ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই পাবিপ্রবির নির্মাণ কাজে, ঝরেছে প্রাণ

ডিষ্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২২
নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই পাবিপ্রবির নির্মাণ কাজে, ঝরেছে প্রাণ

পাবনা: পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) অ্যাকাডেমিক, প্রশাসনিক, আবাসিক হলসহ বেশ কয়েকটি ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। নির্মাণাধীন এসব ৮/১০ তলা বহুতল ভবনগুলোর কাজ করা শ্রমিকের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই বলে অভিযোগ উঠেছে।

এখন পর্যন্ত দুই নির্মাণ শ্রমিক নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজ করা ঠিকাদারি সংস্থাগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।

জানা গেছে, গত ১৭ সেপ্টেম্বর হাফিজুর রহমান নামে এক নির্মাণ শ্রমিক অ্যাকাডেমিক ভবনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়া কাজ করছিলেন। হঠাৎ ভবন থেকে পড়ে গিয়ে তিনি মারাত্মক আহত হন। পরে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে হাসপাতালের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। গত ২৫ সেপ্টেম্বর ছাত্রদের জন্য নির্মাণাধীন ১০ তলা হলের ওপর থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয় নুর আলম নামে আরেক নির্মাণ শ্রমিকের।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বহুতল ভবন নির্মাণে যেসব সেফটি কোড আছে তার অধিকাংশই মানছে না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে করে প্রায় সময় দুর্ঘটনা ঘটছে। বহুতল ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে নির্মাণাধীন বিল্ডিং নেট দিয়ে ঢেকে দেওয়ার কথা থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা মানা হচ্ছে না। নির্মাণাধীন বিল্ডিংয়ের চারপাশে ‘সেফটি ফাস্ট’ লেখা বাউন্ডারি রাখার কথা থাকলেও সেটি নেই।

সাটারিংয়ের খুঁটি লোহার হওয়ার কথা থাকলেও তা নেই। ঠিকাদাররা বাঁশের ওপর হলুদ রং লাগিয়ে খুঁটিগুলো মেটালের বলে চালিয়ে দিচ্ছেন। আবার সাটারিং খোলার সময় বাউন্ডারি লাইন দেওয়ার কথা থাকলেও সেটি মানছে না বেশির ভাগ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সাটারিং খোলার পুরা জায়গাটুকুও টিন দিয়ে ঢেকে দেওয়া হচ্ছে না। এতে করে মৃত্যু ঝুঁকিতে রয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী, পথচারী ও নির্মাণ শ্রমিকরা। এসব ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা কোনো জবাব দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেন না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, নির্মাণাধীন বিল্ডিং থেকে যাতে কোনো কিছু নিচে পড়ে কেউ হতাহত না হন, এ জন্য নেট দিয়ে ঢেকে দেওয়াসহ অন্যান্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখার কথা। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন অধিকাংশ ভবনে তা নেই। আমরা ক্লাস করার সময় ছোট ছোট ইটের টুকরা এসে গায়ে পড়ার সম্ভাবনা আছে। এ ছাড়া যেকোনো সময় যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটনার সম্ভাবনাও ব্যাপক।

এছাড়া, কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যেখানে সেখানে নির্মাণ সামগ্রী রেখে কাজ করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের হাঁটার জায়গার মধ্যেই রড এবং অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রী রাখা হয়েছে। রডগুলোর মুখে প্লাস্টিকের ক্যাপ থাকার কথা থাকলেও সেটা নেই। হাঁটার সময় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সেটির দায়ভার কে নেবে?ৎ

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, চলমান প্রকল্পে শ্রমিকরা নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়েই কাজ করছে। তাদের মাথায় হেলমেট, পায়ে গাম বুট, কোমরে সেফটি লাইন নেই। রাতে কাজ করার সময় ফ্লোরসেন্টযুক্ত সেফটি জ্যাকেট থাকার কথা থাকলেও শ্রমিকদের গায়ে সেটি নেই।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলেছেন, এ ধরনের ঘটনা অনেক আগে থেকেই ঘটে আসছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো প্রকল্প পরিচালকের দপ্তরের সহযোগিতায় এসব ঘটনা ধামাচাপা দিয়ে দেয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর চাপের ভয়ে নিরাপত্তাজনিত বিষয়গুলো নিয়ে কেউ কথা বলছেন না।

নিহত নূর আলমের নির্মাণাধীন ভবনের ঠিকাদার উজ্জ্বল হোসেন। তার নিহত হওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে উজ্জ্বল বলেন, সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে অসাবধানতাবসত নূর আলম পড়ে গিয়ে মারা গেছেন। নির্মাণকাজে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলেও তিনি দাবি করেছেন।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) জি এম আজিজুর রহমান বলেন, আমরা আমাদের জায়গা থেকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিরাপত্তাজনিত বিষয়গুলো মেনে চলার জন্য সবসময় বলেছি। প্রকল্প পরিচালকের দপ্তর থেকে অনেকবার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে পথচারী এবং শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়গুলো মেনে চলার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। আমরা তাদের লিখিত এবং মৌখিক দুভাবেই বলেছি। কিন্তু তারা কয়েকদিন নিরাপত্তার বিষয়গুলো মানে, তারপর থেকে আর কোনো ব্যবস্থা দেখা যায় না। এতে কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে।

বারবার চিঠি দেওয়ার পরও নির্দেশ অমান্য করা কেন হচ্ছে বা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে কেন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, সে ব্যাপারে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি এ প্রকল্প পরিচালক।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. হাফিজা খাতুন বলেন, শ্রমিকদের মৃত্যু দুঃখজনক। নিরাপত্তার আরেকটু শক্ত হওয়ার দরকার ছিল- এটাতে কোনো সন্দেহ নেই। সেইসব বিষয় নিয়ে ইতোমধ্যেই প্রকল্প পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের আমরা নির্দেশনা দিয়েছে। যদিও ঠিকাদারদের দেখার কথা। কিন্তু সেটা ঠিক মতো হয়তো হচ্ছে না। কাজের নিরাপত্তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে অ্যাম্বুলেন্সসহ যতটুকু ব্যবস্থা করে দেওয়ার দরকার সেটা দিয়েছি। আর ভবিষ্যতে যাতে শ্রমিকদের মৃত্যুর কোনো ঘটনা না ঘটে সে ব্যবস্থা নিতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২২
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