ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নাবিকের ফোনে ছিলেন ছোট ভাই, রকেট এসে কেড়ে নিল প্রাণ!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৮ ঘণ্টা, মার্চ ৩, ২০২২
নাবিকের ফোনে ছিলেন ছোট ভাই, রকেট এসে কেড়ে নিল প্রাণ!

বরগুনা: ইউক্রেন সময় বুধবার (২ মার্চ) বিকেল ৫টা ১০ মিনিট, ঠিক তখন বাংলাদেশে রাত প্রায় সাড়ে ৯টা। তখন ছোট ভাই গোলাম রহমান প্রিন্সের সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলেন রাশিয়ার আক্রমণের কারণে ইউক্রেনে আটকে পড়া জাহাজ ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’র থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. হাদিসুর রহমান (২৯)।

এর মধ্যেই জাহাজটিতে রকেট হামলা চালানো হয়। এতে আগুন ধরে যায় জাহাজে। আর ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলতে বলতে মুহূর্তেই প্রাণ হারান তিনি।    

বিলাপ করতে করতে কথাগুলো বলছিলেন নিহত এ নাবিকের মা আমেনা বেগম।

গোলাম রহমান প্রিন্স ঢাকা থেকে বাড়িতে ফিরছেন। মোবাইল ফোনে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, গতকালক রাতে আমার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলা অবস্থায় আমি একটি বিকট শব্দ শুনতে পাই। কিছু বুঝতে পারছিলাম না, ওখানে কি ঘটেছে। বিকট শব্দের বেশ কয়েক মিনিট পর মোবাইল ফোনের লাইন কেটে যায়। এতে ওখানে কি ঘটেছে, তা নিয়ে আমি আতঙ্কিত হয়ে পড়ি।

তিনি আরও বলেন, বড় ভাই হাদিসুর পরিবারের সবার কাছে দোয়া চেয়েছিলেন, যেন নিরাপদে বাড়িতে ফিরতে পারেন।

ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরের জলসীমায় আটকে থাকা বাংলাদেশি জাহাজ ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’তে রকেট হামলায় নিহত মো. হাদিসুর রহমানের মৃত্যুর খবর পেয়ে শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েছে গোটা পরিবার।

বরগুনার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের কদমতলা বাজারসংলগ্ন চেয়ারম্যান বাড়ির বাসিন্দা মো. আবদুর রাজ্জাক (অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক) ও আমেনা বেগম দম্পতির বড় ছেলে হাদিসুর।  

তিন ভাই এক বোনের মধ্যে বোন সবার বড়। এরপর হাদিসুর রহমান। তার ছোট দুই ভাই লেখাপড়া করেন বরগুনায়। হাদিসুর রহমানই শুধু উপর্জন করতেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা-বাবা। ছেলের লাশ দেশে আনার জন্য সরকারের কাছে আকুতি জানিয়েছেন তারা।
উপজেলা চেয়ারম্যান মাকসুদুর রহমান ফোরকান বলেন, এখন তো আরও দুশ্চিন্তায় আছি, মরদেহ দেশে আনব কীভাবে। জেলা প্রশাসকের কাছে যাব, মরদেহ দেশে আনার বিষয়ে সহযোগিতা চাইতে।

বরগুনা জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শাহাবুদ্দিন আহমেদ বলেন, নিহত হাদিসুরের মরদেহ দেশের আনার ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে।

স্বজনরা জানান, এমভি বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজটিতে সাত বছর ধরে চাকরি করেন হাদিসুর। জাহাজ থেকে হাদিসের এক বন্ধু ফোন করে জানান যে বন্দরের জলসীমায় ২৪ ফেব্রুয়াারি থেকে আটকে আছে তাদের জাহাজ। ইউক্রেন সময় বুধবার ৫টা ১০ মিনিটের দিকে তাদের জাহাজে হামলা হয়। জাহাজে বাংলাদেশের ২৯ জন নাবিক রয়েছেন।
বুধবার (০২ মার্চ) স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ১০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৯টায়) এ হামলা হয় বলে জানান সেখানে অবস্থান করা বাংলাদেশি নাবিক সালমান সামি।  

আরও পড়ুন: 

ইউক্রেনে রকেট হামলায় নিহত বাংলাদেশি নাবিকের বাড়িতে শোকের মাতম

ইউক্রেনে আটকে পড়া বাংলাদেশি জাহাজে রকেট হামলা, নিহত ১

বাংলাদেশ সময়: ১১৫৬ ঘণ্টা, মার্চ ৩, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।