ঢাকা: করোনা সংক্রমণ রোধে অর্ধেক জনবল নিয়ে অফিস পরিচালনার বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, গর্ভবতী নারী এবং অসুস্থ ব্যক্তিরা ঘরে থেকে অফিস করবেন।
সোমবার (২৪ জানুয়ারি) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান।
সংক্রমণ রোধে সব সরকারি/আধাসরকারি/স্বায়ত্বশাসিত/বেসরকারি অফিসগুলো স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক অর্ধেক সংখ্যক কর্মকর্তা/কর্মচারী নিয়ে পরিচালনা করতে রোববার (২৩ জানুয়ারি) নির্দেশনা দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, অন্যান্য কর্মকর্তা/কর্মচারীরা নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করবেন এবং দাপ্তরিক কার্যক্রম ভার্চ্যুয়ালি (ই-নথি, ই-টেন্ডারিং, ই-মেইল, এসএমএস, হোয়াটসঅ্যাপসহ অন্যান্য মাধ্যম) সম্পন্ন করবেন।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, অর্ধেক জনবলের বিষয়টি সোমবার থেকে বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। আমাদের অর্ধেক সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে সরকারি/আধাসরকারি/স্বায়ত্বশাসিত/বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে অফিস পরিচালনা করে। করোনার যে সংক্রমণ, তা ঊর্ধ্বগতি। গতকাল প্রায় ৩১ শতাংশ সংক্রমণ ছিল।
তিনি বলেন, যেহেতু তৃতীয় ঢেউয়ে আছি, আমাদের প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ে এ রকম নির্দেশনা ছিল, সেগুলো আমরা বাস্তবায়ন করেছি। যার কারণে অর্ধেক সংখ্যক নিয়ে যে অফিস করা এবং এরও কম সংখ্যক নিয়ে অফিস করার প্রাকটিস করেছি। সেইজন্য আমাদের প্রাকটিস আছে।
‘যারা সাধারণত গর্ভবতী নারী, যারা একটু অসুস্থ এরা ঘরে থেকে অফিস করেন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে। বিশেষ করে জুম, ই-নথি, এসএমএস, হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে তারা তাদের কাজগুলো চালিয়ে নেবেন। ’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে আমরা সবাইকে জানিয়েছি এবং মন্ত্রণালয় এবং অন্যান্য অফিস, রাস্তাতে যানবাহনের সংখ্যা দেখে বুঝতে পেরেছেন যে মানুষ কিন্তু ইতোমধ্যে সচেতন হয়েছেন এবং আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারী যারা রয়েছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তারাও কিন্তু উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। যার কারণে এটি বাস্তবায়ন ইতোমধ্যে দেখছি। তবে যেহেতু গতকালকে হয়েছে আমরা আরও বেশি বাস্তবায়ন দেখব আগামীতে। এই সময়ে সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, করোনা বেড়ে গেলে সারা বিশ্বেই দেখবেন একমাত্র সমাধান স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং সেক্ষেত্রে যত জনসমাগম পরিহার করতে পারবো ততই আমাদের জন্য ভালো। আমরা চাই আমাদের কর্মকর্তারা যাতে সুস্থ থেকে কার্যক্রমগুলো চালিয়ে নিতে পারেন। সেজন্য আমাদের অর্ধেক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বাসায় থাকবেন এবং বাসা থেকে ডিজিটালি অফিস করবেন। আর যারা আসবেন তারাও যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করেন। আমাদের আগেই প্রাকটিস আছে, প্রত্যেকটা মিনিস্ট্রিতে তারা সেভাবেই কাজ করবেন। আমাদের উদ্দেশ্য সংক্রমণটা কমিয়ে আনা।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অর্ধেক জনবল নিয়ে পরিচালনার বিষয়টি মানা হচ্ছে কিনা এবং কারা মনিটর করবে- এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে বলা হয়েছে যারা স্বাস্থ্যবিধি ভঙ্গ করবেন তাদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট থেকে শুরু করে আগের মতোই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারণ, যারা মানতে চান না তাদের মানানোর জন্য কিছুটা আইনের প্রয়োগ করতে হয়। সরকার মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এবং করে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে আমরা অবশ্যই চাইবো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এরআগেও সাড়া দিয়েছে, এবারও সাড়া দেবে। প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা তাদের প্রতিষ্ঠানের সফলতার জন্যই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুরক্ষার চেষ্টা করেন। এটা একটা দায়িত্ববোধের ব্যাপার। কারণ কেউ চায় না তার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা অসুস্থ হয়ে প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হোক।
সরকারি কর্মচারীসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের জনবল ভ্যাকসিনেটেড কিনা এবং তা কীভাবে মনিটর করা হবে- প্রশ্নে ফরহাদ হোসেন বলেন, যারা ফ্রন্ট লাইনে কাজ করেন, জরুরি সেবা কাজে যুক্ত থাকেন তাদের আমরা জরুরিভাবেই টিকা দেওয়ার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলাম। আমরা টিকা দেওয়ার বিষয়টি উদ্বুদ্ধ করেছি এবং ব্যাপকভাবে টিকা নিচ্ছে। আমরা দ্বিতীয় ডোজ শেষ করেছি এবং বুস্টার ডোজ ব্যাপকভাবে সাড়া পড়েছে। টিকা দেওয়া আছে বলেই যারা সংক্রমিত হচ্ছেন তাদের আগের মতো সমস্যা হচ্ছে না এবং হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা অনেক কম। এটা টিকার সুফল। সেক্ষেত্রে আমাদের টিকা কার্যক্রম পুরোপুরি সক্রিয় আছে এবং যাতে সবাই নেন এবং যাদের নেওয়ার বেশি প্রয়োজন বিশেষ করে গ্রাম পর্যায়ে বয়স্করা, আমরা মাইকিং করে উদ্বুদ্ধ করছি।
তিনি আরও বলেন, সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে জরুরি ভিত্তিতে এবং গার্মেন্টসকর্মী, পরিবহন শ্রমিকদের অগ্রাধিকার িিভ্ত্ততে টিকা দেওয়া হচ্ছে। আমরা টিকার ওপরে জোর দিচ্ছি। সরকার টিকা আনার ব্যবস্থা করছে এবং পর্যাপ্ত সংখ্যক টিকা আমাদের রয়েছে।
গণপরিবহন সরকারের বিধিনিষেধ মানছে না- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, সরকারের দেওয়া বিধিনিষেধ সবাইকে মানতে হবে। ইউরোপ সংক্রমণের ক্ষেত্রে তাদের পিক সময় পার করেছে। আমাদের পরে শুরু হয়েছে, এজন্য আমাদের একটু পরে সেটা হতে পারে। সেক্ষেত্রে আমরা চাইব যাদের যেভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, নির্দেশনাগুলো সবাই মেনে চললে তা সবার জন্যই ভালো। পরিবহন সেক্টরে যারা রয়েছেন তাদেরও আমাদের সহযোগিতা করতে হবে। নিয়ম মেনে তারা গণপরিবহন পরিচালনা করবেন। এরমধ্য দিয়ে আমরা একটা ভাল রেজাল্ট পাবো। আশা করছি অল্প সময়ের মধ্যে তৃতীয় ঢেউ উত্তোরণ করব।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০২২
এমআইএইচ/এমআরএ