের জাকির হোসেন ওরফে সুতা জাকিরের স্ত্রী।
জানা গেছে, মরিয়মের স্বামী জাকির হোসেন চালাকি করে ব্যবসার জন্য স্ত্রীকে জামিনদার করে ব্রাক ব্যাংকের মঠবাড়িয়া শাখা থেকে ২০ লাখ টাকা ঋণ নেন। একে একে বিভিন্ন এনজিও থেকে আরও ৩০ লাখ টাকা ঋণ নেন জাকির। এরপর গোপনে বিক্রি করে দেন সব জমিজমা। পরে ২০১৫ সালে দ্বিতীয় বিয়ে করে মঠবাড়িয়া থেকে পালিয়ে যান তিনি। জাকির ও তার প্রথম স্ত্রী মরিয়মের বিরুদ্ধে পিরোজপুর অর্থ ঋণ আদালতে এনজিওর পক্ষ থেকে মামলা করা হয়। সেই সময় মরিয়ম বেগম তিন সন্তান নিয়ে নানা বাড়িতে আশ্রয় নেন। সেখানে থেকে অন্য মানুষের ঘরে গৃহকর্মীর কাজ করে ও কাঁথা সেলাই করে সংসার চালাতে থাকেন মরিয়ম। বড় মেয়ে শারমিন আক্তার (১৮), ছেলে রুম্মান (১১) ও ছোট মেয়ে জান্নাতি আক্তারকে নিয়ে তিনি কোনোমতে বেঁচে আছেন। বেশির ভাগ দিনই যেটুকু খাবার জোটে তা রুম্মান ও জান্নাতিকে খাইয়ে মরিয়ম ও তার বড় মেয়ে অভুক্ত থাকেন।
এদিকে ওই এনজিওর মামলায় আদালত থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা ইস্যু হয় স্বামী-স্ত্রীর নামে। স্বামী দীর্ঘদিন ধরে পলাতক। মরিয়ম আছেন এলাকাতেই। সোমবার মঠবাড়িয়া থানার সহকারী পুলিশ পরিদর্শক জেন্নাত আলী, এএসআই জাহিদুল ইসলাম ও লাবনী আক্তার আসামি মরিয়ম বেগমকে ধরতে তার
বাড়িতে যান। মরিয়মকে গ্রেফতার করার সময় তার সংসারের করুণ অবস্থা দেখে মর্মাহত হন এএসআই জাহিদুল। মরিয়মের সন্তানদের কান্না জড়িত কণ্ঠে বলা কথাগুলো তার হৃদয়ে নাড়া দেয়। পরে থানায় মরিয়ম বেগমকে রেখে মঠবাড়িয়া বাজার থেকে ওই পরিবারের জন্য এক মাসের চাল, ডাল, তেল, আলু, লবণ, সাবান, পেঁয়াজ, মরিচ, হলুদ, চিনি, চাসহ বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী নিয়ে মরিয়মের সন্তানদের সামনে হাজির হন এএসআই জাহিদ।
এ বিষয়ে এএসআই জাহিদ বলেন, মরিয়ম এতো অসহায়, তা না দেখলে কেউ বুঝতেই পারবে না। তার অবর্তমানে তার সন্তানদের আহার জোগার করা কঠিন হয়ে পড়বে। তাই যতদিন মরিয়ম জেলে থাকবেন, ততদিন তার সন্তানদের আমার (এএসআই) রেশন দিয়ে সহায়তা করব। এএসআই জাহিদ এর আগে বরিশালের বানারীপাড়া থানায় কর্মরত থাকার সময়ও বিভিন্ন সামাজিক কাজ ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে পুলিশ বাহিনীকে সাধারণ মানুষের কাছে সেবার ক্ষেত্রে একধাপ এগিয়ে রেখেছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০২১
এসআই