রাজবাড়ী : প্রচণ্ড খরার কারণে খেতেই শুকিয়ে মরে যাচ্ছে পাট। খালে বিলে পানি নেই, তাই পাট পচাতে বা জাগ দিতে না পেরে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা।
বর্ষার ভরা মৌসুমেও খাল-বিলে পানি না থাকায় জলাশয়, ডোবা, পুকুরে পাটের জাগ দিতে হচ্ছে। এতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি খরচ হচ্ছে। কমছে গুনগত মানও। পাটে কালো দাগ পড়তে শুরু করেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজবাড়ীর পাটের চাহিদা রয়েছে সারা দেশে। চলতি মৌসুমে জেলার পাঁচটি উপজেলার ৪৯ হাজার ১২২ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এক হাজার হেক্টর বেশি জমিতে এ শস্যের চাষ হয়েছে।
জেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, পানি না থাকায় কৃষকরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। জেলার নদী, মাছ চাষের পুকুর, খাল, বিলে, কোথাও পর্যাপ্ত পানি না থাকায় পাট জাগ দিতে পারছেন না তারা। কোনো উপায় না পেয়ে পাট কেটে খেতেই পেয়ে রাখছেন তারা। অনেকে বন্যার পানির আশায় পাট না কেটে রেখে দিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ পর্যাপ্ত পানি না পেয়ে নিচু জায়গায় জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে জাগ দিচ্ছেন।
এবার পাটের ফলন ভালো হলেও পর্যাপ্ত পানির অভাবে আঁশে কালো বর্ণ ধারণ করেছে। কিছু কিছু জায়গায় পাট ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছে। এতে এ শস্যের বাজারমূল্য অনেক কম হবে বলে আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।
সরেজমিনে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার বিভিন্ন মাঠে গিয়ে দেখা যায়, বেশির ভাগ জমির পাট কাটা শুরু হয়েছে। বৃষ্টি না হওয়ায় মাঠে পানি নেই। জমি থেকে নদী বা খালের দূরত্ব অনেক। যে কারণে সেখানে পাট নেওয়া কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। অনেকে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে ঘোড়ার গাড়ি, নছিমন ও ভ্যানে বোঝাই করে নদী বা খালে নিয়ে পাট জাগ দিচ্ছেন।
কিছু কিছু জমির পাট কেটে মাথায় করে খালে, বাড়ির পুকুরে জাগ দিচ্ছেন কৃষকরা। জমি থেকে পাট দূরে নিয়ে জাগ দেওয়ার কারণে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
নারুয়া ইউনিয়নের সাবের আলী নামে এক কৃষক জানান, এ বছর বৃষ্টির পরিমাণ কম, আষাঢ় মাস শেষ হয়ে গেছে। এখনও কোথাও পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি নেই। বানের পানির আশায় আছি। খালে সামান্য বৃষ্টির পানি জমছে সেখানে পাট জাগে ফেলতে হচ্ছে। প্রয়োজনীয় পানির অভাবে আঁশ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।
সদর উপজেলা বানীবহ ইউনিয়নের মিঠু সরদার নামে অপর কৃষক জানান, পাট চাষে কোনো লাভ নেই। অনেক খরচে জমি প্রস্তুত করা, বীজ বপন, সেচ দেওয়া, সার দেওয়া, আগাছা পরিষ্কার করা, পাট কাটা, জাগ দেওয়া ও পাট ধোয়া পর্যন্ত যে খরচ হয়, হিসাব করলে কৃষকদের লোকসান ছাড়া লাভ হয় না।
পাট চাষি আবুল হোসেন জানান, এ বছর রাজবাড়ীতে পাটের স্বাভাবিক ফলন হয়েছে। বাজার দর ভালো, কিন্তু পানি না থাকায় পাট কাটা সম্ভব হচ্ছে না। জমি থেকে বিভিন্ন পুকুরে পাট জাগ দেওয়ার কারণ মাছ মারা যাচ্ছে। এ বছর রাজবাড়ীতে (২২ শতাংশ) একপাখি জমিতে ৬ থেকে ৮ মণ পর্যন্ত ফলনের আশা করা হচ্ছে।
জেলা পাট অধিদপ্তরের পরিদর্শক মো. হারুন অর রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে পাট পচানোর আধুনিক কোনো ব্যবস্থা হাতে নেই। স্লুইসগেটের ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান হতে পারে।
রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এসএম শহীদ নূর আকবর বাংলানিউজকে বলেন, খালে বিলে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় কৃষকরা পাট জাগ দেওয়া নিয়ে কিছুটা সমস্যায় পড়েছেন। কৃষকদের পাট উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। ভালো দাম না পেলে কৃষককে লোকসান গুনতে হবে। সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময় : ১৫২৪ ঘণ্টা, ২৩ জুলাই, ২০২২
এমজে