রাঙামাটি: পাহাড়ি জেলা রাঙামাটি রূপ-বৈচিত্রের জন্য সারাদেশে সুখ্যাতি থাকলেও অঞ্চলটি দুর্গম হওয়ায় এর যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত কঠিন। এরপরও বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে এসব দুর্গম এলাকাগুলোতে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করতে এবং পরিসেবার মান বাড়াতে সেতু, কালভার্ট, সড়ক নির্মাণ করে দিচ্ছে।
কিন্তু স্থানীয় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্নীতি, ঠিকাদারদের গাফিলতি এবং আঞ্চলিক নানা সমস্যার কারণে এখানে উন্নয়ন অনেককাটা ফ্যাকাসে। যে কারণে স্থানীয় জনগণ সরকার কর্তৃক উন্নত পরিসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বছরের পর বছর ধরে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাঙামাটি অন্যতম জনবহুল উপজেলার নাম লংগদু উপজেলা। সরকার এ উপজেলার জনগণের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করে দিতে আটরকছড়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মাইনী খালের ওপর (কাপ্তাই হ্রদ) আটারকছড়া ডানে গ্রাম নামক এলাকায় জেলা পরিষদের অর্থায়নে ২০১২-১৩ অর্থ বছরে জনগণের পারাপারের সুবিধার্থে এক কোটি টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়।
উদ্যোগ অনুযায়ী কাজ শুরু করা হলেও মাঝ পথে সেতু প্রকল্পের পূর্ণাঙ্গ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। অর্থাৎ শেষ হইয়াও হইল না শেষ আটারকছড়া সেতুর কাজ। সেতুটি দিয়ে চলাচল করার জন্য নদীর দুই পারে কোনো কাঁচা-পাকা সড়ক তৈরি করা হয়নি। এছাড়াও ইউনিয়নটির তিন ব্রিজ এলাকা থেকে মিজান মুন্সী বাড়ি পর্যন্ত এবং মিজান মুন্সী বাড়ি থেকে ৪ নম্বর পোস্ট (বিজিবির চেকপোস্ট) পর্যন্ত কোনো পাকা সড়ক নেই। কারণ সড়কটি দিয়ে তিন গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ চলাচল করে।
বর্ষা মৌসুমে কাঁচা সড়কে যান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে। যে কারণে সহস্র মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বছরের পর বছর ধরে। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, দায়িত্বের প্রতি অবহেলা এবং ঠিকাদারের দুর্নীতির কারণে সেতুর কাজটি শেষ হয়নি বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। সড়ক না থাকায় স্থানীয় জনসাধারণ সেতুর পিলারে মই (কাঠের সিঁড়ি) দিয়ে উঠে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে যোগাযোগ করে। মই দিয়ে উঠার সময় স্থানীয় অনেক জনগণ পড়ে দিয়ে আহতও হয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রব বাংলানিউজকে বলেন, এপারে আমরা ৬০টি পরিবার বসবাস করি। হাট-বাজার, স্কুল-কলেজ সবই পশ্চিম পারে। পাশাপাশি এপারে উৎপাদিত ফসলাদি হাটে নিয়ে যেতে হয়। অর্থাৎ আমাদের পশ্চিম পারে প্রতিদিন চলাচল করতে হয়। সেতুটি নির্মাণের নয় বছর পার হলেও সড়ক নির্মাণ না হওয়ায় আমাদের অনেক কষ্ট ভোগ করতে হচ্ছে।
একই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা মিজান মুন্সি বাংলানিউজকে বলেন, শুষ্ক মৌসুমে মই দিয়ে ব্রিজে উঠে আমাদের পারাপার হতে হয়। মই (কাঠের সিড়ি) দিয়ে পারাপার হতে গিয়ে অনেকেই নিচে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছে।
বিশেষ করে স্কুল-মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের জন্য ব্রিজটি মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। অতিসত্তর ব্রিজটির অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত এবং সড়ক নির্মাণ করার জোর দাবি জানান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে।
আটারকছড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মঙ্গল কান্তি চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, ব্রিজের কাজটি পার্বত্য রাঙামাটি জেলা পরিষদ করেছে। এ ধরনের ব্রিজের কাজ করার মতো আমাদের পরিষদে ফান্ড নেই। যে প্রতিষ্ঠানটি কাজ শুরু করেছে তারা যদি কাজটি অসমাপ্ত করে রাখে তাহলে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি তো হবেই।
চেয়ারম্যান আরও বলেন, আমি অতীতে জনগণের পারাপারের সুবিধার্তে কাজটি শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানটিকে তাগাদা দিয়েছি। এলাকার একজ নির্বাচত জনপ্রতিনিধি হিসেবে এখনো জোর দাবি জানাচ্ছি জনগণের স্বার্থে অতিসত্ত্বর সময়ে জেলা পরিষদ যেন প্রকল্পটির অসমাপ্ত কাজটি শেষ করে দেয়।
রাঙামাটি জেলা পরিষদের নির্বাহী প্রকৌশলী বিরল বড়ুয়া বাংলানিউজকে বলেন, এ ব্যাপারে আমি অবগত নয়। যে কারণে কোনো তথ্য দিতে পারছি না।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০২, ২০২১
এএটি