ঢাকা, সোমবার, ২৯ পৌষ ১৪৩১, ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২ রজব ১৪৪৬

মুক্তমত

দলীয়করণ নীতির অবসান ঘটাতে হবে

ফৌজিয়া নৌরিন  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০২৫
দলীয়করণ নীতির অবসান ঘটাতে হবে ফৌজিয়া নৌরিন 

একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সর্বোত্তম ব্যবস্থার চিত্র এমন হতে পারে, যেখানে রাষ্ট্রের প্রতিটি অংশ স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক এবং একই সঙ্গে জনগণের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অংশগ্রহণ তথা মতামতের ভিত্তিতে পরিচালিত হবে।  

এমন একটি রাষ্ট্র চাই, যেখানে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মধ্যে সততা, যোগ্যতা ও দেশপ্রেম থাকবে এবং একই সঙ্গে থাকবে অবাধ, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ নির্বাচনী ব্যবস্থা।

এ রকম রাষ্ট্রব্যবস্থা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের নীতিগত ভিত্তি, কার্যকর কাঠামো এবং এর সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট বহুমাত্রিকভাবে মূল্যায়ন করতে হবে।

গণতন্ত্রের আদর্শ ও বাস্তব গণতন্ত্র—এই দুইয়ের মধ্যে একটা ফাঁক রয়েছে, যা পূরণ করা বর্তমান রাষ্ট্রের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

তবু এমন একটি রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখি, যেখানে ধর্ম ও গণতন্ত্র সহাবস্থানে থাকবে। এটি তখনই সম্ভব হবে, যখন ধর্মকে রাষ্ট্রীয় নীতি থেকে পৃথক রাখা যাবে। রাষ্ট্রকে সর্বোত্তমরূপে প্রতিষ্ঠা করতে হলে শুধু রাজনৈতিক প্রক্রিয়া নয়, একে একটি সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে পরিণত করতে হবে। এটি তখনই সম্ভব, যখন রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তর তথা নাগরিক, প্রশাসন, রাজনৈতিক দল ও আন্তর্জাতিক অংশীদাররা একসঙ্গে কাজ করবে।

জুলাই বিপ্লবের পর বাংলাদেশকে নতুনভাবে ঢেলে সাজানোর দ্বার উন্মোচন হয়েছে। দেশে সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় রয়েছে রাজনৈতিক পরিবেশ। রাজনৈতিক দলগুলোর দলীয়করণ নীতির অবসান ঘটাতে হবে। প্রশাসন, শিক্ষা ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে দলীয় নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত করতে হবে।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে উন্মুক্ত সংলাপের সংস্কৃতি চালু করলে আমাদের প্রত্যাশিত স্বপ্নের বাংলাদেশ দেখতে পাব বলে আশা করা যায়।

বিপ্লবোত্তর নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে প্রতিটি সেক্টরে পরিবর্তন আনা জরুরি। বাংলাদেশের রাজনীতিতে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আনতে হলে এর মূল কাঠামো, প্রক্রিয়া ও সংস্কৃতিতে ব্যাপক পরিবর্তন প্রয়োজন। মূলত দলকেন্দ্রিক ও ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতির অসহিষ্ণুতা, সহিংসতা বন্ধ করে সংলাপ ও সহনশীলতার সংস্কৃতি চালু করার মাধ্যমে পরিবর্তন আনা অত্যাবশ্যক। সেই সঙ্গে লক্ষণীয়, যেখানে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতাই প্রশ্নবিদ্ধ, সেখানে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সংস্কার তীব্রভাবে প্রয়োজন।

নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীন, শক্তিশালী ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে সাংবিধানিকভাবে সুরক্ষা দিয়ে আইন সংস্কার করতে হবে। পরিবর্তনের জোয়ারে অন্যতম সংস্কারের জায়গা হলো আর্থিক সচ্ছলতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের দ্বারা রাজনীতির বাণিজ্যিকীকরণ বন্ধ করা। প্রভাবশালী ও ধনী ব্যক্তিদের আর্থিক ক্ষমতায়নের যে অযাচিত দৌরাত্ম্য, তা রুখতে রাজনৈতিক দলগুলোকেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনে আইন প্রণয়ন করে এই জায়গাটা সংস্কার করা উচিত বলে মনে করি। এ ছাড়া আরো অনেক অনেক পরিবর্তন প্রয়োজন, তবে এই পরিবর্তনগুলো শুধু রাজনৈতিক দল নয়; নাগরিক, সুধীসমাজ ও প্রশাসনিক কাঠামোর সম্মিলিত উদ্যোগে বাস্তবায়ন করতে হবে। পরিবর্তন ধীরে ধীরে আসবে, তবে তা সঠিক পথে পরিচালিত হলে একটি ন্যায়ভিত্তিক ও উন্নত বাংলাদেশ নিশ্চিত করা সম্ভব।

ফৌজিয়া নৌরিন, শিক্ষার্থী, সমাজকর্ম বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশ সময়: ১০১৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০২৫

আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।