কক্সবাজার: কক্সবাজারের রামু উপজেলার ধোয়া পালং এলাকায় মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) ভোরে বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে বন্য মা হাতি মৃত্যুর ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে বনবিভাগ। এ ঘটনায় আটক হয়েছেন একজন।
তবে এ ধরনের ঘটনায় বনবিভাগের পক্ষ থেকে আইনি পদক্ষেপ গ্রহন এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে বনবিভাগের পক্ষ থেকে দফায় দফায় সচেতনতামূলক সভা ও প্রচারণা চালানো হলেও বন্য হাতি মৃত্যুর ঘটনা কমছে না। এভাবে ২০০৫ সাল থেকে কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের আওতাধীন টেকনাফ, উখিয়া ও রামুর বনাঞ্চলে নানাভাবে ২৯টি হাতির মৃত্যু হয়েছে।
এর মধ্যে বেশ কয়েকটি হাতি গুলি ও বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে মারা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. হুমায়ুন কবির।
ডিএফও) মো. হুমায়ুন কবির আরও বলেন, বনাঞ্চল বেদখল, বিশেষ করে কক্সবাজার অঞ্চলে হাতির অভয়ারণ্যগুলোতে নানা স্থাপনা এবং রোহিঙ্গা শিবিরের মত বিশাল এলাকাজুড়ে বসতি গড়ে তোলার কারণে আবাসস্থল হারিয়েছে বন্যহাতি। পাশাপাশি খাবার সংকটে পড়ে হাতিগুলো বার বার লোকালয়ে হানা দিচ্ছে।
হাতি কারও ফসল নষ্ট করলে তার ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে সরকার। এছাড়াও হাতিসহ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে বনবিভাগের তরফ থেকে দফায় দফায় সচেতনতামূলক সভা ও প্রচারণা চালানো হয়। তারপরও হাতির ওপর মানুষের আক্রোশ থামানো যাচ্ছে না। হাতি রক্ষায় মানুষের সচেতনতার বিকল্প নেই বলে জানান ডিএফও হুমায়ুন।
এক বছরে মারা গেছে ১৩টি, আক্রমনে ২১ জনের মৃত্যু-
বনবিভাগের চট্টগ্রাম অঞ্চলের বন সংরক্ষক আবদুল আওয়াল সরকার বলেন, ২০২০ সালের জুন মাস থেকে এ বছরের জুন মাস পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন অঞ্চলে ১৩টি হাতি মারা গেছে। এ সময়ে হাতির আক্রমণে ২১ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এই অর্থ বছরে হাতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে এক কোটি ১৭ লাখ ৮২ হাজার টাকা।
রামুতে হাতি হত্যার ঘটনায় ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা-
কক্সবাজারের রামু উপজেলার ধোয়া পালং এলাকায় মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে বন্য মা হাতি মৃত্যুর ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে বনবিভাগ। এ ঘটনায় জড়িত একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বুধবার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কক্সবাজার বন আদালতে ২০১২ সালের বন্যপ্রাণি (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে ধোয়া পালং রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন বাদী হয়ে মামলাটি করেন। এ মামলায় গ্রেফতার হওয়া নজির আহমদকে (৬৫) প্রধান আসামি করা হয়েছে।
রেঞ্জ কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন জানান, গত সোমবার রাতে ৭-৮টি বুনো হাতির পাল ধোয়া পালং বনে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। হাতির পাল যাতে ধান ক্ষেতে নামতে বাধা পায়-এ জন্য বৈদ্যুতিক ফাঁদ দেয় নজির আহমদ ও তার ছেলেরা। এ দিন রাতেই মাদাম জাতের হাতিটি বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে মারা যায়।
রেঞ্জ কর্মকর্তা আরও জানান, রাতেই নজির আহমদ, তার চার ছেলে ও নিকটাত্মীয়রা মৃত হাতিটির শরীর থেকে মাথা ও পা নৃশংসভাবে আলাদা করে মাটিতে পুঁতে ফেলার চেষ্টা চালায়। কিন্তু ভোর হয়ে যাওয়ায় স্থানীয় লোকজন দেখে ফেললে বিষয়টি জানাজানি হয়। পরে উপজেলা প্রশাসন, বনবিভাগ ও পুলিশ সদস্যরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান।
রামু থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) অরূপ কুমার চৌধুরী জানান, এ ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত স্থানীয় নজির আহমদকে বনবিভাগ গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করেছে। তার স্বীকারোক্তিতে অন্য আসামিদের তালিকা ও তাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. হুমায়ুন কবির হাতি হত্যায় জড়িত নজির আহমদের স্বীকারোক্তির উদ্বৃতি দিয়ে জানান, কিভাবে হাতিটিকে হত্যা করা হয়েছে তিনি তা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। এ ঘটনায় তার মধ্যে কোনো অপরাধ বোধ দেখা যায়নি।
বাংলাদেশ সময়: ২৩৩৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০১, ২০২১
এসবি/আরএ