হাতিয়া (নোয়াখালী) থেকে ফিরে: প্রকাশ্যে বাবাকে গুলি করে নৃশংসভাবে হত্যা করে প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীরা। সেই খুনের বিচার চেয়ে মামলা করায় উপুর্যপুরি খুনের হুমকিতে আছে ছেলে।
সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাতে বাংলানিউজকে জীবন বলেন, হত্যার হুমকিতে শঙ্কিত হয়ে তার পরিবারের সবার জীবনের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে হাতিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন তিনি।
বাবা হত্যার ঘটনা উল্লেখ করে জীবন বলেন, গত ৭ মে স্থানীয় সোনাদিয়া ইউনিয়নের চরচেঙ্গা বাজারে সন্ত্রাসীরা তার বাবাকে গুলি করে হত্যা করে। এ সময় তাকেও কুপিয়ে গুরুতর আহত করে তারা। সেদিন সন্ত্রাসীরা তার বাবার মাছের আড়তে এসে সোনাদিয়া ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মেহেদী হাসানকে সমর্থন না করে মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী নুরুল ইসলামকে (মালোশিয়া নামে স্থানীদের কাছে পরিচিত) সমর্থন করার জন্য জোর করে। তাদের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় নুরুল নিজ হাতে তার বাবা যুবলীগ নেতা জোবায়ের হোসেনের বাম হাতের বাহুতে কুপিয়ে আহত করেন। এরপর সন্ত্রাসীরা এলোপাথাড়ি তাকে ও তার বাবা এবং চাচাকে কুপিয়ে আহত করে। পরে নুরুল ইসলামের নির্দেশে সন্ত্রাসীরা তার বাবাকে গুলি করে। পরে দ্রুত তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে বাবার মৃত্যু হয়।
জীবন আরও বলেন, তার বাবা স্থানীয় আওয়ামী লীগ সমর্থিত ৫ নম্বর চরচেঙ্গা ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য প্রার্থী ছিলেন। মোটরসাইকেল প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম (মালোশিয়া) ও তার শ্যালক বাতেনসহ ৫৫ জনে নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন তিনি। ওই মামলার আসামি নুরুল ইসলামের ছেলে মামলার অপর আসামি ফাহাদ হোসেন বাপ্পী তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন থেকে কল করে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং সোনাদিয়া ইউনিয়নের মধ্য যদি তাকে দেখে তাহলে বাবার মতো নৃসংশভাবে খুন করা হবে বলে হুমকি দেন বলে অভিযোগ করেন জীবন।
জামিন নিয়ে প্রকাশ্যে খুনিরা:
খুন হওয়া যুবলীগ নেতা জোবায়েরের ছেলে জীবন বলেন, তার বাবার হত্যাকারীরা হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে বুক ফুলিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরছে। আসামিরা প্রকাশ্যে এভাবে চলাফেরা করায় জীবন শঙ্কায় রয়েছেন বলে জানায় তিনি। পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করলেও মামলার অন্যতম আসামি নুরুল ইসলামসহ (মালোশিয়া) আরও বেশ কয়েকজনকে পুলিশ গ্রেফতারই করতে পারেনি। প্রশাসনের নাকের ডগায় ঘুরছে তারা।
এ বিষয়ে নুরুল ইসলাম (মালোশিয়া) বলেন, নিয়মতান্ত্রিকভাবে তিনি আদালতের কাছে জামিন চেয়েছেন। আদালত যৌক্তিক মনে করায় জামিন দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা:
নিহত যুবলীগ নেতার জোবায়েরের ছেলে জীবন বলেন, ‘আমার বাবা স্বাধীনতার স্বপক্ষের লোক ছিলেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে সমর্থন করার কারণে আমার বাবাকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে খুনিরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমি আমার বাবা হত্যার বিচার চাই। তিনি নিজেও স্বজন হারিয়েছেন। স্বজন হারানোর দুঃখ কী তিনি জানেন’।
জীবন বলেন, সন্ত্রীদের বিচার হলে তার বাবার আত্মা শান্তি পাবে। হাতিয়ায় দৃষ্টান্ত স্থাপন হবে। এখানে খুন করে অনেকেই পার পেয়ে যায়। তার বাবার হত্যার বিচারটি যেন দ্বীপ হাতিয়ার জন্য দৃষ্টান্তমূলক হয়।
অভিযুক্ত’র ভাষ্য:
এ ব্যাপারে কথা হয় মামলার ২য় আসামি অভিযুক্ত চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম (মালোশিয়া) এর সঙ্গে।
তিনি বলেন, এটি তার ও তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। এ হত্যার সঙ্গে কোনোভাবেই তিনি জড়িত না। জেলেদের চাল বিতরণ নিয়ে বাকবিতণ্ডার জের ধরে এ ঘটনা ঘটেছে। নিহত জোবায়েরের নেতৃত্বে কিছু সন্ত্রাসী জেলেদের কাছ থেকে চাল ছিনিয়ে নিতে গেলে স্থানীয় লোকজন একত্রিত হয়ে তাদের মারধর করে। এখানে তিনি বা তার লোকজন জড়িত ছিলেন না।
এ হত্যা মামলায় তার নাম কীভাবে এলো এমন প্রশ্নের উত্তরে নুরুল বলেন, ‘এলাকায় কিছু একটা হলেই আমার নাম চলে আসে, আমি ঢাকায় থাকলেও মামলায় নাম উঠে যায়। তার সঙ্গে আমার প্রতিদ্বন্দ্বিতার তো প্রশ্নই উঠে না তিনি ছিল ওয়ার্ড মেম্বার পদপার্থী আর আমি চেয়ারম্যান।
নুরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘জোবায়েরের আগের রেকর্ড ভালো ছিল না, সাধারণ মানুষই তাকে সেদিন মারধর করেছে।
যা বলছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা:
এ মামলাটি বর্তমানে তদন্ত করছে নোয়াখালীর ডিবি পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নোয়াখালী ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, এ মামলায় মোট ১৬ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মামলার এক নম্বর আসামি আবদুল বাতেনসহ অন্যান্যরা পলাতক রয়েছেন। পলাতক আসামিদের খুঁজছে পুলিশ। মামলার দুই নম্বর আসামি নুরুল ইসলামসহ (মালোশিয়া) কয়েকজন হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিনে আছেন। মামলা তদন্তাধীন রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২১
এসএইচডি/আরআইএস