ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মহানন্দা তীরে ভাঙন, আতঙ্কে ৩ গ্রামের মানুষ

এ কে এস রোকন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩, ২০২১
মহানন্দা তীরে ভাঙন, আতঙ্কে ৩ গ্রামের মানুষ নদীভাঙন। ছবি: বাংলানিউজ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার পালপাড়া ও পার্শ্ববর্তী গোমস্তাপুর উপজেলার ইসলামপুরের নন্দলালপুর এবং বাঙ্গাবাড়ীর বজ্রনাথপুর গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলা মহানন্দা নদীতে হঠাৎ ভাঙন শুরু হয়েছে।

স্রোতের তীব্রতা না থাকলেও ধসের কারণে আতঙ্কে রয়েছে ৩টি গ্রামের ৫ শতাধিক পরিবার।

বিশেষ করে বুধবার রাতে নদীর ডান তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের একটি অংশে ধস নামায় আতঙ্ক আরও বেড়ে গেছে। তবে ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।

স্থানীয়রা জানায় নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের কারণেই স্রোতহীন অল্প পানির এ মহানন্দা নদীতে ভাঙন শুরু হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, স্বপন পাল ও রতন পাল ২ ভাই। একজন এনজিও থেকে পাতিল বানানোর জন্য একটি যন্ত্র কিনতে ও ব্যবসার প্রসার বাড়াতে লোন নিয়েছেন। অন্য ভাই পেয়েছেন সমাজসেবা থেকে আর্থিক সহায়তা। ২ ভাইয়ের সংসারে ১০ জন সদস্য নিয়ে ভালই চলছিল তাদের সংসার। কিন্তু বুধবার রাতে হঠাৎ তাদের পাশের বাড়ির একটি অংশ নদী গর্ভে ধসে যাওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে তারা।

স্বপন পাল জানান, একদিকে কিস্তি অন্যদিকে নদী তীরে ভূমি ধস আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের।

এদিকে সুন্দরী হলদার জানান, তার বাড়ির একটি ঘর ধসে যাওয়ায় ঘরের জিনিসপত্র নিয়ে খোলা আকাশের নিচে ফেলে রেখেছেন। আতঙ্কে বাড়ির ভেতরে ঘুমাতে না পেরে পাশের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।

শুধু তাই নয় মহানন্দা নদীর ডান তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের একটি অংশ ধসে যাওয়ায় পুরো পালপাড়া এখন আতঙ্কে। সেইসঙ্গে পার্শ্ববর্তী ইসলামপুরের নন্দলালপুর ও বাঙ্গাবাড়ির বজ্রনাথপুর এলাকার ৩শ পরিবারও রয়েছেন একই আতঙ্কে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গ্রাম্য ডাক্তার জানান, বালু উত্তোলনকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় এলাকাবাসী নিরুপায়। বছরখানেক আগে শিবগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনকে বলা হলে কিছুদিন বন্ধ থাকার পর এবার গোমস্তাপুর অংশ বালু উত্তোলন শুরু হওয়ায় এ ভাঙন।

এ ব্যাপারে চকর্কীত্তি ইউনিয়ন পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হাসান আনু মিঞা জানান, তিনি খবর পেয়ে বুধবার রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বিষয়টি জানান। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিক ধস ঠেকাতে ১২শ জিও ব্যাগ ফেলে ধস ঠেকানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তবে তা খুব একটা ফলপ্রসু হবে না।

এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. ময়েজ উদ্দিন জানান, মহানন্দা নদীর তীর রক্ষায় ও স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধে ২২শ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে ভাঙনকবলিত এলাকার ৩৬ কিলোমিটার বাধায় করা হবে। সেইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানের অনুরোধে জরুরি ভিত্তিতে পালপাড়া অংশে ১২শ জিও ব্যাগ ফেলার মাধ্যমে ভাঙন রোধ করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ডা. সামিল উদ্দিন আহম্মেদ শিমুল জানান, বালু উত্তোলন বন্ধের বিষয়টি তিনি শুনেছেন। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চেয়ারম্যানের প্রচেষ্টায় একদিনের মাথায় ভাঙনরোধে ব্যবস্থা বুধবার (১ ডিসেম্বর) রাতে পালপাড়ায় মহানন্দা নদীর ডান তীরে আকশ্মিক ভূমিধস শুরু হলে স্থানীয়দের খবরে চকর্কীত্তি ইউনিয়ন পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হাসান আনু মিঞা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। রাতেই ঘটনাস্থল থেকে তিনি ভিডিও কলে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. ময়েজ উদ্দিনকে বিষয়টি জানালে পরদিন বৃহস্পতিবার তিনি সরেজমিন ভাঙন পরিদর্শন করেন।  

উপবিভাগীয় প্রকৌশলী ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালে শুক্রবার দুপুরে তাৎক্ষণিকভাবে পালপাড়াকে রক্ষার জন্য ১২শ জিও ব্যাগ ভাঙনকবলিত অংশে স্থাপনের মাধ্যমে সাময়িকভাবে ভাঙন বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ সময় চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১(শিবগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ডা. সামিল উদ্দিন আহম্মেদ শিমুল কাজটির উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সারওয়ার জাহান সুজনসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।