ঢাকা, বুধবার, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ০৩ জুলাই ২০২৪, ২৫ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

২ লাখ টাকা হলে বাঁচবে সুজন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট   | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৪ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০২২
২ লাখ টাকা হলে বাঁচবে সুজন বিছানায় শুয়ে সুজন, পাশে তার মা আম্বিয়া খাতুন

লালমনিরহাট: ব্রেন টিউমারে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন রিকশাচালক সুজন মিয়া (২৫)। তবে মাত্র দুই লাখ টাকায় বাঁচতে পারে তার জীবন।

রিকশাচালক সুজন লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের রসূলপাড়া গ্রামের ভ্যানচালক আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে।

জানা গেছে, ভ্যানচালক ভূমিহীন বাবার অভাবের সংসারে তেমন লেখা-পড়া সম্ভব হয়নি সুজনের। তাই অল্প বয়সেই রিকশা চালিয়ে বাবার অভাবের সংসারের হাল ধরেন তিনি। গত তিন বছর আগে হঠাৎ অসুস্থ হলে রিকশা চালানো বন্ধ হয়ে যায় সুজনের। অন্ধকার নেমে আসে তিন সদস্যের সংসার। সুজনকে সুস্থ করতে ধার-দেনা করে বিভিন্ন চিকিৎসকের পেছনে ঘুরে কোনো ফল আসেনি সুজনের পরিবারের।

গত বছর রংপুর মেডিক্যাল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. তোফায়েল হোসেন ভূঁইয়ার কাছে যান সুজন। তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানান সুজনের ব্রেন টিউমার হয়েছে। অস্ত্রপাচার করলে অনেক টাকা লাগবে। দুস্থ গরিব সুজনের পরিবারের পক্ষে এত টাকা ব্যয় করা সম্ভব নয়। তাই চিকিৎসক ওষুধে রোগ নির্মূলের চেষ্টা করেন। চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করে কিছুটা সুস্থতা লাভ করলেও অর্থের অভাবে পুরো ওষুধ খেতে পারেননি সুজন। ফলে আবারও অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।

অবশেষে সুজনের আয়ের পথ রিকশাটি বিক্রি করে গত সপ্তাহে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক ডা. সালাহ উদ্দিন আহম্মেদের কাছে নেওয়া হয় সুজনকে। তিনিও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ব্রেন টিউমারের ঘোষণা দেন। সেই সঙ্গে দ্রুত অস্ত্রপাচার করার পরামর্শ দেন। টিউমার বড় হয়েছে যা ওষুধে নির্মূল যোগ্য নয়। সুজনকে বাঁচাতে ১০-১৫ দিনের মধ্যে অস্ত্রপাচার করতে হবে। এতে প্রয়োজন ২ লাখ টাকা। রোগ নির্ণয় করতেই টাকা শেষ। একমাত্র ছেলেকে বাঁচানোর খরচ শুনে হতবাক হয়ে পড়েন সুজনের বাবা আব্দুল কুদ্দুস। তার থাকার ঘর আর ভ্যান গাড়িটি ছাড়া কোনো সম্বল নেই। ছেলেকে বাঁচাতে কে দেবে এত টাকা।

নিরুপায় বাবা একমাত্র ছেলেকে বাঁচাতে সমাজের বিত্তবানদের দুয়ারে ছুটছেন। কিন্তু তেমন কোন সাড়া পাননি।  

অন্যদিকে, সময় যত ঘনিয়ে আসছে সুজনের শরীর খারাপের দিকে যাচ্ছে। চোখের সামনে একমাত্র ছেলের মৃত্যু যন্ত্রণা সহায় করতে পারছেন না সুজনের বাবা মা। নিরুপায় বাবা মা মৃত্যু পথযাত্রী ছেলেকে শান্তনা দিতে গতকাল ৭ মার্চ দুপুরের দিকে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। যদিও সেখানে তাকে সুস্থ করার মতো কোনো চিকিৎসা নেই।

সুজনের মা আম্বিয়া খাতুন বাংলানিউজকে জানান, দুই লাখ টাকা হলে অপারেশন করে সুজনকে ভালো করা যাবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। না হলে সুজনকে বাঁচানো যাবে না। ঘর আর ভ্যান ছাড়া তাদের কোনো সম্পদ নাই। কে তাদের এতগুলো টাকা দেবে?। গরিব মানুষ হওয়ায় কেউ ঋণও দেয় না। সাহায্যও দেয় না কেউ। আর তাই সমাজের হৃদয়বান, বিত্তবানদের কাছে ছেলের চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন।

সুজনের প্রতিবেশী লালমনিরহাট সদর উপজেলা স্বাস্থ্য সহকারী পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলম বাংলানিউজকে বলেন, চিকিৎসকদের বর্ণনা মতে দ্রুত অস্ত্রপচার করলে সুজনকে বাঁচানো সম্ভব। কিন্তু তার গরিব বাবা-মায়ের পক্ষে দুই লাখ টাকা যোগার করা অসম্ভব। সদর হাসপাতালে তাকে সুস্থ করার মতো চিকিৎসা নেই। তবুও শান্তনা দিতে সুজনকে তার বাবা-মা ভর্তি করেছেন। সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে এলে এ পরিবারের একমাত্র সম্বল সুজনকে বাঁচানো সম্ভব। কেননা, সুজন ছাড়া পরিবারটিও অচল হয়ে পড়বে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০২২
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।