ঢাকা, বুধবার, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ মে ২০২৪, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ঘর ভাড়ার টাকায় রিকশা কিনে সাবলম্বী মেঘনা পাড়ের সাঈদ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২১ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০২২
ঘর ভাড়ার টাকায় রিকশা কিনে সাবলম্বী মেঘনা পাড়ের সাঈদ ছবি: হোসাইন মোহাম্মদ সাগর

লক্ষ্মীপুর থেকে: এক বছর আগেও এবেলা খেলে ওবেলা খাবার জুটবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় থাকতেন মেঘনা পাড়ের বাসিন্দা আবু সাঈদ। যা উপার্জন হতো, ঘরভাড়াতেই যেত অনেক টাকা।

তারপর সন্তানদের নিয়ে পরিবারের সবার খাবার আর প্রয়োজনগুলো নিয়ে ভাবতে ভাবতেই কাটতো সময়। তবে এখন দিন বদলেছে। জেলে আবু সাঈদ এখন রিকশা কিনেছেন নিজে। হয়েছেন সাবলম্বী।

বুধবার (২০ জুলাই) লক্ষ্মীপুর জেলার কমল নগর উপজেলার জয় বাংলা আশ্রায়ণ প্রকল্পে কথা হয় তার সঙ্গে। এ আশ্রয়ণ প্রকল্প এখন তাদের বসবাসের স্থায়ী ঠিকানা। যেখানে জেলে সাঈদের দিন কাটতো দিনের পর দিন নৌকায়, ইনকাম ছিল হাতে গোনা, এখন সেই সাঈদ নিয়মিত সময় দেন পরিবারকে। বেশ ভালোভাবে গুছিয়ে নিয়েছেন সংসারও।

কথা হলে আবু সাঈদ বাংলানিউজকে বলেন, আগে যে টাকা দিয়ে ঘর ভাড়া দিতাম আর সংসার চলতো দিন আনি দিন খাই অবস্থায়; এখন সেই টাকা জমিয়ে কিনেছি রিকশা। রোজগারের টাকায় লেখাপড়া করাচ্ছি সন্তানদের। এই ঘর পাওয়ার পর মনে হয়েছে, নদীর ভাঙনে যে ঘর হারিয়েছিলাম, তা যেন আবার ফিরে পেয়েছি।

সাঈদ বলেন, নদীতে সব ভেঙে নিয়ে গেলে আমরা সহায়-সম্বলহীন হয়ে পড়ি। এরপর প্রধানমন্ত্রীর উপহার এই ঘর পেয়েছি। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া, আমরা এখন বেশ ভালো আছি। নিজেরা হাঁস-মুরগী, ছাগল পালন করছি। আর বাড়ির আঙিনায় যতটা সবজি হয়, তা সবাই মিলে ভাগ করে খাই।

জয় বাংলা আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘুরে দেখা যায়, ছোট্ট নদীর পাড় ঘেঁষে সারি সারি রঙিন ঘর। বাড়িগুলোর সামনে শোভা পাচ্ছে সারি সারি ফুলের গাছ, নানারকম সবজি। যেন সবুজের সমারোহ। রঙিন টিনের আধাপাকা ঘরগুলো দেখলে মন জুড়িয়ে যায়। এ যেন এক খণ্ড শান্তির নীড়। এই নীড়েই সুখের স্বপ্ন গড়েছেন সহায়-সম্বলহীন আবু সাঈদের মতো কিছু মানুষ।

আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘুরে দেখা যায়, দুই শতাংশ জমির মালিকানাসহ সেমিপাকা ঘর করে দেওয়া হয়েছে এই মানুষগুলোকে। এরসঙ্গে আছে রান্নাঘর ও টয়লেট। আঙ্গিনায় হাঁস-মুরগি পালন ও শাক-সবজি চাষেরও জায়গা আছে বেশ খানিকটা। এছাড়া নদীর পাড়ে হওয়ায় অনেকেই পালন করেন হাঁস। এখানে আশ্রয় পাওয়া পরিবারগুলোর অধিকাংশ পুরুষই যেখানে পেশায় জেলে, সেখানে বাড়ির নারীরাও নিজের প্রচেষ্টায় এগিয়ে নিচ্ছেন সংসার আর সন্তানদের।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা বৃদ্ধ আলী হোসেন বলেন, বাবা অনেক ভালো আছি। শেখ হাসিনা এই বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে শেষ বয়সে জায়গা দিয়ে একটা পাকা ঘর করে দিয়েছেন, ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছেন। পাকা পায়খানা, সুপেয় জলের সুবিধা দিয়েছেন। মা-বাবা যা দিতে পারেননি, সারা জীবন আয় রোজগার করে যা করতে পারিনি, সেই কাজটি আমার আরেক মা শেখ হাসিনা করে দিয়েছেন।

তিনি যোগ করে বলেন, তবে কষ্টও কিছু আছে। হাসপাতাল অনেক দূরে, বাচ্চাদের জন্যও কাছে একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রয়োজন। আমরাও তো চাই লেখাপড়া শিখে আমাদের সন্তানেরা বড় অফিসার হোক। এছাড়া মসজিদ, কবরস্থানসহ আরও কিছু বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

‘এখানে ছেলেমেয়েদের খেলাধূলা-হৈচৈ, খেলার জন্য দোলনা, বসার স্থান, পাশে রয়েছে নদী ও বিল। অবসরে যখন এসবের ভেতর দিয়ে হাটতে বের হই, তখন মনটা ভালো হয়ে যায়’ বলেও জানান বৃদ্ধ আলী হোসেন।

সার্বিক বিষয়ে কমল নগর উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান বলেন, তাদের ঘরের সামনের যে খোলা জায়গাটা আছে, সেখানে তারা সবজি চাষ করছেন, হাঁস-মুরগি পালন করছেন। তারা এগুলো করার মধ্য দিয়ে নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। আগে তাদের সবথেকে বড় যে টেনশন ছিল, মাথা গোঁজার ঠাঁই, এখন সেই চিন্তা নেই। তারা এখন তাদের মতো করে স্বপ্ন দেখছে।

তিনি বলেন, যে মানুষগুলো নদী ভাঙনে সর্বস্ব হারিয়েছেন, এখন ঘর পেয়ে তাদের আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে গেছে। আমরা তাদের জন্য এখানে কবরস্থান করার চিন্তা করছি। আমরা জায়গাও ঠিক করেছি। আমরা এখানে একটা মসজিদ করে দেবো। তাদের মধ্যে এখন একটা কমিউনিটি ডেভলপমেন্ট হচ্ছে। এখানে একটা প্রতিষ্ঠান আছে, আমরা খোলা একটু জায়গা রেখেছি, যেন সামাজিক অনুষ্ঠানগুলো তারা এখানে করতে পারে। আমরা উপজেলা প্রশাসন এবং জেলা প্রশাসন নিয়মিত তাদের দেখাশোনা করছি।  

বাংলাদেশ সময়: ০৮২০ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০২২
এইচএমএস/এসএ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।