চাঁপাইনবাবগঞ্জ: চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার পদ্মা ও মহানন্দা নদীর তীরবর্তী এলাকায় বাড়ছে বিষধর সাপের উপদ্রব। এগুলোর মধ্যে রয়েছে বিষধর রাসেল ভাইপারও।
স্থানীয়রা জানায়, ঘরে ও উঠান থেকে শুরু করে সড়কেও দেখা যায় নানান প্রজাতির বিষধর সাপ। বাড়ির আঙিনা ও আশপাশে বিষধর সাপের আনাগোনা হওয়ায় সাপের কামড়ে হতাহতের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। অবাধে বিচরণ করতে দেখা যায় এসব সাপের। সাপের কামড়ে অসুস্থ হয়ে শেষ পর্যন্ত অনেকেই মৃত্যু হয়।
স্থানীয়রা বলছেন, প্রতিদিন বাড়ির উঠান বা মাছ ধরার জালে ধরা পড়ছে নাম না জানা সাপসহ বিষধর রাসেল ভাইপার। সাপের দংশনে রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অত্যন্ত জরুরি। অথচ শিবগঞ্জ উপজেলায় সাপে কাটা রোগীর জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা নেই। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দংশিত রোগীর জন্য নেই অ্যান্টিভেনাম। এতে স্থানীয় বাসিন্দারা চরম ক্ষোভ জানিয়েছেন।
ভুক্তোভোগীদের অভিযোগ সাপে কাটা রোগী শিবগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বিভাগীয় কিংবা জেলা শহরে পাঠানো হয়। এ অবস্থায় সময়ক্ষেপণের কারণে অনেক সময় রোগী পথিমধ্যে মারা যান। আবার কবিরাজ ওঝার শরণাপন্ন হয়ে অনেকে অপচিকিৎসার শিকার হন।
ধারণা করা হচ্ছে, ভারত থেকে পদ্মায় ভেসে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এসব সাপ।
পদ্মা তীরবর্তী এলাকার তোফিকুর রহমান বলেন, বর্ষাকালে এই অঞ্চলে সাপের উপদ্রব বাড়ে। সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসা থাকার পরও প্রয়োজনীয় ঔষধ শিবগঞ্জে না থাকায় আমরা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।
মো. সোহেল নামের আরেক যুবক বলেন, উপজেলা পর্যায়ে সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসা না থাকা অকল্পনীয়। প্রশাসনের সঠিক নজরদারি না থাকায় সাপে কাটা রোগীরা সঠিক চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে না।
অপর চরাঞ্চলবাসী জুয়েল জানান, গত ১৫ দিনে এলাকাবাসী বিভিন্ন প্রজাতির ১৬টি সাপ পিটিয়ে মেরেছে। বন্যার কারণে চরাঞ্চলবাসী এমনিতেই দুর্ভোগের শিকার এর সঙ্গে সাপের উপদ্রব বানভাসী মানুষকে আতঙ্কগ্রস্ত করে তুলেছে।
এ ব্যাপারে শিবগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার ডা. আব্দুল মজিদ জানান, সব সাপ বিষধর নয়। আগে সবাইকে সাপের কাটার বিষয়টি নিশ্চিত ও কোন সাপে কেটেছে তা শনাক্ত করতে হবে। সাপের কাটা স্থানটি সাবান দিয়ে ভালোভাবে পরিস্কার করে নিতে হবে এবং হালকা কিছু দিয়ে বেঁধে রাখতে হবে।
তিনি আরো বলেন, সাপে কাটার স্থানে বাঁধন দেওয়া ঠিক নয়। এই বাঁধনের কারণে রক্ত চলাচল বিঘ্নিত হয়। তাই সাপে কাটলে আতঙ্কিত না হয়ে এবং কবিরাজের কাছে শরণাপন্ন না হয়ে যত দ্রুত সম্ভব স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসতে হবে। এতে রোগী বেঁচে যাবার সম্ভাবনা বেশি।
সাপে কাটা রোগী হাসপাতালে আনলে অ্যান্টিভেনম না থাকলে কিভাবে জীবন রক্ষা সম্ভব এমন প্রশ্নের উত্তর তিনি এড়িয়ে যান।
অন্যদিকে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সায়েরা খান বলেন, এখানে সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসার ঔষুধ নেই। এছাড়া সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসা দেওয়ার মতো তেমন কোনো সরঞ্জামও নেই। এ কারণে হাসপাতালে সাপে কাটা রোগী আসলে বিভাগীয় অথবা জেলা শহরে হস্তান্তরের পরামর্শ দেওয়া হয়। অ্যান্টিভেনম বরাদ্দের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৪ ঘণ্টা, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১
কেএআর