ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২১ মে ২০২৪, ১২ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

‘স্বপ্ন আর বাড়ি যাবে না’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫২ ঘণ্টা, জুলাই ৮, ২০২২
‘স্বপ্ন আর বাড়ি যাবে না’

ইসমাইল হোসেন, উত্তরের পথ থেকে: ‘স্বপ্ন যাবে বাড়ি আমার’- ঈদের সময় এ গানের মতো অনুভূতি সঙ্গী করেই আবেগ নিয়ে বাড়ি যায় মানুষ। তবে এবারের ঈদে সড়ক, রেলপথের ভোগান্তি এতটা বেড়েছে যে অনেকেই বলতে শুরু করেছেন- ‘স্বপ্ন আর বাড়ি যাবে না’।

ঈদযাত্রায় বরাবরই কষ্ট হয় উত্তরের যাত্রীদের। বাসে কিংবা ট্রেনে- যেভাবেই হোক বাড়ি যেতে হয়। দক্ষিণের মানুষের ভরসা ছিল লঞ্চ, তবে এবার পদ্মার বুকে সেতু হওয়ায় তাদের বাড়ি যাওয়াটা অনেকটাই সহজ হয়েছে। কিন্তু উত্তরের যাত্রীদের বাড়ি যাওয়াটা এবার অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। কারণ এবার মোটরসাইকেলও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যদিও অনেককেই মোটরসাইকেল নিয়ে চলতে দেখা গেছে।

গেল কয়েক দিন ধরে বাস আর ট্রেনের টিকিট কাটতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে। ৩০-৪০ ঘণ্টা স্টেশনের কাউন্টারে দাঁড়িয়ে ট্রেনের টিকিট মিললেও বৃহস্পতিবার বা শুক্রবার যারা বাড়ি যাবেন তাদের অনেকেই ট্রেনে উঠতে পারেননি। স্ট্যান্ডিং টিকিট বা টিকিট ছাড়া যাত্রীদের চাপেই হয়েছে এমনটা।  

আর পিক টাইমে বাসের টিকিট মিলেছে সিন্ডিকেটে বা পরিচিতির কারণে।

ঈদের আগে বৃহস্পতিবার ছিল শেষ কর্ম দিবস। শেষ দিন ডিউটি শেষে বাড়ি যাওয়ার জনস্রোত দেখা যায় বাসস্ট্যান্ড ও রেল স্টেশনে।

বাস কিংবা ট্রেন- কোনোটারই সিডিউল ঠিক থাকেনি। ঢাকা থেকে যানজট ঠেকেছে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাড় পর্যন্ত। সিরাজগঞ্জ, বগুড়া ও গাইবান্ধায়ও থেমে থেমে গাড়ি চলছিল।  

এদিকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব এলাকায় অতিরিক্ত চাপে ট্রেনের বগি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় চারটি ট্রেন থেমে যায় সেখানেই। ট্রেনের ছাদে দেখা গেছে মানুষের ঠাসাঠাসি।

বাস-ট্রেনের এলোমেলো সিডিউলে গরমের মধ্যে সড়কের যানজটে মানুষের ত্রাহি অবস্থা। বিশেষ করে যারা ট্রেনের ছাদে বা ট্রাক-পিকআপ ভ্যান কিংবা মোটরসাইকেল নিয়ে যাচ্ছেন তারাই ভোগান্তির শিকার হয়েছেন বেশি।

ইট-পাথরের ঢাকা শহরের মানুষ দুই ঈদে ছুটে যান গ্রামের বাড়ি। বলা হয়, নাড়ির টানে প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ করতে কষ্ট সয়ে এ বাড়ি যাওয়া। এ বাড়ি যাওয়াটার সঙ্গে মানুষের প্রিয়জনদের জন্য আবেগ, ভালোবাসার। কিন্তু এবার কষ্টের মাত্রাটা যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।  

ঢাকা থেকে বাসে উঠে ১৩ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জ আসতে পেরেছেন বলে জানান একজন যাত্রী, তিনি যাবেন রংপুর। অন্তত আরও ৪/৫ ঘণ্টা লাগবে তার।  

সড়কের এমন কষ্ট আর ভোগান্তির বর্ণনা দিয়ে তাই তো অনেকেই ফেসবুকে অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন।

সাংবাদিক ইমতিয়াজ সকালে ট্রেনে করে বাড়ি যাওয়ার জন্য কমলাপুরে গিয়ে যাত্রীদের চাপের ছবি পোস্ট করে লিখেছেন- ‘স্বপ্ন প্ল্যাটফর্মটারে লঞ্চের ডেক বানায় ফেলছে...’।

বেসরকারি চাকরিজীবী আহসান হাবিব যাচ্ছেন দিনাজপুর। চার ঘণ্টা পর ট্রেন ছেড়েছে তার।  

হাবিব ফেসবুকে লিখেছেন- রেলপথ... সড়ক পথ থেমে আছে...। রাত ১১টার ট্রেন ছাড়লো ৩টায়। সকাল ৬টা থেকে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে ট্রেন যমুনা সেতু পূর্ব পাড়ে...। জানি না কখন দিনাজপুর যেতে পারবো...I

শেষে ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘... স্বপ্ন আর বাড়ি যাবে না...’।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, জুলাই ০৮, ২০২২
এমআইএইচ/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।