ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

গুচ্ছগ্রামের টাকা আত্মসাৎ, ইউএনওর শাস্তি পদাবনতি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০২২
গুচ্ছগ্রামের টাকা আত্মসাৎ, ইউএনওর শাস্তি পদাবনতি

ঢাকা: গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করায় গাইবান্ধা সদরের সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)-কে গুরুদণ্ড দিয়ে দুই বছরের জন্য এক ধাপ পদাবনতি ও আত্মসাৎ করা টাকা নিজের বেতন থেকে পরিশোধের শাস্তি দিয়েছে সরকার।

বর্তমানে স্থানীয় সরকার বিভাগে পদায়নের জন্য ন্যস্তকৃত মোহাম্মদ শফিকুর রহমানের বিরুদ্ধে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এই শাস্তি দিয়ে আদেশ জারি করেছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম স্বাক্ষরিত এক আদেশে তার এই শাস্তি এবং টাকা পরিশোধের নির্দেশ দেওয়া হয়।  

আদেশে বলা হয়, মোহাম্মদ শফিকুর রহমান গাইবান্ধা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসাবে কর্মরত থাকাকালে গুচ্ছগ্রাম-২য় পর্যায় (সিডিআরপি) প্রকল্পের আওতায় গাইবান্ধা সদরে বরাদ্দকৃত ৫ কোটি ৫৪ লাখ ৯২ হাজার ৫০০ টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্প কমিটি গঠন না করা, একক দায়িত্বে কাজ করা, মাটির কাজ না হওয়া সত্ত্বেও ঘরের বরাদ্দকৃত টাকা উত্তোলন করা, ‘অ্যাকাউন্ট পে চেকের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন না করে নগদ টাকা উত্তোলন করা, বদলিজনিত কারণে দায়িত্ব হস্তান্তরের পরেও বিধি বহির্ভূতভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়া, ৫৩ লাখ ৯২ হাজার টাকা ব্যাংকে জমা না রেখে গোপনীয় সহকারীর নিকট জমা রাখা, কারিগরি ও সাধারণ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মতে প্রাক্কলন অনুযায়ী কাজ না করার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ৩ (ক), ৩ (খ) ও ৩ (গ) বিধি অনুযায়ী 'অদক্ষতা', 'অসদাচরণ’ ও ‘দুর্নীতিপরায়ণতা' এর অভিযোগে এ মন্ত্রণালয়ের ২০১৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর বিভাগীয় মামলা রুজু করে কৈফিয়ত তলব করা হয় এবং একই সাথে তিনি ব্যক্তিগত শুনানি চান কি-না তা জানতে চাওয়া হয়।

অভিযুক্ত কর্মকর্তা অভিযোগনামা ও অভিযোগ বিবরণীর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২০২০ সালের ২১ জানুয়ারি লিখিত জবাব দাখিল করে ব্যক্তিগত শুনানির জন্য আবেদন করলে গত ৮ মার্চ তার ব্যক্তিগত শুনানি গ্রহণ করে ন্যায় বিচারের স্বার্থে মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়।

এতে আরও বলা হয়, তদন্ত কর্মকর্তা কর্তৃক ৫ অক্টোবর দাখিলকৃত তদন্ত প্রতিবেদনে মোহাম্মদ শফিকুর রহমানের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর আওতায় আনীত 'অদক্ষতা', 'অসাদাচরণ' এবং 'দুর্নীতিপরায়ণ' এর অভিযোগসমূহ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে সরকারি কর্মচারি (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর ৪ (৫) এর (ক), (গ) ও (ঙ) অনুযায়ী গুরুদণ্ড আরোপের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে দ্বিতীয় কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়।

মোহাম্মদ শফিকুর রহমান গত বছরের ২২ ডিসেম্বর দ্বিতীয় কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দাখিল করলে তার জবাব সন্তোষজনক বিবেচিত না হওয়ায় এবং তার বিরুদ্ধে অভিযোগসমূহ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার ৪(৩) (ক) বিধি মোতাবেক 'নিম্নপদে অবনমিতকরণ' এবং আত্মসাতকৃত ৪৩ লাখ ৩৩ হাজার ৩৮০ টাকা তার বেতন-ভাতা থেকে আদায়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে গুরুদণ্ড আরোপের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি কর্ম কমিশনের মতামত চেয়ে ১১ মার্চ চিঠি পাঠানো হয়।

সরকারি কর্ম কমিশন মোহাম্মদ শফিকুর রহমানকে 'নিম্নপদে অবনমিতকরণ’ ও আত্মসাতকৃত ৪৩ লাখ ৩৩ হাজার ৩৮০ টাকা তার বেতন-ভাতা থেকে আদায়ের সিদ্ধান্তের সাথে একমত পোষণ করে ১৮ আগস্ট চিঠি পাঠায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৪(৬) অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য সারসংক্ষেপ পাঠালে অনুমোদন করেন।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, মোহাম্মদ শফিকুর রহমানের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৩ (ক), (খ) ও (ঘ) বিধি অনুযায়ী 'অদক্ষতা', 'অসদাচরণ' ও 'দুর্নীতিপরায়ণতা’র অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় একই বিধিমালার ৪ (৩) (ক) বিধি মোতাবেক তাকে ২ বছরের জন্য 'নিম্নপদে অবনমিতকরণ' অর্থাৎ তাঁর বর্তমান বেতনস্কেল ৩৫৫০০-৬৭০১০/- টাকার নিম্নস্কেল ২৯০০০-৬৩৪১০/- টাকা স্কেলে ৩৮৮৯০/- টাকা মূল বেতনে সহকারী কমিশনার/সহকারী সচিব পদে অবনমিতকরণ গুরুদণ্ড আরোপ এবং আত্মসাতকৃত ৪৩ লাখ ৩৩ হাজার ৩৮০ টাকা তার বেতন ভাতা হতে আদায়ের সিদ্ধান্ত প্রদান করা হলো।

‘উক্ত কর্মকর্তার পদাবনতি বলবৎ থাকার সময়কাল অতিবাহিত হওয়ার পর তিনি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ৩৫৫০০-৬৭০১০/- স্কেলে প্রত্যাবর্তন করবেন এবং তিনি কোন বকেয়া প্রাপ্য হবেন না। ’ 

এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০২২
এমআইএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।