বরিশাল: বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলায় সম্পত্তির লোভে আট বছর ধরে জাহাঙ্গীর হোসেন তোতাকে শিকলবন্দি করে রাখার অভিযোগ উঠেছে তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে। এদিকে তার পরিবারের দাবি, জাহাঙ্গীর হোসেন তোতা মানসিক ভারসাম্যহীন, এজন্যই তাকে শিকলবন্দি করে রাখা হয়েছে।
তোতার বয়স ৫৫ বছর। তিনি উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের রাংতা গ্রামের আলতাব হোসেনের বড় ছেলে। আট বছর ধরে শিকলবন্দি হয়ে কাটছে তোতার দিন-রাত। যে বয়সে তার চাকরি করার কথা, সংসারের হাল ধরার কথা সেখানে তার পায়ে ঝুলছে লোহার দুইটি তালা! তার মানসিক প্রতিবন্ধকতার কারণে এ অবস্থা।
সুস্থ হওয়া সত্ত্বেও তোতাকে শিকলবন্দি করে রাখা হয়েছে। সম্পত্তির লোভে দেওয়া হচ্ছে না কোন চিকিৎসা। বন্দি জীবন থেকে মুক্ত এবং সু-চিকিৎসার দাবিও জানিয়েছে এলাকাবাসী।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, তোতার ডান পায়ে লোহার শিকল পরিয়ে ঘরের খুঁটির সঙ্গে তালা দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। এর আগে বাম পায়ে শিকল ছিল। সেখানে ক্ষতের সৃষ্টি হলে ডান পায়ে শিকল দেওয়া হয়। এভাবে পা বদলিয়ে দিনের পর দিন তাকে আটকে রাখা হয়। স্বাভাবিকভাবে দেখলে সুস্থই মনে হবে তোতাকে।
তার বাড়িতে স্থানীয় লোকজন যাওয়ার পর তোতা তাদের পা জড়িয়ে ধরে বলেন, ‘ভাই আমি পাগল না। আমাকে বিনা কারণে শিকলে বন্দি করে রাখা হয়েছে’। শিকলবন্দি জীবন থেকে মুক্তি ও সু-চিকিৎসার দাবিও জানান তোতা।
স্থানীয় কামরুজ্জামান সবুজ বাংলানিউজকে বলেন, ছোট একটি টিনের চালার ধানের গোলার ঘরে থাকেন তোতা। যেখানে নেই বিদ্যুৎ, কোন দিন খাবার খায় কোন দিন না খেয়ে থাকতে হয় তাকে। শিকল পায়ে ৮ বছর ধরে বন্দি জীবন পার করছেন তোতা।
স্থানীয় ফারুক হাওলাদার বলেন, তিন বোন এবং দুই ভাইয়ের মধ্যে বড় তোতা। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ঢাকা তিতুমীর কলেজে পড়াশোনা করার সময় মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন তিনি। পরে পরিবার থেকে তাকে বিয়ে দেওয়া হয়। মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ার কারণে তার স্ত্রী তোতাকে ১০ বছর আগে ছেড়ে চলে যান।
স্থানীয় দুলাল মাতুব্বর বলেন, রাংতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ছোট ভাই মানিক মিয়া শিক্ষক হলেও আট বছর থেকে বড় ভাইকে দিচ্ছে না চিকিৎসা। নিজে থাকার জন্য পাকা ভবন বানালেও বড় ভাইকে রাখা হচ্ছে ধানের গোলার ঘরে। তোতা সুস্থ থাকার পরেও রাখা হচ্ছে শিকলবন্দী। সই করে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে তার সম্পত্তি।
রাংতা ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন বলেন, ছোট ভাই রাংতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মানি মিয়ার অবহেলার কারণে ৮ বছর ধরে তোতা শিকলবন্দি । শুধু সম্পত্তি নিজের নামে করতে বড় ভাইকে সু-চিকিৎসা না করিয়ে শিকলবন্দি করেছেন তার ছোট ভাই।
তোতার মা হাওয়া বেগম বাংলানিউজকে বলেন, ২৮ বছর ধরে মানসিকভাবে অসুস্থ পড়ে তোতা। ৮ বছর আগে বাড়ির পাশের একজনের স্ত্রীকে মারধর করে তোতা। এরপর থেকেই তাকে শিকলবন্দি করে রাখা হয়েছে।
তোতার ভাই মানিক মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, বড় ভাই মানসিকভাবে অসুস্থ। এজন্যই তাকে শিকলবন্দি করে রাখা হয়েছে। আমি আমার ভাইয়ের চিকিৎসা করতে গিয়ে আর্থিক সংকটে পরেছি। তাকে এখন ঘুমের ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। সুযোগ পেলে তাকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করবো।
সম্পত্তি লিখে নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তার সই নিয়েছি জমির কাগজপত্র ঠিক করার জন্য।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সুশান্ত বালা বাংলানিউজকে বলেন, শিকলবন্দি জীবন থেকে মুক্তি করা হবে এবং তোতাকে সু-চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবুল হাশেম বাংলানিউজকে বলেন, সরেজমিন তদন্ত সাপেক্ষে সমাজসেবা অফিসের মাধ্যমে শিকলবন্দি থেকে মুক্ত করে চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯,২০২১
এমএস/এএটি