ঢাকা, সোমবার, ২৭ মাঘ ১৪৩১, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

আমিষের বিকল্প উৎস হতে পারে উট পাখি

সাগর ফরাজী, সাভার করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২, ২০২১
আমিষের বিকল্প উৎস হতে পারে উট পাখি

সাভার (ঢাকা): সেদিন আর বেশি দূরে নয়, যখন উট পাখির মাংসে মিটবে দেশবাসীর আমিষের চাহিদার বড় একটি অংশ। এমনটাই আশা করছেন সাভারের বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএলআরআই) বিজ্ঞানীরা।

২০১৯ সালের ১৮ জুন প্রধানমন্ত্রী অনুমোদিত একটি প্রকল্পে ২২টি উট পাখি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন তারা। এটিই বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো উন্নত জাতের উট পাখি নিয়ে গবেষণা।

উট পাখি আমাদের দেশের আবহাওয়ার জন্য কতটুকু উপযোগী, তা নিয়ে প্রাথমিক অবস্থায় গবেষণা চলছে। গবেষণার পর অধিক মাত্রায় মাংস উৎপাদনকারী এসব উটপাখি পৌঁছে দেওয়া হবে খামারি পর্যায়ে। দেশে আমিষের চাহিদা পূরণে উটপাখি নতুন সংযোজন হবে বলে আশা করছেন এখানকার বিজ্ঞানীরা।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যেমন ভারত, নেপালসহ দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশে এ প্রাণীটির উৎপাদন বেড়েছে। তবে উট পাখির বাচ্চা দেশের বাইরে থেকে আনতে হয় বলে আমাদের দেশে এর উৎপাদন গুরুত্ব পায়নি। এখন আমাদের দেশের আবহাওয়ায় উট পাখি পালন খুবই লাভজনক। উট পাখির মাংস অনেকটা রেড মিটের মতো হলেও এতে আয়রনের পরিমাণ অনেক বেশি। কোলেস্টেরল ও ফ্যাটের পরিমাণ খুব কম থাকে। যার কারণে এটি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।

সাভারের বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটে (বিএলআরআই) গিয়ে দেখা মেলে এসব উট পাখির। একটি চতুর্ভুজ জালের দেয়াল দিয়ে রাখা হয় পাখিগুলোকে। বড় তিনটি উট পাখি এক পাশে আলাদা করে রাখা হয়েছে ও অন্য পাশে চারটি বাচ্চা রাখা হয়েছে। এছাড়া দু’জন রয়েছেন, এগুলোর দেখভাল করার জন্য। সেখানে মাটিতে বেড়ে ওঠা বিভিন্ন শাক ও ঘাস ঠুকরে ঠুকরে খাচ্ছে উট পাখিগুলো।

উট পাখিগুলোর পরিচর্যা ও দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন তিন-চারজন। তারা বলেন, সকালে উঠে খামারে এসে আগে উট পাখিগুলো ছেড়ে দিই। তারপর দু’টি পাত্রে পানি দিয়ে রাখি। পানি দেওয়ার কিছুক্ষণ পর খাবার দেই। দিনে তাদের তিন-চার বার খাবার দিতে হয়। উট পাখি শাক সবজি খুব পছন্দ করে। দুপুরে গোসল করানো হয়। ঝরনার মতো পানি দিলে নিজেরাই গোসল করে নেয়।

দেশে সবার আগে উট পাখি নিয়ে গবেষণা শুরু করেছেন হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. উম্মে সালমা এবং প্রফেসর ড. গাফফার মিয়া।  

