সিলেট: পড়ালেখায় এক বছর বিরতি দিয়ে আরিফুল ইসলাম রাহাতের ক্লাসের বন্ধু হয়েছিল সামসুদ্দোহা সাদি। তবে একই ক্লাসে থাকলেও নিজেকে সিনিয়র দাবি করতেন সাদি।
বৃহস্পতিবার (২৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সিলেট মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে এসব তথ্য দেয় সামসুদ্দোহা সাদি।
আদালতের বিচারক মো. সুমন ভূইয়া এদিন বিকাল ৫টা থেকে ২ ঘণ্টাব্যাপী তার বক্তব্য রেকর্ড করেন। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানোর জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেন।
এরআগে বিকেলে তাকে আদালতে হাজির করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি সিলেট মেট্টোর উপ পরিদর্শক (এসআই) রিপন দেব।
সামসুদ্দোহা সাদির জবানবন্দির বরাত দিয়ে আদালত সূত্র জানায়, ২১ অক্টোবর তানভীর মোটরসাইকেল দিয়ে সাদিকে বাড়ি থেকে নিয়ে আসে। কলেজে আসার পর সাদি ও তার অপর দুই বন্ধু তানভীর এবং ওহিদুর রহমান সানি মিলে রাহাতকে সমুচিত শিক্ষা দিতে পরিকল্পনা করে। এরই ধারাবাহিকতায় ক্যাম্পাস থেকে মোটরসাইকেলে বেরিয়ে যাওয়ার সময় কলেজ ফটকে রাহাতের উরুতে ছুরি দিয়ে দুইবার আঘাত করে। আর এ কাজে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি ছিল ওলিদুর রহমান সানির।
সামসুদ্দোহা সাদি আদালতকে জানায়, ভয় দেখাতে গিয়ে সাদিকে ছুরিকাঘাত করা হয়। এরপর সে সানির সঙ্গে মোটরসাইকেলে জালালপুর চলে যায়। এর আগে রক্তমাখা ছোরাটি সিলাম ইউনিয়নের হাজিপুরে একটি জমিতে ফেলে রেখে যায় সাদি। সে তখনও জানতো না, রাহাত মারা গেছে। জালালপুরে যাওয়ার পর এক সাংবাদিক সাদিকে মোবাইল ফোনে কল দিয়ে বলেন, ‘তুমি সাদি নি-বা’ রাহাত মার্ডারকারী’।
ওই সাংবাদিকের ফোন পাওয়ার পর লাইন কেটে দিয়ে বিকাশে থাকা এক হাজার টাকা তুলে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। এরপর মিরপুর ১২তে তার এক নানা আতাউর রহমানের বাসায় অবস্থান করে। সে নানাকে সব কিছু খুলে বলে। তখন ওই বাসার লোকজন কুষ্টিয়া রওয়ানা হওয়ার পথে। ঘটনাটি শুনে তাকেও সঙ্গে করে কুষ্টিয়া নেওয়া হয়। সেখান থেকে সিআইডি ২৬ অক্টোবর গ্রেফতার করে।
সাদি আদালতকে আরও জানায়, গ্রেফতারের পর সিলেটে এনে তার দেখানো মতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছোরাটি উদ্ধার করে সিআইডি। মূলত, সিনিয়র না মানায় তাকে হত্যা করা হয়। এসময় আদালত পাড়ায় লোকজন সাদির ফাঁসি দাবি করে বিক্ষোভ করেন।
২১ অক্টোবর বাড়ি থেকে বেরিয়ে দুপুর চাচাতো ভাই আশরাফুল ইসলাম রাফিকে সঙ্গে নিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে যান রাহাত। সেখানে মোবাইল ফোনে বন্ধুদের না পেয়ে সাড়ে ১২টার দিকে কোটিং সেন্টারে যাওয়ার জন্য রওয়ানা দেন।
দক্ষিণ সুরমা সরকারি কলেজ ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে আসার সময় প্রধান ফটকের ভেতরে থাকা অবস্থায় আরেকটি মোটরসাইকেলে ক্যাম্পাস ত্যাগকালে অতর্কিতভাবে আরিফুল ইসলাম রাহাতকে উরুতে ছুরিকাঘাত করেন ছাত্রলীগের কর্মী সামসুদ্দোহা সাদি ও তার সহযোগীরা। তাকে উদ্ধার করে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টাকালে পথিমধ্যে তার মৃত্যু হয়। নিহত রাহাতও ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন।
ঘটনার একদিন পর শুক্রবার (২৩ অক্টোবর) রাতে রাহাতের চাচা শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে দক্ষিণ সুরমা থানায় সাদিসহ ৩ জনের নামোল্লেখ অজ্ঞাত ৬/৭ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় আসামি হিসেবে সিলাম পশ্চিমপাড়া গ্রামের জামাল মিয়ার ছেলে তানভির এবং আহমদপুর গ্রামের মৃত গৌছ মিয়ার ছেলে সানির নাম উল্লেখ করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০২১
এনইউ/এনএইচআর