ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা খারিজ করে দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০২২
মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা খারিজ করে দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার

ঢাকা: ২০২১ সালে নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন এবং জোরপূর্বক গুমের প্রমাণ নিয়ে জাতিসংঘ, দাতা এবং বেসরকারি সংস্থার উত্থাপিত উদ্বেগগুলো খারিজ করে দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।

বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) ‘ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট ২০২২’ এ কথা বলেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।

এইচআরডব্লিউ’র এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেছেন, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ কোভিড-১৯ মহামারিকে ব্যবহার করে একটি হতাশাজনক বার্তা দিয়েছে যে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমালোচনার শাস্তি দেওয়া হবে। তবুও সাংবাদিক, চিকিৎসাকর্মী এবং অ্যাক্টিভিস্টরা স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে সেসব বাধাগুলোকে তুলে ধরেছেন, বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া অনেক মানুষ এই প্রতিবন্ধকতাগুলোর সম্মুখীন হয়েছেন।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তার ৩২তম সংস্করণের ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট ২০২২-এর ৭৫২ পৃষ্ঠায় প্রায় ১০০টি দেশের মানবাধিকার অনুশীলন পর্যালোচনা করেছে। সংস্থার নির্বাহী পরিচালক কেনেথ রথ প্রচলিত অভিজ্ঞতাকে চ্যালেঞ্জ করে বলেছেন, স্বেচ্ছাচারী কর্তৃত্ব মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। দেশে দেশে, সম্প্রতি বিপুলসংখ্যক মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে, এমনকি গ্রেফতার বা গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও, যা দেখায় যে গণতন্ত্রের আহ্বান এখনও শক্তিশালী রয়েছে। এদিকে, স্বৈরাচারীরা তাদের পক্ষে নির্বাচনকে প্রভাবিত করা আরও কঠিন বলে দেখতে পাচ্ছে।

কেনেথ রথ বলেন, গণতান্ত্রিক নেতৃত্বদের অবশ্যই জাতীয় ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য এবং গণতন্ত্র যেন তার প্রতিশ্রুত লভ্যাংশ প্রদান করে, তা নিশ্চিত করার জন্য আরও ভালো কাজ করতে হবে।

গত বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে বন্দি অবস্থায় লেখক মুশতাক আহমেদের মারা যাওয়া প্রসঙ্গে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মুশতাক আহমেদ, যিনি একজন লেখক। নয় মাস বিচার পূর্ববর্তী আটকাবস্থার পর কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন। ফেসবুকে কোভিড-১৯ নিয়ে সরকারের প্রতিক্রিয়ার সমালোচনা করায় সেই সময় তাকে নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মে মাসে, কোভিড-১৯ মহামারির প্রতিক্রিয়ায় অসদাচরণের বিষয়ে রিপোর্ট করার পরে কর্তৃপক্ষ সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে গ্রেফতার করে। কর্তৃপক্ষ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে রাজনৈতিক সমালোচকদের নির্বিচারে গ্রেফতার ও বিচার করেছে, এমনকি সরকারের সমালোচনাকারী প্রবাসী সাংবাদিকদের পরিবারের সদস্যদেরও টার্গেট করেছে।

অক্টোবরে পলি মাটির স্তরসমষ্টির একটি প্রত্যন্ত দ্বীপ যেখানে বিপজ্জনক আবহাওয়া প্রবণ পরিস্থিতি রয়েছে এবং পর্যাপ্ত সেবাসমূহের অভাব রয়েছে সেই ভাসানচর দ্বীপে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য কার্যক্রম শুরু করার উদ্দেশ্যে, সরকার জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে দ্বীপের বসবাসযোগ্যতা, নিরাপত্তা, স্থায়িত্ব এবং সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তার মূল্যায়নের জন্য অপেক্ষা করার প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করে সেখানে প্রায় ২০,০০০ শরণার্থীকে স্থানান্তরিত করে ফেলেছে। মিয়ানমারে ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থান রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনাকে আরও সংকীর্ণ করে তুলেছে।

সেপ্টেম্বরে, কক্সবাজারের কুতুপালং ক্যাম্পে অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা মহিব উল্লাহ নামে এক রোহিঙ্গা অধিকার কর্মীকে গুলি করে হত্যা করে। অক্টোবরে, ক্যাম্পের একটি ইসলামিক শিক্ষালয়ে হামলায় সাত শরণার্থীকে হত্যা করা হয়েছিল, যার জন্য বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছিল। রোহিঙ্গা কর্মীরা জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির কারণে একদিকে ঝুঁকির মধ্যে থাকে, অপরদিকে সহিংসতার জন্য অভিযুক্ত দায়ীদের বিরুদ্ধে ডাকা ক্র্যাকডাউনে নিরাপত্তা বাহিনী নির্বিচারে শরণার্থীদের আটক করতে থাকে।

অক্টোবরে, পুলিশ যখন বিক্ষুব্ধ জনতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে গুলি চালায়, তখন চারজন ব্যক্তি নিহত হয়েছিল বলে জানা গেছে এবং বাংলাদেশের হিন্দু সংখ্যালঘুদের লক্ষ্য করে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার মধ্যে অন্তত আরও তিনজন মারা গেছে। শতাধিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

বনানীর রেইনট্রি হোটেলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী ধর্ষণ মামলায় পাঁচ আসামিকে খালাস দেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর বিচারক মোছা. কামরুন্নাহার।

এ প্রসঙ্গে এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকায় ২০১৭ সালে দুই নারীকে গণধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত পাঁচজন পুরুষকে খালাস দেওয়ার পরে বিক্ষোভ শুরু হয়। বিচারক অপরাধের প্রতিবেদন দাখিল করতে এক মাস সময় নেওয়ার জন্য ভুক্তভোগীদের দোষারোপ করেছেন, তাদের চরিত্রের অবমাননা করেছেন এবং বিশেষভাবে সুপারিশ করেছেন যে, পুলিশের উচিত ঘটনার ৭২ ঘণ্টারও বেশি সময় পরে আসা কোনও ধর্ষণ মামলা দায়ের করতে প্রত্যাখ্যান করা।

নারী ও মেয়েদের বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতার উদ্বেগজনক বৃদ্ধি মোকাবিলার জন্য সরকারকে আহ্বান জানিয়ে কর্মীরা সারা দেশে বিক্ষোভ করার এক বছরেরও বেশি সময় পরে এই রায় আসে। কর্তৃপক্ষ এখনও একটি যৌন হয়রানি বিল পাস করতে পারেনি, এছাড়া সাক্ষীর সুরক্ষা দিতে বা বৈষম্যমূলক আইন সংশোধন করতে পারেনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০২২
টিআর/এমজেএফ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।