নীলফামারী: প্রধানমন্ত্রী যেসময় দেশজুড়ে নিম্নবিত্তদের জন্য গৃহ নির্মাণ করছেন, ঠিক সেই সময়ে ৩৫টি পরিবারকে গৃহহীন করার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌরসভা। দখল ছাড়তে বাধ্য করতে ঘরের পাশে ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, নীলফামারীর সৈয়দপুরে কামারপুকুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ধলাগাছ মৌজায় ২ নম্বর খতিয়ানের ২৬৬০ ও ২৬৬৩ নম্বর দাগের ১ একর ১৩ শতক সম্পত্তির ক্রয়সূত্রে মালিক পৌরসভা। কিন্তু ৪০-৫০ বছর ধরে পৌরসভার কোনো নজরদারি না থাকায় ওই সম্পত্তির ৭০ শতক জায়গায় কাচা বাড়িঘর তুলে বাস করছে প্রায় ৩৫টি পরিবার। বসবাসকারীরা পেশায় ভ্যান-রিকশা চালক, বাদাম বিক্রেতা, বইয়ের হকার, ইটভাঙা শ্রমিক ও দিনমজুর।
ওই এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, আমরা পৌরসভার জায়গায় বসবাস করছি সত্যি, কিন্তু কর্তৃপক্ষ আগাম কোনো নোটিশ না দিয়েই গত ১ সেপ্টেম্বর আকস্মিক আমাদের বাড়িঘর ভাঙচুর করে উচ্ছেদের চেষ্টা চালায়। সৈয়দপুর পৌরসভার মেয়র রাফিকা আকতার জাহানের নেতৃত্বে প্যানেল মেয়র-১ শাহীন হোসেন, ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোস্তাফিজুর রহমান সরকার মুন্না, ১৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জোবায়দুল ইসলাম শাহীন, ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কাজী মনোয়ার হোসেন হায়দার, প্যানেল মেয়র-৩ সাবিয়া সুলতানা, ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম রয়েল, ১২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল খালেক সাবুসহ আরও ক’জন কাউন্সিলর ও পৌর সচিব এবং কর্মচারী উচ্ছেদ অভিযানে অংশ নেয়। অনেক কাউন্সিলর নিজ হাতে ঘরের বেড়া খুলে মাটিতে ফেলেন বলে তারা দাবি করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন বলেন, জবর দখল বা অবৈধ দখল যেটাই হোক না কেন তারা দীর্ঘদিন ধরে ওখানে বসবাস করছেন। হঠাৎ করে এসে বাড়িঘর ভেঙে উচ্ছেদ করা উচিত হয়নি। কোনো দখল অপসারণ করতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি থাকতে হয় কিন্তু পৌর পরিষদের ওই উচ্ছেদ অভিযানে এসব মানা হয়নি।
ওই সম্পত্তিতে বসবাসকারী তিলখাজা বিক্রেতা (হকার) রমজানী বাংলানিউজকে জানান, তার ছেলে রাজেস (১৩) বৈদ্যুতিক শক খেয়ে গুরুতর অসুস্থ ও শয্যাশায়ী। ঘরের বেড়ায় পৌরসভার স্তুপ করে রাখা ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে দম নেওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে। বিষয় অমানবিক বলে তিনি আক্ষেপ করেন।
ভ্যানচালক মোর্শেদুল বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের উচ্ছেদ করলে আমরা যাবো কোথায়? বিকল্প আশ্রয়ন ব্যবস্থা করে দিলে আমরা পৌরসভার জায়গা ছেড়ে দিতে বাধ্য।
পৌরসভার ওই সম্পত্তিতে ৩৫টি পরিবারের প্রায় শতাধিক সদস্যের বাস। আকস্মিক উচ্ছেদ কর্মকাণ্ডে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা। উচ্ছেদ আশংকায় ভীত হয়ে কাজকর্মেও যাচ্ছেন না তারা।
সৈয়দপুর পৌরসভার মেয়র রাফিকা আকতার জাহানের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ওই জায়গায় আমরা ডাম্পিং স্টেশন তৈরি করবো। জায়গাটি ছেড়ে দিতে আমরা তাদের মৌখিকভাবে জানিয়েছিলাম।
উচ্ছেদের সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছিল না তবে থানার ওসিকে জানানো হয়েছে।
পৌরসভার পক্ষ থেকে ওইসব পরিবারকে আশ্রয়নের বিকল্প কোনো চিন্তা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা কেন তাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করব?
এ বিষয়ে সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামীম হুসাইনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আপনাদের মাধ্যমেই বিষয়টি অবগত হলাম। বিষয়টি নিয়ে পৌর মেয়রের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৮, ২০২১
এনটি