ঢাকা, সোমবার, ২৬ মাঘ ১৪৩১, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

৫ হাজার টাকায় ভ্যাকসিনের প্রলোভন!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২, ২০২১
৫ হাজার টাকায় ভ্যাকসিনের প্রলোভন!

ঢাকা: দেশজুড়ে চলমান করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রয়োগ কর্মসূচি ঘিরে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে একটি চক্র।  

ভ্যাকসিন পেতে অনলাইনে নিবন্ধন শেষে মেসেজ প্রাপ্তির বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

দ্রুত মেসেজ প্রাপ্তির প্রলোভন দেখিয়ে আড়াই থেকে পাঁচ হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিলেন ওই চক্রের সদস্যরা।

বুধবার (১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর মুগদা হাসপাতাল এলাকা থেকে এই চক্রের চারজনকে আটক করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-৩)।

আটক চারজন হলেন- নুরুল হক (৪৭), সাইফুল ইসলাম (৩০), ইমরান হোসেন (২৩) ও দুলাল মিয়া (৩৭)। এ সময় তাদের কাছ থেকে মেসেজের প্রতারণায় ব্যবহৃত চারটি মোবাইল উদ্ধার করা হয়েছে।

র‌্যাব জানায়, সাধারণত বিদেশগামীদের টিকা নেওয়ার বাধ্যবাধকতা ও তাড়া থাকে। তাদের অনেক ক্ষেত্রে ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়, কারো টিকিট কাটা থাকে। তাদের টিকা নেওয়ার এই তাড়ার সুযোগে চক্রটি অর্থ আত্মসাতের সুযোগ নেয়। এখন পর্যন্ত অন্তত দুই শতাধিক মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তারা।

বৃহস্পতিবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, প্রবাসীদের টিকা দেওয়ার জন্য সরকার সাতটি হাসপাতাল নির্ধারণ করে দিয়েছে। চক্রটি প্রবাসীদের টার্গেট করেই সেসব হাসপাতালের সামনে ঘোরাফেরা করতে থাকে। টিকা পেতে বিভিন্ন তাড়ার কারণে প্রবাসীরা নির্ধারিত হাসপাতালে যোগাযোগ করেন। আর তখনই প্রতারক চক্রটি দ্রুত মেসেজ পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়।

টাকা নেওয়ার পর অনেকে স্বাভাবিক ভাবেই মেসেজ পেয়ে যেতেন, তখন এই প্রতারকরা নিজেরা ক্রেডিট নিতো। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তদবির করে দুই-একটি মেসেজ দেওয়ার ব্যবস্থা করতো। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা প্রলোভন দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়। যারা মেসেজ পেতেন তারা সাধারণত অভিযোগ করেননি। কিন্তু টাকা দিয়েও মেসেজ না পেয়ে অনেকে অভিযোগ করেছেন। এখন পর্যন্ত প্রায় ২শ জনের তথ্য পাওয়া গেছে, যাদের কাছ থেকে আড়াই থেকে ৫ হাজার টাকা আদায় করা হয় বলেও জানান তিনি।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, এই চক্রের মূলহোতা আটক নুরুল হক। আটক সাইফুল ও ইমরান হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে ভিকটিমদের দ্রুত মেসেজ পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখাতো। এরপর রাজি হলে তাদেরকে নুরুল হকের কাছে নিয়ে যাওয়া হতো, সেখানে টাকা নিয়ে টাকা নির্ধারণ করা হয়। টাকার পরিমাণের ওপর নির্ভর করে ভিকটিমদেরকে দুলালের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে কতদিনের মধ্যে মেসেজ পাবে সেই নিশ্চয়তা দেন দুলাল।

নুরুল দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলেন, ইমরান একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে চাকরিরত। সাইফুল রমনা এলাকার চা-বিক্রেতা, তিনি একসময় একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে আউটসোর্সিংয়ে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দুলাল মিয়া একটি হাসপাতালের আউটসোর্সিংয়ে অ্যাম্বুলেন্স চালক হিসেবে কর্মরত। তাদের অবস্থান ও পেশার কারণে বিদেশগামীদের সঙ্গে সংযোগ তৈরি হয়। তারা মুগদা, শাহবাগ, রমনা, শেরে-বাংলা নগর, মিরপুর, মহাখালীসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সক্রিয় ছিলো।

এক প্রশ্নের জবাবে র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, আটক দুইজন সরকারি প্রতিষ্ঠানে আউটসোর্সিংয়ে কর্মরত থাকার সুবাদে সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের সঙ্গে তাদের পূর্ব পরিরিচয় ছিলো। তাদের কাছ থেকে আমরা ২-৩ জনের তথ্য পেয়েছি, যাদের মাধ্যমে হয়তো ১০-১৫টি মেসেজ তারা পাঠাতে পেরেছে। বিষয়টি আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবো।

এছাড়া মামলার তদন্তে জড়িত অন্যদের তথ্য বেরিয়ে আসবে, সে অনুযায়ী পরবর্তীতে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০২, ২০২১
পিএম/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।