ঢাকা, সোমবার, ২৯ পৌষ ১৪৩১, ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২ রজব ১৪৪৬

মুক্তমত

পরবর্তী লক্ষ্য হওয়া উচিত কল্যাণকর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা

তিহামী আহমেদ  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০২৫
পরবর্তী লক্ষ্য হওয়া উচিত কল্যাণকর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলন একটি নতুন বাংলাদেশের সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। এই বিপ্লব একদিকে যেমন বিগত সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ছিল, তেমনি এটি ছিল জনমনে বিপুল প্রত্যাশা জাগানোরও।

ছাত্রসমাজ, যারা দেশের ভবিষ্যৎ, নিজেদের অধিকার আদায়ে পথে নেমে এসেছে। তাদের এই বিপ্লবের মাধ্যমে দেশবাসী নতুন একটা সম্ভাবনার আলো দেখতে পেয়েছে।

এই আন্দোলনে দেশে প্রথমবারের মতো যোগ্য, প্রাজ্ঞ ব্যক্তিত্বের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়, যার নেতৃত্বে রয়েছেন বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্ব ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁকবদল। এই আন্দোলনের ফলে বাংলাদেশ প্রবীণ নেতৃত্বের তুলনায় নবীন নেতৃত্বের প্রতি অনেক বেশি আস্থাশীল। নতুন প্রজন্মের চিন্তা-ভাবনা স্পষ্ট, প্রখর ও আধুনিক। তারা দেশের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় যোগ্য।  

জুলাই মাসে ছাত্রদের আন্দোলন ছিল আচমকা ‘কোটা আন্দোলন’ এবং পরে হাসিনা সরকারের পদত্যাগ এবং রাষ্ট্র সংস্কারের আন্দোলন। ছাত্ররা এই আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচারী সরকার এবং রাষ্ট্রের ভুল নীতির বিরুদ্ধে তাদের প্রতিবাদ প্রকাশ করেছে। এ সময় জাতীয় চেতনা জাগ্রত হয়েছিল এবং জনগণ অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের ওপর আস্থা রাখেনি।

তবে আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে কিছু সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ সামনে এসেছে। প্রথমত, দেশে ‘মব জাস্টিস’-এর ঘটনা বেড়ে গেছে, যা আইন ও প্রশাসনের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতার ইঙ্গিত দেয়। গণতান্ত্রিক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা আরো প্রকট হয়েছে। ছাত্রদের মধ্যে যাঁরা সফলভাবে আন্দোলন পরিচালনা করেছেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেই বর্তমানে রাজনৈতিকভাবে অস্থিরতা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে অনেক মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।

দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের কথা বলা হলেও সামাজিক বৈষম্য ও রাজনৈতিক অস্থিরতা রয়ে গেছে। সংখ্যালঘুদের প্রতি যেকোনো ধরনের সহিংসতা ও বৈষম্য রোধে আইন প্রণয়ন এবং তার কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। শুধু মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা নয়, বরং সামাজিক শৃঙ্খলা ও শান্তি বজায় রাখতে এমন পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। রাষ্ট্রের এই পদক্ষেপগুলোর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার জন্য নাগরিক সমাজের অংশগ্রহণ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা প্রয়োজন।

এখানে আমাদের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন হলো সংস্কার। রাষ্ট্র সংস্কার ও ন্যায়বিচারের বিষয়গুলো দ্রুত কার্যকর করা উচিত। ছাত্রদের আন্দোলনকে রাষ্ট্রীয় নীতির প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এই পরিবর্তনগুলো যদি দ্রুত বাস্তবায়িত হয় তাহলে দেশের সার্বিক অবস্থার উন্নতি সম্ভব। দেশের আইনি কাঠামোতে আধুনিকীকরণের পাশাপাশি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সংস্কার এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা কমানো অত্যন্ত জরুরি।

দেশে নতুন নেতৃত্ব ও সুশাসনের প্রত্যাশা সবার। তবে এই নেতৃত্ব রাতারাতি তৈরি হবে না, এটি একটি দীর্ঘস্থায়ী প্রচেষ্টার বিষয়। এর জন্য একটি স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ নির্বাচন অপরিহার্য, যেখানে জনগণ তাদের সরকার নির্বাচন করতে পারবে। যারা পরিবর্তন চায়, তাদের উচিত ক্ষমতার জাল ছিঁড়ে ফেলা এবং সমাজের সব অংশের মধ্যে সুবিচার প্রতিষ্ঠা করা।

বাংলাদেশের তরুণরা বুঝতে পেরেছে, সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনীতি চর্চা ও রাজনৈতিক পরিবেশের সুষ্ঠু উন্নয়ন প্রয়োজন। এটি শুধু তরুণদের চিন্তার উদ্দীপনা নয়, বরং পুরো জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি আন্দোলন হয়ে উঠেছে। সর্বোপরি, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সব পক্ষকে একত্রিত হয়ে কাজ করতে হবে, যেন রাষ্ট্রদ্রোহী শক্তিগুলোকে প্রতিহত করা সম্ভব হয় এবং দেশ নিরাপদ থাকে।

তিহামী আহমেদ, দ্বিতীয় বর্ষ, প্রথম সেমিস্টার লোকপ্রসাশন বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি)

বাংলাদেশ সময়: ১০১২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০২৫
আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।