ঢাকা, সোমবার, ২৭ মাঘ ১৪৩১, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

খানাখন্দে ভরা সড়ক, ভোগান্তিতে শ্রীপুর পৌরবাসী

উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১, ২০২১
খানাখন্দে ভরা সড়ক, ভোগান্তিতে শ্রীপুর পৌরবাসী খানাখন্দে ভরা সড়ক। ছবি: বাংলানিউজ

শ্রীপুর, (গাজীপুর): বুদবুদযুক্ত কাদা মাটি আর খানাখন্দে ভরা গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর শহরে গুরুত্বপূর্ণ যাতায়াতের সড়কগুলো বেহাল হয়ে পড়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সড়কে চলাচল হাজার হাজার পৌরবাসী।



বুধবার (১ সেপ্টেম্বর) শ্রীপুর পৌর শহরে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, পৌর শহরের কেওয়া থেকে টেপিরবাড়ী, সচিব গেট থেকে আসপাডা মোড় এবং ২ নম্বর সিঅ্যান্ডবি থেকে চন্নাপাড়াসহ বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো সংস্কারের অভাবে প্রায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বেশিরভাগ সড়কে বর্ষাকালে পায়ে হেঁটে চলাচলের কোনো সুযোগ নেই। দীর্ঘদিন সংষ্কার না হওয়া, সড়কের নিচ দিয়ে কল-কারখানার বর্জ্য নিষ্কাশনের পানির লাইন নিয়ে মাসের পর মাস সংষ্কারবিহীন ফেলে রাখায় ভোগান্তি ক্রমশ বাড়েই চলছে।

সম্প্রতি পৌর শহরের আসপাডা মোড়ে কথা হয় কনফেকশনারী ব্যবসায়ী ইমরান হোসেনের সঙ্গে তিনি বলেন, মাসিক দোকানভাড়া পাঁচ হাজার টাকাও আয় করা সম্ভব হচ্ছে না। সড়কের এমন বেহাল অবস্থার কারণে চলাচল বন্ধ। বেচা-কেনা নেই। সড়কের আশপাশে যারা বাসা ভাড়া থাকতেন তারাও অন্যত্র চলে গেছেন। গত দেড় বছর ধরে ব্যবসায় লোকসান গুণতে হচ্ছে। একদিকে জনবহল সড়কে চলাচল বন্ধ আরেকদিকে করোনা ভাইরাস গত দুই বছর ধরে হানা দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এটি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ হারিছ উদ্দিন আহমেদ সড়ক। দুই বছর আগেও সড়কে কষ্ট করে মানুষ চলাচল করত। কিন্তু, গত এক বছর একেবারেই চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কেওয়া বাজার থেকে আনসার টেপিরবাড়ী পর্যন্ত সড়কের প্রায় দুই কিলোমিটার সড়ক শ্রীপুর পৌরসভার নিয়ন্ত্রণাধীন। গত প্রায় আট বছর ধরে ওইসব সড়কগুলো সংষ্কার করা হয়নি। সংস্কারের অভাবে সড়কটি চলাচলের প্রায় অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অপরিকল্পিতভাবে বসত-বাড়ি নির্মাণ করায় সড়কটি ক্রমশ সংকুচিত হয়ে আসছে। পানি নিষ্কাশনের কোনো ড্রেন না থাকায় বাসা-বাড়ির ব্যবহৃত পানি সড়কে জমে থাকছে। প্রতিদিন এ সড়কে পাঁচ হাজার মানুষ চলাচল করতেন। অচলাবস্থার কারণে জনগুরুত্বপূর্ণ এ সড়কে মানুষের চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে।

শ্রীপুর পৌরসভা কার্যালয় ও উপজেলা সদরে যাতায়াতের ক্ষেত্রে স্থানীয়দের জন্য সড়কটি গুরুত্বপুর্ণ হলেও শ্রীপুর পৌরসভার আওতাভুক্ত এ সড়কটি নির্মাণে কোনো গুরুত্ব নেই। কাদায় নিমজ্জিত থাকা সড়কটি দেড় বছর ধরে এভাবে পড়ে থাকলেও সংষ্কারের কোনো উদ্যোগ নেয়নি পৌর কর্তৃপক্ষ। এসব কাঁচা সড়কে দীর্ঘদিনেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। গ্রামীণ অবকাঠামো ও সড়ক উন্নয়নের আওতায় না আসায় এসব সড়কের প্রায় দেড় কিলোমিটার কাঁচা রয়ে গেছে। এতে পৌরসভার কয়েক গ্রামের অন্তত ১০ হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে।

