ঢাকা, শনিবার, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১১ মে ২০২৪, ০২ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

‌‘বিএনপি নেতা কামালের দেহে ২৫ ছুরিকাঘাত’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০২২
‌‘বিএনপি নেতা কামালের দেহে ২৫ ছুরিকাঘাত’ কামালের জানাজায় জনতার ভিড়।

সিলেট: অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই সিলেট বিএনপির নেতা আ ফ ম কামালের মৃত্যু হয়েছে। দুর্বৃত্তরা তার দেহে ২৫টি ছুরিকাঘাত করেছে।

এরম ধ্যে বুকের বাম পাশের আঘাতটি বেশি গুরুতর। ওই একটি আঘাতই মৃত্যু নিশ্চিতের জন্য যথেষ্ট বলে জানিয়েছেন ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকও।  

আর তাকে যেভাবে হত্যার ধরন দেখে পুলিশ আঁচ করতে পেরেছে ‘প্রশিক্ষিত’ খুনিরা মিশনে অংশ নেয়। খুনের মিশনে দুই মোটরসাইকেলে ৫ জন কিলিং মিশনে অংশ নেয় বলেও জানিয়েছে পুলিশ।  

রোববার (৬ নভেম্বর) রাত ৯টায় আফম কামাল প্রাইভেটকারে চালকের আসনে বসা ছিলেন। তাকে পেছন থেকে একটি মোটরসাইকেলে ৩ জন যুবক নজরদারি করে নিয়ে আসছিল।

ঘটনাস্থল সিলেট সিটি করপোরেশনের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বড়বাজার এলাকায় পৌঁছালে সামনে থেকে আসা দুই যুবক মোটরসাইকেল গাড়ির সামনে ফেলে দেয়। তাতে প্রাইভেটকারের গতিরোধ করলে ড্রাইভিং সিটে বসা কামালের বুকে ও হাতে ছুরিকাঘাত করে। দুর্বুত্তরা গাড়ির এক পাশ আটকিয়ে পেছনের সিটে বসেও তাকে ছুরিকাঘাত করে, এমনটি ধারণা পুলিশের।  

এ সময় দুর্ঘটনা ভেবে প্রাইভেটকারের সামনে পড়া মোটরসাইকেলটি জনতার সহায়তায় তুলে নিয়ে দুর্বৃত্তরা ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়ে। প্রথমে লোকজন এটিকে দুর্ঘটনা মনে করলেও পরক্ষণে বুঝতে পারেন ঘটনাটি ছিল হত্যাকাণ্ড।  

সোমবার (৭ নভেম্বর) দুপুর ২টার দিকে কামালের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। এরপর মরদেহ স্বজনরা দাফনের জন্য গ্রামের বাড়ি সিলেট সদর উপজেলার জালালাবাদ থানাধীন আলীনগর পালপুরে নিয়ে যান।  

সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের অধ্যাপক ডা. সামসুল ইসলাম বলেন, নিহতের দেহে ২৫টি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এরমধ্যে বুকের বাম পাশের ধারালো অস্ত্রের আঘাতটি ছিল গুরুতর। এই আঘাতটি হৃদপিণ্ড ফুটো করে দেয়। এই একটি আঘাতেই মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট। এছাড়া বাম হাতে ও পায়ে অধিক আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়।  

সিলেট মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ বলেন, ময়নাতদন্তে আ ফ ম কামালের দেহে ২৫টি আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। এরমধ্যে বুকের বাম পাশের আঘাতটি গুরুতর ছিল।  

এয়ারপোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খান মো. মাইনুল জাকির বলেন, খুনিরা গাড়ির একপাশের দরজা আটকিয়ে রাখে। অন্যপাশ দিয়ে ঢুকে মিনিট খানেকের মধ্যেই হত্যাকাণ্ড সংগঠিত করেছে, এমনটি মনে হচ্ছে। আর গাড়ির সামনে পড়া মোটরসাইকেলটিও দুর্ঘটনাকবলিত ভেবে জনতার সহায়তায় তুলে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।  

তিনি বলেন, ময়নাতদন্ত শেষে সোমবার দুপুর ২টার দিকে নিহতের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে হত্যাকাণ্ডে রাতেও মামলা হয়নি। তবে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের পুলিশ শনাক্ত করতে পেরেছে পুলিশ। তাদের খুব দ্রুত গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।  

এদিকে হত্যাকাণ্ডের পর রাতে নগরজুড়ে তাণ্ডবলীলা চালিয়েছেন বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মী-সমর্থকরা। তারা ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি রিকাবিবাজার এসে মহানগর আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভায় ভাঙচুর ও ব্যানার-ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলে। এসময় একটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ ও প্রাইভেটকারে ভাঙচুর চালায়। তাৎক্ষণিক পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পরক্ষণে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরাও রাস্তায় নেমে আসেন।  

তবে সোমবার রাত ১২টা পর্যন্ত এ ঘটনায়ও মামলা হয়নি জানিয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলী মাহমুদ বলেন, বিএনপির তাণ্ডবের ঘটনায় রাতেই পৃথক দু’টি মামলা হতে পারে। এর একটি পুলিশ বাদী হয়ে এবং অন্যটি আওয়ামী লীগের তরফ থেকে করা হতে পারে। এছাড়া তাণ্ডবের ঘটনায় ৪ জনকে আটক করা হয়েছে।  

এদিকে সোমবার বাদ এশা মরহুমের গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলা আলী নগর গ্রামে জানাজার পর মরদেহ দাফন করা হয়। জানাজায় বিএনপির নেতাকর্মীরা অংশ নেন।

নিহত আ ফ ম কামাল (৪২) সিলেট সদর উপজেলার জালালাবাদ থানাধীন আলীনগর পালপুরের মৃত বাদশা মিয়ার ছেলে ও নগরের বালুচর এলাকার বাসিন্দা। তিনি সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ও সিলেট আইন কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক জিএস ছিলেন। এক সময় তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য মিজানুর রহমান মিজানের অনুসারী ছিলেন।  

রোববার রাত ৯টার দিকে সিলেট-এয়ারপোর্ট সড়কের খাসদবির সংলগ্ন বড় বাজার সড়কে আ ফ ম কামালকে গাড়িতে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। পুলিশের ধারণা অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব সংঘাতের কারণে কিংবা ব্যবসায়িক বিরোধে খুন হতে পারেন আ ফ ম কামাল।  

তবে বিএনপির নেতারা বলছেন, আ ফ ম কামালকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যার পেছনে সরকার দলীয় ‘সন্ত্রাসী’ নেতাকর্মীরা জড়িত রয়েছেন। অবিলম্বে তাদের গ্রেফতার দাবি জানান তারা।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০২২
এনইউ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।