ডিষ্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
নীলফামারী: বিক্রি করা বাড়ি ক্রেতাকে দখল বুঝিয়ে না দিয়ে উল্টো প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন এক বিক্রেতা। ফলে ৪৬ লাখ টাকায় কেনা বাড়িতে ওঠা তো দূরের কথা এলাকাতেই যেতে পারছেন না ক্রেতা।
এতে আর্থিক ক্ষতিসহ মানসিক ও শারীরিক বিপর্যয়ে পড়েছেন তিনি। জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় চরম বিপাকে পড়ে আইনি সহায়তা চেয়েও না পেয়ে ঝুঁকি নিয়ে দুশ্চিন্তার মধ্যে দিনাতিপাত করছেন।
মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারি) দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে এমনই অভিযোগ করেছেন নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের মুন্সিপাড়া খানকাহ রোড এলাকার বাসিন্দা ও নীলফামারী সিভিল সার্জন অফিসের কর্মচারী মো. আব্দুল কাদের।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন- তার স্ত্রী সৈয়দপুর ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মোছা. সেলিনা বেগম মায়া, প্রতিবেশী রফিকুল ইসলাম ও জয়নাল আবেদীন।
আব্দুল কাদের বলেন, মুন্সিপাড়া ঈদগাহ মাঠ সংলগ্ন জমশেদ আলীর মেয়ে মোছা. জুঁই বেগমের (৩৫) কাছ থেকে তার বাবার লিখে দেওয়া সম্পত্তি ৫ শতক জমি বাড়িসহ ২০১৯ সালের ১ আগস্ট ৪৬ লাখ টাকায় ক্রয় করি। এরপর ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর নিজের নামের খাজনা খারিজ সম্পাদন করি। যার কেস নং ৬৪০।
আব্দুল কাদেরের স্ত্রী সেলিনা বেগম বলেন, ইচ্ছে ছিল হাতে একটু টাকা পয়সা হলে বাড়িটি সংষ্কার করে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করবো। এতদিন বাড়ির উঠানে শাক-সবজি লাগিয়ে খেয়েছি এবং বাড়িতে মাঝে মাঝে গিয়ে দেখাশোনাও করেছি। ইতোমধ্যে করোনার প্রবল প্রকোপ শুরু হলে লকডাউনের মধ্যে একদিন গিয়ে দেখি বাড়ির দরজায় আমাদের তালার বদলে অন্য তালা লাগানো।
জিজ্ঞাসায় জানতে পারি বাড়ি বিক্রেতা জুঁই তালা লাগিয়েছেন। কারণ জানতে চাইলে জুঁই বলেন আপনি এখানে কেন? আমার কেনা বাড়িতে আমি আসবো না তো কে আসবে? এতে সে বলে এটা আমার বাড়ি। সাহস ও শক্তি তাকলে তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে দেখান। এমতাবস্থায় আমি তার ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ও পায়ে পারা দিয়ে ঝগড়া বাঁধানোর মনোভাব আঁচ করে সেই সময় সেখান থেকে চলে আসি।
পরে গত ১৫ নভেম্বর সকালে জমির দখল বুঝে নিয়ে বাড়ির পশ্চিম পাশের সীমানা প্রাচীর তৈরির জন্য যাওয়ার প্রাক্কালে জুঁই বেগম ও তার বাবা জমশেদ আলী জমিতে প্রবেশে বাধা দিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। এসময় জুঁই জানায় বাড়ির দখল পেতে চাইলে আরও অতিরিক্ত ৫ লাখ টাকা দিতে হবে। নয়তো কোনোভাবেই বাড়ি পাবেন না। আর এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে লোকজন দিয়ে মারপিট করা, নারী নির্যাতন মামলা দিয়ে হয়রানি করবো। আর আইন আদালত করলে খুন করে ফেলবো।
তাদের এহেন কর্মকাণ্ডে আমরা নিরীহ ও সাদাসিধে দম্পতি ভীষণ ভোগান্তিতে পড়েছি। একদিকে আমরা স্বামী-স্ত্রী অসুস্থ। আমার কিডনি অপারেশন করা খুবই জরুরি। আমার স্বামীর তিনবার বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় অপারেশন করা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত টাকা দেওয়া অসম্ভব। বিধায় বিষয়টি স্থানীয় ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কাজী নজরুল ইসলাম রয়েল, উপজেলা যুবলীগ আহ্বায়ক দিলনেওয়াজ খানসহ এলাকার গণ্যমান্য লোকজনের মধ্যস্থতায় সমাধানের জন্য সালিশ বৈঠকে বসি। কিন্তু তাতে জুঁই ও জমশেদ উপস্থিত হলেও কারো কথা না শুনে আকস্মিক উঠে চলে যান।
এরপর থেকে তারা নানাভাবে হুমকি দিয়েই যাচ্ছে। ফলে বাধ্য হয়ে ৫ জানুয়ারি সৈয়দপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। কিন্তু পুলিশ অভিযোগটি নথিভুক্তও করেনি এবং বিবাদীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কোনো ব্যবস্থাও নেয়নি। নিরুপায় হয়ে বিষয়টি মিডিয়ায় তুলে ধরতে সংবাদকর্মীদের শরণাপন্ন হয়েছি। আপনাদের মাধ্যমে এধরনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ সচেতন মানুষকে অবগত করে সমস্যার সমাধানে সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০২২
আরএ