এক সময় ছিল পাকা রাস্তা, কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় এক সময়ের পিচ ঢালাই সড়ক এখন মাটির সড়কে পরিণত হয়েছে। সড়কের পিচ উঠে মাটির সড়ক হয়েছে। এখন আর বোঝার উপায় নেই এখানে এক সময় পাকা রাস্তা ছিল। বর্তমান অবস্থা এতটাই খারাপ যানবাহন তো দূরের কথা পথচারীও হেঁটে যাতায়াত করতে পারছে না।

গিলারচালা গ্রামের বাসিন্দা মমতাজ উদ্দিন ও সফিকুল ইসলাম ফকির জানান, মাত্র দেড় কিলোমিটার রাস্তার জন্য ৩ কিলোমিটার ঘুরে উপজেলা সদরে যাতায়াত করতে হয়। দেড় কিলোমিটার অনুপযোগী রাস্তার জন্য দুই পাশের পিচঢালাই পাকা রাস্তার সফল ব্যবহার নিশ্চিত হচ্ছে না।

সরেজমিনে কথা হয় পৌর শহরের স্থানীয় অটোরিকশাচালক কালামের সঙ্গে। কালাম বলেন, মাটির রাস্তা হলেও কষ্ট করে রিকশা চালানো যায়। কিন্তু, এ সড়কের দেড় কিলোমিটার অংশে বড় বড় খানাখন্দে বৃষ্টির পানি আর কাদা জমে। ফলে রাস্তায় ভারী যানবাহন, ভ্যান-রিকশা দূরের কথা এখন আর পায়ে হেঁটেও পাড়ি দেওয়া যাচ্ছে না। রাস্তাটি দেখে বোঝার উপায় নেই এখানে এক সময় পাকা পিচঢালাই রাস্তা ছিল।

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী নাঈম হোসেন বলেন, প্রতিদিন সড়কে হাজার হাজার মানুষ চলাচল করতেন। অচলাবস্থার কারণে জনগুরুত্বপূর্ণ এ সড়কে মানুষের চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। বৃষ্টি হলে দোকানে পানি ঢুকে। রাস্তা আর দোকানের মেঝে সমান হয়ে গেছে। কোনো মানুষ ভুল করে এ সড়কে ঢুকে গেলে দোকানের ওপর দিয়ে পারাপার হয়। আর মানুষ চলাচল না করলে বেচাকেনা বন্ধ। বিগত কয়েক বছর ধরে বহু কষ্টে দিন যাপন করছেন তারা।

স্থানীয় বাসিন্দা ফখরুল ইসলাম বলেন, এটি শ্রীপুর পৌরবাসীর যাতায়াতের জন্য অন্যতম প্রধান সড়ক। অথচ দেড় কিলোমিটার অনুপযোগী অংশের জন্য দুই পাশের ভালো রাস্তার সফল ব্যবহার নিশ্চিত হচ্ছে না। প্রায় দেড় বছর আগে এ সড়কের নিচ দিয়ে পানির পাইপ স্থাপনের পর থেকে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়ে। সড়কের আশপাশে কমপক্ষে ৮টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও পোশাক কারখানা রয়েছে। এলাকাবাসী ছাড়াও ওইসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও পোশাক কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীদের যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

শ্রীপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী তবিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, উন্নয়নমূলক কাজের জন্য ইতোমধ্যে তিনটি রাস্তার টেন্ডার দেওয়া হয়েছে। আগামী মাসের মধ্যে একাধিক সড়কের সংষ্কার কাজ শুরু করা হবে। সচিব গেট থেকে আসপাডা মোড় পর্যন্ত রাস্তাটির সংষ্কার কাজও এরই অংশ হিসেবে থাকবে।

শ্রীপুর পৌরমেয়র আনিছুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে উন্নয়ন কাজ স্থবির ছিল। সম্প্রতি দ্রুতগতিতে সংষ্কার কাজ শুরু হয়েছে। যেসব কাজ বাকি রয়েছে সেগুলো চলতি অর্থ বছরেই সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৯৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০১, ২০২১
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।