ঢাকা: সরকারি পাটকলগুলো বন্ধ, স্বাস্থ্য খাতে অনিয়ম, দুর্নীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের বর্তমান অবস্থান নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে অসন্তোষ ও ক্ষোভ বাড়ছে। সরকার রাজনীতি থেকে সরে গিয়ে আমলা ও প্রশাসননির্ভর হয়ে পড়েছে বলে শরিক দলগুলোর নেতাদের অভিযোগ।
সম্প্রতি সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত ২৫টি পাটকল বন্ধ করে দিয়েছে। এটা ১৪ দলের নীতির বিপরীত বলে তারা জানিয়েছেন। করোনা ভাইরাসের কারণে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে দেশের স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন খাতে অনিয়ম রয়েছে। এই বিষয়গুলা ১৪ দলের জন্য অস্বস্তিকর বলেও তারা মনে করছেন। এতে জোট শরিকদের মধ্যে অসন্তোষ ও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। বিষয়গুলা নিয়ে জোট নেতারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলতে চান।
১৪ দলের শরিক দলগুলোর নেতাদের অভিযোগ, সরকার আমলা ও প্রশাসননির্ভর হয়ে পড়েছে। আমলা ও প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের পরিকল্পনা অনুযায়ী সব কিছু পরিচালিত হচ্ছে। এখানে রাজনৈতিক এজেন্ডা ও প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে না। সরকার দেশ চালাচ্ছে আমলা ও প্রশাসন দিয়ে। সরকারের পরিকল্পনা প্রক্রিয়ার সঙ্গে রাজনীতিবিদদের যুক্ত করা হচ্ছে না। দেশ পরিচালনার কার্যক্রম থেকে রাজনীতিকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে। এর ফলে দুর্নীতি, লুটপাট বেড়েছে।
তাদের মতে, পাটকল বন্ধ করে যে পরিমাণ টাকা দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, এই টাকা দিয়ে এ খাতকে আধুনিকায়ন ও পাটকলগুলোকে যুগোপোযোগী করে লাভজনক করা সম্ভব। সেটা না করে সরকার আমলাদের কথায় পাটকলগুলো বন্ধ করে দিয়েছে, যেটা ১৪ দলের ২৩ দফা ও রাজনৈতিক অবস্থানের বিপরিতমুখী পদক্ষেপ। শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। এতে ১৪ দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।
তারা জানান, স্বাস্থ্য খাতসহ সরকারের বিভিন্ন খাতে নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি, অনিয়ম স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। মানুষ যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। করোনা পরীক্ষার নামে অনিয়ম আন্তর্জাতিকভাবে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। এই সার্বিক বিষয়গুলোর দায় শুধু আওয়ামী লীগ নয়, রাজনৈতিক জোট হিসেবে ১৪ দলের ওপরও এসে পড়ছে। জনগণের কাছে শরিক দলগুলোকে জবাবদিহি করতে হচ্ছে।
তাদের দাবি, এই সব অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও জনগণকে মাঠে নামাতে হবে। দেশকে বাঁচাতে হলে এর কোনো বিকল্প নেই। শুধু দু’একজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেই হবে না, দায়ী প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিতে হবে।
এ বিষয়ে ১৪ দলের অন্যতম নেতা এবং ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বাংলানিউজকে বলেন, পাটকল বন্ধ করা, স্বাস্থ্যখাতের সমস্যাসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে আমরা ১৪ দলের সঙ্গে কথা বলবো। দলগতভাবে আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও কথা বলবো। পাটকলগুলো বন্ধ করে দেওয়া হলো, এটা ১৪ দলের ২৩ দফা কর্মসূচির বিপরীত। শুধু তাই নয়, এ বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবস্থানেরও বিপরীত। স্বাস্থ্যখাতের যে সমস্যাগুলো তৈরি হয়েছে, এর জন্য দু’একজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেই হবে না, এর মূলের সমস্যাগুলো দূর করতে হবে। যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে।
বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরিফ নুরুল আম্বিয়া বাংলানিউজকে বলেন, পাটকলগুলো বন্ধ করা আওয়ামী লীগের অবস্থানের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। এটাকে কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। পাটকলে দুর্নীতির কথা বলা হয়েছে, দুর্নীতি কোথায় নেই? অনেক খাতেই বড় বড় দুর্নীতি লুটপাট হচ্ছে। স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি অনিয়ম সামলাতে সরকারকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আসলে দেশ আমলানির্ভর হয়ে পড়েছে। রাজনীতিকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে। আমলা ও প্রশাসনের কথায় দেশ চলছে। যার ফলে দুর্নীতি, লুটপাট হচ্ছে। দেশকে বাঁচাতে হলে এসবের বিরুদ্ধে রাজনীতি ও জনগণকে মাঠে নামিয়ে আনতে হবে।
ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ করা ১৪ দলের ২৩ দফা, এমনকি আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের সঙ্গেও সাংষর্ষিক। যে টাকা দিয়ে পাটকলগুলো বন্ধ করা হলো সেই টাকা দিয়ে পাটকলগুলো আধুনিকায়ন করে লাভজনক করা সম্ভব। বেসরকারি পাটকল যদি চলতে পারে সরকারি পাটকলগুলো কেন চলবে না। আমলাদের কথায় সব কিছু চলছে। যার ফলে দুর্নীতি হচ্ছে। স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি অনিয়ম বেরিয়ে আসছে। এসব বিষয় নিয়ে ১৪ দলের শরিকদেরকে মানুষের কাছে জবাবদিহি করতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৪ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০২০
এসকে/এজে