যশোর: যশোরের কেশবপুরে জনমনে ত্রাস সৃষ্টিকারী আলোচিত ‘কিশোর গ্যাংয়ের’ সদস্যদের বিরুদ্ধে অবশেষে থানায় মামলা হয়েছে।
পৌর শহরের সাহাপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী অলোক সাহার ছেলে অনিক সাহার দায়ের করা অভিযোগটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করেছে পুলিশ।
এর আগে গত শুক্রবার (২৭ আগস্ট) দুপুরে চাঁদা না দেওয়ায় অনিক সাহা (২২) নামে ওই যুবককে মারধর করে আহত করেছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। টাকার বিনিময়ে জমি দখল, ঘের দখল, পাওনা টাকা আদায়, যৌন হয়রানি, মাদক ব্যবসা ও মাদক গ্রহণ, চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তার, প্রতিপক্ষকে দেখে নেওয়ার হুমকি প্রভৃতি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা।
অভিযোগ রয়েছে, কেশবপুর পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম মোড়লের ছত্রছায়ায় থেকে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড অব্যহত রাখলেও অধিকাংশ সাধারণ মানুষ মামলা করতে সাহস পায় না।
জানা গেছে, কেশবপুর পৌর শহরের আতঙ্ক সন্ত্রাসী জামাল বাহিনী প্রধান শেখ জামাল দীর্ঘদিন ধরে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাঁদা দাবি করে আসছে। এক পর্যায়ে গত শুক্রবার দুপুরে দোকান বন্ধ পেয়ে বাসার সামনে গিয়ে জানতে পারে অনিক সাহা প্রতিবেশীর বাড়িতে শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে খাওয়া-দাওয়া করছে। এ সময় সন্ত্রাসীরা কৌশল করে অনিককে ফোন করে বলে দ্রুত তোমার বাড়ির সামনে আসো, একজন গুরুতর অসুস্থ লোককে রক্ত দিতে হবে। এতে অনিক ভাত ফেলে রাস্তার উপরে এলে টাকা দাবি করে, কী কারণে টাকা দিতে হবে জানিয়ে অনিক প্রতিবাদ করলে প্রথমে তাকে কিল-ঘুষি শুরু করলে অনিক দৌড়ে প্রতিবেশী আত্মীয়ের ঘরে ওঠে। পরে সেখান থেকে ধরে এনে কিশোর গ্যাংয়ের অন্যতম সদস্য শহরের মধ্যকুল গ্রামের মকবুল হোসেন সরদারের ছেলে সাইফুল ইসলাম (২৫), মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে শামীম হোসেন (২২), মৃত মজিদ দফাদারের ছেলে জুয়েল দফাদার (২৫), বায়সা এলাকার মুকুল হোসেনের ছেলে মাসুদ হোসেন (২৩), উপজেলা এলাকার কামরুজ্জামানের ছেলে মাহি রহমান (২১)সহ জামাল বাহিনীর সদস্যরা তাকে লোহার রড দিয়ে আঘাত করে গুরুতর জখম করে। এ হামলায় তার ডান হাত ভেঙে যায়। পরে পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে যশোর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।
স্থানীয়রা জানায়, বিএনপি পরিবারের সন্তান জামাল অটো চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো। কয়েক বছর ধরে সে পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলামের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন করে। কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য সাইফুল ইসলাম, মাহি রহমানসহ অধিকাংশরাই বিএনপি ও জামাত পরিবারের সদস্য। এরাই গোটা উপজেলাব্যাপী চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম শুরু করেছে। ইতোমধ্যে তাদের হাতে সাংবাদিকসহ অসংখ্য মানুষ হামলার শিকার হয়েছেন।
উপজেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক আবু বকর সিদ্দিকী বলেন, কিশোর অপরাধ ও কিশোর গ্যাংয়ের যে নতুন একটি চর্চা কেশবপুরে শুরু হয়েছে, এটার পেছনে কেউ কেউ বড় ভাই হিসেবে যুক্ত থাকছে। ‘বড় ভাই’রা যদি এখনই না থামে, তবে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হবে। পরিবারগুলোকে তার সন্তানদের সঠিক পথে রাখার জন্য সতর্ক থাকতে হবে।
কেশবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বোরহান উদ্দীন বলেন, অনিক সাহার ওপর হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০১৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০১, ২০২১
ইউজি/আরবি