সিলেট: গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্যই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
রোববার (২ জানুয়ারি) দুপুরে নগরের কুমার পাড়ায় এনজিও সংস্থা জমজম’র প্রধান কার্যালয় উদ্বোধন শেষে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে দেওয়া চিঠির বিষয়বস্তু সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, আমাদের এখানে গণতন্ত্র চর্চা আজকের না। যখন আমেরিকা আবিষ্কৃত হয়নি, সেই ছয় শতকেও এই অঞ্চলে গণতন্ত্র ছিল, যদুকে জনগণ ম্যান্ডেট দিয়ে নির্বাচিত করেছিল। ফলে গণতন্ত্রের অভিজ্ঞতা আমাদের অনেক পুরোনো। আর আমাদের দেশের জন্মই তো গণতন্ত্রের জন্য, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতেও এমনটি লিখেছি।
তিনি বলেন, র্যাবের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের যে অভিযোগ তা অমূলক। বাংলাদেশে ১০ বছরে ৬০০ জন নিখোঁজের অভিযোগ তোলা হয়েছে। অথচ আমেরিকাতে প্রতি বছর লক্ষাধিক মানুষ নিখোঁজ হচ্ছে। পুলিশি কারণে হাজারো মানুষ মারা যাচ্ছে। এসব নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলছে না। তাদেরগুলোকে বলা হয় লাইন অব ডিউটি। অথচ আমাদের এখানকার সামান্য কিছু ঘটনা নিয়ে অনেক কথা হয়। বলা হয় ‘এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং’, এসব হাসির খোরাক।
র্যাবের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনকে চিঠি পাঠিয়ে আনুষ্ঠানিক জবাব দিয়েছেন। গত ৩১ ডিসেম্বর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন স্বাক্ষরিত এই চিঠি দূতাবাসের মাধ্যমে প্রেরণ করা হয়।
ড. মোমেন বলেন, ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে এর আগে ফোনালাপ হয়েছে। তখনো যা বলেছি, সেসব কথা চিঠিতেও লিখেছি। আমাদের দেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে তার সরকারের উদ্বেগের বিষয়টি জানিয়েছিলেন।
তিনি আরও বলেন, আমার মনে হয় তাদের নিষেধাজ্ঞা সঠিক হয়নি। এটি পুনর্বিবেচনার সুযোগ আছে। চিঠিতে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদকসহ আন্তঃরাষ্ট্রীয় অপরাধ দমনে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগ ও কর্মকাণ্ডের বিস্তারিত তুলে ধরেছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশের ৫০ বছরের সম্পর্ক। সব কিছুর আলোকে এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য লিখিতভাবে অনুরোধ জানিয়েছি। তবে চিঠির কোনো জবাব এখনো পাওয়া যায়নি।
এর কারণ হিসেবে ড. মোমেন বলেন, তারা তো এখন ক্রিসমাসের ছুটিতে। হয়তো চিঠি এখনো তার হারে পৌঁছায়নি।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সিনিয়র সচিব ও সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এম আই চৌধুরী, অ্যারকেপিটা’র চিফ ফাইন্যান্স অফিসার আব্দুল মুঈজ চৌধুরী, জমজম টাওয়ারের জন্য ভূমিদাতা লন্ডন প্রবাসী লুৎফুন্নেছা রাজ্জাক, ভূমিদাতা যুক্তরাজ্যের কম্যুনিটি নেতা ইউসুফ সেলিম, জমজমের পৃষ্টপোষক নূরুন নাহার চৌধুরী, জমজমের পরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান চৌধুরী।
আরও উপস্থিত ছিলেন জমজমের পরিচালক রোটারিয়ান মোস্তাফা কামাল, ডা. এম এ সালাম, জারনিগার চৌধুরী, জাহেদা ইউসুফ প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, গত ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাবের সাবেক ও বর্তমান ৭ জন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে বাংলাদেশ সরকার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে এটাকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বড় ধরনের কূটনৈতিক চাপ হিসেবেও দেখা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার চেয়ে ব্লিংকেনকে মোমেনের চিঠি
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২, ২০২১
এনইউ/জেএইচটি