মাদারীপুর: মাদকসেবনের টাকার জন্য ভ্যানচালক বন্ধু পারভেজকে (২৪) হত্যা করে তার অপর দুই বন্ধু হৃদয় (২৩) ও আজিজুল (২৪)। হত্যার পর ভ্যান বিক্রি করে মাদক সেবন ও জুয়া খেলে তারা।
বৃহস্পতিবার (২৮ অক্টোবর) হত্যাকাণ্ডে জড়িত দুইজনকে আটক করেছে পুলিশ। গত ১৪ অক্টোবর ভোরে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার নাসিরাবাদ ইউনিয়নের গজারিয়া এলাকার একটি ধান খেতে পাওয়া পারভেজের মরদেহ উদ্ধারের পর গত টানা ১৪ দিন অনুসন্ধান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে দুই বন্ধুর সম্পৃক্ততা পায় পুলিশ। পরে তাদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন তারা।
এ ঘটনায় নিহতের বাবা বাবুল ফকির গত ১৫ অক্টোবর অজ্ঞাতনামা উল্লেখ করে ভাঙ্গা থানায় মামলা দায়ের করেন।
পুলিশ জানা যায়, ১৩ অক্টোবর সকালে শিবচরের বন্দরখোলার ইউনিয়নের রহমতউল্লাহ হাওলাদারকান্দি গ্রামে শ্বশুর বাড়ি থেকে প্রতিদিনের মতো ভ্যান নিয়ে বের হয় একই উপজেলার চরজানাজাত ইউনিয়নের ফকির রনাই মুন্সিকান্দি গ্রামের মো. বাবুল ফকিরের ছেলে পারভেজ ফকির (২৪)। রাতে পারভেজ বাড়িতে না আসায় পরিবারের সদস্যরা অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান পাননি। পরদিন ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার নাসিরাবাদ ইউনিয়নের গজারিয়া এলাকার আড়িয়াল খাঁ নদের তীরবর্তী একটি ধান ক্ষেত থেকে পারভেজের মরদেহ উদ্ধার করে ভাঙ্গা থানা পুলিশ। প্রথমে মরদেহের পরিচয় পাওয়া না গেলেও পরে মরদেহটি শিবচরের পারভেজের বলে শনাক্ত করে তার পরিবার। এরপর ঘটনা উদঘাটনে তদন্তে নামে পুলিশ। টানা ১৪ দিন তদন্তে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারসহ বিভিন্নভাবে পুলিশ নিশ্চিত হয় এ হত্যাকাণ্ডে নিহতের বন্ধুরাই জড়িত।
বৃহস্পতিবার (২৮ অক্টোবর) ভাঙ্গা থানার উপ-পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে শিবচরের সন্ন্যাসীরচর থেকে গ্রেফতার করা হয় হৃদয় মাদবর ও আজিজুল মুন্সী নামের ২ যুবক। গ্রেফতারকৃত ২ জনই হত্যাকাণ্ডের শিকার পারভেজ ফকিরের বন্ধু। তাদের গ্রেফতারের পর পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে বের হয়ে আসে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি। হৃদয় ও আজিজুল মাদকসেবী ও মাদক ব্যবসায়ী। মূলত মাদক সেবনের টাকার জন্যই পারভেজকে হত্যা করে তারা।
পুলিশ জানায়, ১৩ অক্টোবর গান শোনার কথা বলে তারা পারভেজকে ভাঙ্গা নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে কোল্ড ড্রিংকসের সাথে নেশা দ্রব্য মিশিয়ে খাওয়ানো হয়। পরে পারভেজকে ভাঙ্গার নাসিরাবাদ ইউনিয়নের গজারিয়া এলাকার আড়িয়াল খাঁ নদের তীরবর্তী ধান ক্ষেতে নিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে হত্যাকারীরা পারভেজের ভ্যানটি স্থানীয় একটি বাজারে ১০ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি করে। ওই রাতেই তারা ওই টাকা জুয়া খেলে ও মাদক সেবন করে শেষ করে।
এদিকে পরদিন ১৪ অক্টোবর পুলিশ পারভেজের মরদেহ উদ্ধার করে। গ্রেফতার হৃদয় মাদবর শিবচরের সন্নাসীরচর ইউনিয়নের রাজারচর শরীফকান্দি গ্রামের সালাম মাদবরের ছেলে ও আজিজুল মুন্সি একই ইউনিয়নের রাজারচর গোবিন্দ মাদবরকান্দি গ্রামের নুরু মুন্সির ছেলে।
নিহত পারভেজের স্ত্রী রোজিনা আক্তার বলেন, ১৩ তারিখ ভ্যান নিয়ে আমার স্বামী বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। ১৪ তারিখ ভাঙ্গা থেকে পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করেছে। আমার স্বামীকে যারা হত্যা করেছে আমি তাদের কঠোর বিচার চাই।
ভাঙ্গা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবুল কালাম আজাদ বলেন, ধানক্ষেতে মরদেহটি উদ্ধার করার পর আমরা তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় তদন্ত শুরু করি। প্রথমেই খোঁয়া যাওয়া ভ্যানটি উদ্ধার করি। পরে হত্যাকারী দুইজনকেই গ্রেফতার করতে সক্ষম হই। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যার দায় স্বীকার করেছে। মূলত নেশার টাকার জন্য ভ্যান বিক্রি করতে তারা পারভেজকে হত্যা করেছে বলে জানিয়েছে। ভ্যান বিক্রির ওই টাকা এক রাতেই তারা নেশা করে ও জুয়া খেলে উড়িয়ে ফেলেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০২১
এনটি