জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা না করলে মুক্তিযুদ্ধ আদৌ শুরু হতো কি না, তা নিয়েই সন্দেহ রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
রোববার (১ জুন) সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ (বিএসপিপি) আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যখন নির্বিচারে গণহত্যা চালায়, তখন দেশের শীর্ষ নেতারা কেউ আত্মসমর্পণ করেন, কেউ সীমান্ত পার হয়ে যান। সেই সময়ে একজন পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা হিসেবেও মেজর জিয়াউর রহমানই প্রথম বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ২৬ মার্চ কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে তিনি স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ”
তিনি আরও বলেন, “বিশ্বের বিশ্লেষকরাও স্বীকার করেন—সেদিন জিয়া না থাকলে, মুক্তিযুদ্ধ আদৌ শুরু হতো কি না, তা নিয়েই সন্দেহ রয়েছে। ”
গত ১৬-১৭ বছরে বিএনপির ওপর চলমান দমন-পীড়নের প্রসঙ্গ তুলে ড. মোশাররফ বলেন, “এত নির্যাতনের পরও বিএনপিকে দুর্বল করা যায়নি। আন্দোলনের মাধ্যমে টিকে থাকা এই দলই এখন দেশের সর্বোচ্চ জনপ্রিয় রাজনৈতিক শক্তি। ”
তিনি দ্রুত একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “নির্বাচন বিলম্বিত হলে দেশের পরিস্থিতি আরও জটিল হবে। ডিসেম্বরে নির্বাচন না হলে রমজান, এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষা ও বর্ষাকালের কারণে ভোট আয়োজন কঠিন হয়ে পড়বে। ”
সভায় অংশ নিয়ে চিত্রনায়ক আশরাফ উদ্দিন আহমেদ উজ্জ্বল বলেন, “জিয়াউর রহমান সবসময় পেশাজীবীদের গুরুত্ব দিতেন। বঙ্গভবনের দরজা তাদের জন্য সবসময় খোলা ছিল। আজও পেশাজীবীদের ঐক্যবদ্ধ থেকে যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে হবে। ”
বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক সেলিম ভূঁইয়া বলেন, “শহীদ জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্র পরিচালনা আমাদের জন্য অনুসরণীয়। ৫ আগস্টের পর বিএনপির আন্দোলনের কারণে দেশে বড় কোনো জানমালের ক্ষতি হয়নি। অথচ কিছু গোষ্ঠী নতুন নতুন দল বানিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। ড. ইউনূসের ‘কচিকাঁচার মেলা’ তার জনপ্রিয়তাকেই তলানিতে ঠেলে দিয়েছে। ”
বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্যসচিব, সাংবাদিক নেতা ও আলোচনা সভার সঞ্চালক কাদের গনি চৌধুরী বলেন, “গত ৫৪ বছরে জিয়াউর রহমানই বাংলাদেশের একমাত্র স্টেটসম্যান। তার সততা ও দেশপ্রেম এমন পর্যায়ে ছিল, যার বিরুদ্ধে শত্রুরাও দুর্নীতির অভিযোগ আনতে পারেনি। মাত্র ৪৫ বছরের জীবনে তিনি যা অর্জন করেছেন, তা ইতিহাসে বিরল উদাহরণ। ”
আলোচনা সভার সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, “জিয়াউর রহমান ছিলেন দেশপ্রেমিক রাষ্ট্রনায়ক। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। তিনি একটি আধুনিক বাংলাদেশের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে গেছেন। ”
তিনি অভিযোগ করেন, “বিএনপিকে ধ্বংস করতে বারবার দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র হয়েছে এবং এখনো চলছে। কিন্তু বিএনপির নেত্রী পালিয়ে যাননি, আপস করেননি। এই দলের নেতা দূরদেশ থেকেও জনগণকে সংগঠিত করছেন। বিএনপির বিরুদ্ধে প্রতিহিংসা দিয়ে কিছু হবে না। ”
ডা. জাহিদ হোসেন আরও বলেন, “এক সময় বলা হয়েছিল বিএনপি ১০টি সিটও পাবে না, কিন্তু জনগণের রায়ে তারাই দেশ চালিয়েছে। তাই নির্বাচন নিয়ে রাজনীতি না করে, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হোক। ”
আলোচনা সভায় বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধি ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা উপস্থিত থেকে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার রাজনৈতিক জীবন ও অবদানের নানা দিক নিয়ে আলোকপাত করেন।
এসবিডব্লিউ/এমজেএফ