ঢাকা: সরকারবিরোধী আন্দোলনকে জোরালো ও দলকে চাঙ্গা করতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে বিএনপি। বিশেষ করে সংগঠনকে বেশি চাঙ্গা করতে কাজ করছে দলটির নীতিনির্ধারণী ফোরাম।
তাই আন্দোলনের হতাশা কাটিয়ে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে চায় দলটি।
এজন্য সক্রিয় নেতাকর্মীদের দিয়ে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো ঢেলে সাজানোর কাজ চলছে। তারই অংশ হিসাবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি বিএনপিতে তিন নেতাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কমিটি পুনর্গঠনের বিষয়ে দলের শীর্ষ পর্যায়ে আলোচনা চলছে। দলের বিভিন্ন পদে আসছে বড় রদবদল।
কোনো কারণে কাউন্সিল না হলেও শূন্য পদগুলো পূর্ণ করা হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন দলের শীর্ষ নেতারা। মহাসচিব পদের পরিবর্তনের বিষয়েও নানা গুঞ্জন রয়েছে দলটির অভ্যন্তরে।
বিএনপি সূত্র জানায়, দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিদেশে থাকায় এ মুহূর্তে কোনো কারণে কাউন্সিল করা সম্ভব না হলেও শূন্য পদগুলো পূর্ণ করা হবে। দলের মূল নেতৃত্ব জিয়া পরিবারের মধ্যেই থাকবে।
জানা গেছে, বিএনপির সর্বশেষ জাতীয় নির্বাহী কমিটির ষষ্ঠ কাউন্সিল হয় ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ। দলটির গঠনতন্ত্রে বলা আছে জাতীয় কাউন্সিলে তিন বছরের জন্য দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটি নির্বাচিত হবে। কিন্তু তিন বছরের কমিটিতে আট বছর কেটে গেছে। এর মধ্যে হয়নি একটি কাউন্সিলও।
এদিকে, বিএনপির নতুন মহাসচিবের বিষয়ে বেশ কয়েকজনের বিষয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। এদের মধ্যে, মহাসচিব পদে রয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
অবিভক্ত ঢাকার সাবেক মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। আগামী দিনে আন্দোলন সংগ্রামে ঢাকায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবেন বলে মনে করা হচ্ছে। এজন্যই তাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
এছাড়া মহাসচিব পদে আলোচনায় রয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ। যদিও তিনি ১০ বছর ধরে ভারতে অবস্থান করছেন। কিন্তু তিনি জিয়া পরিবারের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত।
বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির মোট সদস্য সংখ্যা ১৯ জন। ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল শেষে ১৭ জনের নাম ঘোষণা করা হয়।
এর পর ২০১৯ সালে বেগম সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে স্থায়ী কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
এ পর্যন্ত মৃত্যু এবং অবসর জনিত কারণে পাঁচটি পদ শূন্য রয়েছে। সেই হিসাবে এখন সদস্য সংখ্যা ১৪ জন।
সক্রিয়দের মধ্যে কেবল মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আব্দুল মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান ও বেগম সেলিমা রহমান রয়েছেন।
দেশের বাইরে রয়েছেন ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও সালাহউদ্দিন আহমেদ।
জানা গেছে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উপস্থিতি কখনোই ৮ থেকে ১০ জনের বেশি সদস্য থাকেন না। কমিটিতে থাকলেও বার্ধক্য, অসুস্থতাসহ নানা কারণে কয়েকজন নেতাকে কখনো বৈঠকে পাওয়া যায় না।
সূত্র জানায়, বার্ধক্য ও অসুস্থতার কারণে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, রফিকুল ইসলাম মিয়া ও জমির উদ্দিন সরকারকে স্থায়ী কমিটির পদ থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য করা হবে।
অপরদিকে, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, আব্দুল্লাহ আল নোমান, মোহম্মদ শাহজাহান, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আযম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মজিবুর রহমান সারোয়ার, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিমকোর্টে আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্থায়ী কমিটিতে যুক্ত হচ্ছেন বলে আলোচনায় রয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছিুক বিএনপি চেয়ারপারসনের এক উপদেষ্টা বাংলানিউজকে বলেন, যে কোনো রাজনৈতিক দলের কাউন্সিল বা পুনর্গঠন একটি চলমান প্রক্রিয়া। তবে বিএনপির কাউন্সিল না হলেও দল পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, বিএনপির শীর্ষ স্থানীয় পদগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি খালি রয়েছে। সেগুলো পূরণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সে ক্ষেত্রে আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে ভূমিকা রাখতে পারবে সে বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হবে।
এদিকে, সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে সাংবাদিকদের বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দলের হাইকমান্ডের সঙ্গে কথা বলে এবং দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেখে রাজনীতিতে সক্রিয় ও কর্মসূচিতে অংশ নেব।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৯ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০২৪
টিএ/এসএএইচ