তাদের তত্ত্বাবধানে শিক্ষার্থী পিএইচডি ফেলো খন্দকার তৌহিদুল ইসলাম বিএলআরইয়ে এসে উট পাখির ওপর গবেষণা করছেন। খন্দকার তৌহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ২০২০ সালের মাঝামাঝি আফ্রিকা থেকে বাংলাদেশে গবেষণার জন্য উট পাখি এনেছি। আমাদের গবেষণার এখনো দুই বছর বাকি আছে। আর এরই মধ্যে এক বছর চলে গেছে। আমরা এর ভেতর অনেক কিছুই জানতে পেরেছি। সাধারণত তৃণভোজী অর্থাৎ ঘাস লতাপাতা ও দানাদার খাবার খেয়ে বেঁচে থাকে উট পাখি। উট পাখি সাত থেকে আট ফুট পর্যন্ত উঁচু হয়। এর ওজন ১৫০ থেকে ১৮০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। বর্তমানে উট পাখির মাংসের বাজার মূল্য প্রতি কেজি ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা।  গরু-ছাগলের বিকল্প হিসেবে উট পাখি পালন করা যায়। একটি গরু বছরে একটি মাত্র বাছুর দেয়। আর একটি উট পাখি বছরে প্রায় ৫০ থেকে ৭০টি ডিম দিয়ে থাকে, যা থেকে কমপক্ষে ৫০টি বাচ্চা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর একটি উট পাখি তিন থেকে আড়াই বছর বয়সে প্রাপ্তবয়স্ক হয়। এদের মাংসের গুণাগুণ অনেক ভালো ও সুস্বাদু। বর্তমানে আমরা যেভাবে মুরগি পালন করি, সেভাবে যদি উট পাখি পালন করি, তাহলে দেখা যাবে উট পাখি অনেক বেড়ে গেছে। এখন গবেষণা শেষ হলে আমরা উট পাখি কীভাবে বাংলাদেশে পালন করা যাবে, তার সব কিছু বলতে পারবো।

বিএলআরআইয়ে উট পাখি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন প্রকল্প পরিচালক ও প্রধান বৈজ্ঞানিক ড. মো. সাজেদুল করিম সরকার। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, প্রথমিক অবস্থায় গবেষণার জন্য তিন বছর মেয়াদি একটি পরিকল্পনা আমরা হাতে নিয়েছি। অনেকেই শখে উট পাখি পালন করছেন। আমাদের দেশে বাণিজ্যিকভাবে উট পাখি পোষা হয় না। তাই উট পাখি পোষা সহজ এবং এর মাংসকে জনপ্রিয় করার জন্য আমরা কাজ করছি। গুণাগুণ বিচারে উট পাখির মাংসের তুলনা হয় না। গত বছর দেশে আমিষের চাহিদার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে সাউথ আফ্রিকা থেকে কিছু উট পাখি আনা হয়। এখানে পাখিগুলো লালন পালন ও গবেষণা চলছে। গবেষণার পাশাপাশি আমাদের দেশের পরিবেশে তাদের খাপ খাওয়াতে নতুন প্রজনন করা হচ্ছে। তিন বছরের গবেষণা শেষ হলে খামার পর্যায়ে পোষার জন্য পাখিগুলো খামারিদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, উট পাখির মাংস ডায়বেটিসের রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। একটি ব্রয়লার মুরগি প্রাপ্তবয়স্ক হতে যে সময় লাগছে, সেই একই সময়ে তিনগুণ গ্রোথ হচ্ছে উট পাখির। যেহেতু আমাদের মাংসের উৎপাদন বাড়াতে হবে, সেহেতু উট পাখি পোষায় গুরুত্ব দেওয়া আবশ্যক। মাংসের জন্য উট পাখি একটি বড় সম্ভবনাময় পাখি। আমাদের এ বিপুল জনগোষ্ঠীর ভেতরে নিরাপদ আমিষের যোগান দিতে গেলে মুরগি, হাঁস, টারকি, কোয়েল, কবুতর ও তিতিরের পাশাপাশি উট পাখি পালন করলে মাংসের চাহিদা অনেকটা পূরণ হবে। মানুষের খাবারে বৈচিত্র্য আনার পাশাপাশি উট পাখির মাংস সুলভমূল্যে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে আমাদের গবেষণা অব্যাহত রয়েছে। দ্রুতই দেশে উট পাখির বাণিজ্যিক খামার গড়ে তোলার ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০২, ২০২১
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।