ঢাকা, শুক্রবার, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ মে ২০২৪, ০১ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অন্তরে ধারণ করতে হবে: খুবি উপাচার্য

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২২ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০২২
বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অন্তরে ধারণ করতে হবে: খুবি উপাচার্য

খুলনা: খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে (খুবি) যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উদযাপিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন খুবি উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন। মুখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন একুশে পদকপ্রাপ্ত সমাজসেবী ও আইনজীবী এস এম আব্রাহাম লিংকন। সভাপতিত্ব করেন আইন স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. মো. ওয়ালিউল হাসানাত। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুস। সভায় আরও বক্তব্য রাখেন- শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. তরুণ কান্তি বোস ও অফিসার্স কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক দীপক চন্দ্র মণ্ডল।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতনার মানুষ। তার অন্যতম আদর্শ ছিল সহনশীলতা ও সত্যবাদিতা। তিনি দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবাসতেন। দেশের মানুষও বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসতেন। তিনি জনমানুষের ভালোবাসার এ প্রতিদান তার জীবন দিয়ে প্রমাণ করেছেন।  

তিনি বলেন, ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশে যে কালো অধ্যায়ের সৃষ্টি হয়, তা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর আস্তে আস্তে দূর হয়। দেশ ঘুরে দাঁড়ায়।  

উপাচার্য বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ শুধু মুখে বললে হবে না, অন্তরে ধারণ করতে হবে। আজকের দিনে আমাদের শপথ নিতে হবে যে, আমরা মানুষ, আমরা বঙ্গবন্ধুর মতো সহনশীল হবো, দেশপ্রেমিক হবো। নিজেদের মধ্য থেকে কলুষতা দূর করতে হবে। মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। একে অপরকে শ্রদ্ধা করতে হবে, পারস্পারিক সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।  

তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও চেতনা ধারণ করেই দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।  

মুখ্য আলোচক তার বক্তব্যে বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন একজন আপদমস্তক দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদ। তিনি ছাত্রজীবনের শুরু থেকে প্রতিবাদী ছিলেন। কলকাতায় ছাত্রজীবনে অধ্যয়নের সময় প্রতিবাদ ছাড়াও সাংগঠনিক নেতৃত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন। দেশে এসে স্ত্রী-সন্তান, ঘর-সংসার ছেড়ে ঢাকায় থেকে রাজনীতি করেছেন। তিনি জানতেন বাঙালির স্বাধিকার প্রতিষ্ঠা, সার্বভৌমত্বের জন্য তাদের সংগঠিত করার কোনো বিকল্প নেই। এ উপলব্ধিতে তিনি পর্যায়ক্রমে গণতান্ত্রিক যুবলীগ, ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি কারাগারে থেকেই আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন দূরদর্শী। জাতির আকাঙ্ক্ষা ও মুক্তির জন্য কী কী দরকার তা তিনি বুঝতে পারতেন। বঙ্গবন্ধু তখন আপস করলে পাকিস্তানের সরকারপ্রধান হতে পারতেন, কিন্তু তিনি তা চাননি। তিনি বাংলার মানুষের মুক্তি চেয়েছেন, স্বাধীনতা চেয়েছেন।  

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৬ দফাই বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মূল ভিত্তি। ৬ দফাকে কেন্দ্র করে গোটা জাতিকে তিনি এক করতে পেরেছিলেন। মানুষের মনে নবচেতনা জাগ্রত করেছিলেন। তার দেশপ্রেম ও সাহস ছিল প্রশ্নাতীত, যা তাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়েছিল। তার ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ও ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণার পর মুক্তিকামী মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তিনি পাকিস্তানিদের হাতে বন্দি হলেও মুক্তিকামী মানুষ তার নির্দেশনা মেনে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে। তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হয়।  

মুখ্য আলোচক বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশে মৌলবাদের উত্থান হয়েছিল। হত্যার পরও তাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা জানতো না যে, জীবন্ত বঙ্গবন্ধুর চেয়ে মৃত বঙ্গবন্ধু হাজার গুণ বেশি শক্তিশালী। বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ ক্ষুধা মুক্ত করেছেন। উন্নয়নের পথে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের কেউ এখন না খেয়ে মারা যায় না।  

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় আমাদের ধর্ম নিরপেক্ষ হতে হবে। আমাদের মধ্যে দেশপ্রেম থাকতে হবে। নতুন প্রজন্মের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও চেতনা ছড়িয়ে দিতে হবে। বঙ্গবন্ধুর মতোই আমাদের স্বপ্ন দেখতে হবে, আর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নেও কাজ করতে হবে। তবে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠিত হবে।

আলোচনা সভা শেষে দিবসটি উপলক্ষে অনুষ্ঠিত শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ করা হয়। প্রধান অতিথিসহ অতিথিরা বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।

এর আগে সকাল ৯টায় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ ভবনের সামনে উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন কর্তৃক জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়। পরে উপাচার্যের নেতৃত্বে একটি শোভাযাত্রা প্রশাসন ভবনের সামনে থেকে শুরু করে হাদী চত্বর ঘুরে কালজয়ী মুজিব প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্কুলের ডিন, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত), ডিসিপ্লিন প্রধান, বিভাগীয় প্রধান, ছাত্র বিষয়ক পরিচালক, প্রভোস্ট, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

এরপর বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ‘কালজয়ী মুজিব’ এর বেদিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে উপাচার্য প্রথম শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্কুলের ডিন, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) উপস্থিত ছিলেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল, বিভিন্ন ডিসিপ্লিন, আবাসিক হলসমূহ, শিক্ষক সমিতি, অফিসার্স কল্যাণ পরিষদ ও কর্মচারীদের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হয়। পরে আইন ডিসিপ্লিন কর্তৃক প্রকাশিত দেয়ালিকা ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, শিশুর জীবন হোক রঙিন’ উদ্বোধন করেন উপাচার্য। এ সময় আইন ডিসিপ্লিনের ডিন ও ডিসিপ্লিন প্রধান প্রফেসর ড. মো. ওয়ালিউল হাসানাতসহ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে ছিল বাদ যোহর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ ও প্রশাসন ভবন সংলগ্ন মসজিদে দোয়া, কেন্দ্রীয় মন্দিরে প্রার্থনা।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০২২
এমআরএম/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।