ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

‘খুনি মোশতাকের প্রেতাত্মা মেয়র আব্বাস’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০২১
‘খুনি মোশতাকের প্রেতাত্মা মেয়র আব্বাস’

রাজশাহী: বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপন নিয়ে কটূক্তির অডিও ফাঁসের পর রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলীকে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছে মহানগর আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি তাকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিও জানানো হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য তুলে ধরেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার। এতে বলা হয়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মেয়র আব্বাস আলীর কটূক্তি ও অবমাননাকর মন্তব্যে সারা দেশের মানুষের ন্যায় আমরা চরমভাবে মর্মাহত। তার ধৃষ্টতাপূর্ণ অশালীন মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে সংগঠনের পদ ও প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে আজীবন বহিষ্কারের পাশাপাশি গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি দেশের সুষ্ঠু রাজনীতির পরিবেশকে অস্থিতিশীল করবে উল্লেখ করে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতায় রাসিক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন রাজশাহীকে আধুনিক তিলোত্তমা নগরী হিসেবে গড়ে তুলার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নগরীর মূল প্রবেশদ্বারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল স্থাপনের পাশাপাশি সৌন্দর্য বর্ধনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালকে নিয়ে আব্বাস আলীর ঔদ্ধত্যপূর্ণ অবমাননাকর মন্তব্য জাতি সমর্থন করে না।

যখন বঙ্গবন্ধুর দর্শন নিয়ে সারা বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা পরিচালনা করছে, ঠিক সেই মুহূর্তে আওয়ামী লীগের ভিতরে ঘাপটি মেরে থাকা খুনি মোশতাকের প্রেতাত্মা আব্বাস আলীর এমন ঘৃণ্য মন্তব্য দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করবে। এটি রাজনৈতিক পরিবেশকে অস্থিতিশীল করাসহ দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও আওয়ামী লীগের ঐক্য বিনষ্ট করার অপচেষ্টার অংশ। এসব কুচক্রী ব্যক্তি ও গোষ্ঠির অশুভ তৎপরতা থেকে সতর্ক থাকার জন্য সংবাদ সম্মেলনে আহ্বান জানানো হয়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন- মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল, অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা, সৈয়দ শাহাদাত হোসেন বাদশা, যুগ্ম সম্পাদক আসাদুজ্জামান আজাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইসতিয়াক আহমেদ লিমন প্রমুখ।

এর আগে রাজশাহী মহানগরীর উপকণ্ঠে থাকা কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলী একটি ঘরোয়া বৈঠকে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কের কাটাখালী পৌরসভার অংশের উন্নয়নকাজ নিয়ে কথা বলার সময় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপন নিয়ে কটূক্তি করেন। এ ঘটনার অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁসের পর তিনিও ফেঁসে যান।

অডিওতে মেয়র বলেন, ‘একটু থাইমি গেছি গেটটা নিয়ে, একটু ডিজাইন চেঞ্জ করতে হচ্ছে। বড় হুজুরের সঙ্গে আমাদের এক লোক বসেছিলে, বসি যে ম্যুরালটা দিছে বঙ্গবন্ধুর, এটা ইসলামি শরীয়ত মোতাবেক সঠিক না। এজন্য আমি ওকে থুবো না। সব করব, যা কিছু আছে, খালি শেষ মাথাতে মানুষ যেটা মাইন্ড করবে না ওড্যাই। আমি দেখতে পাচ্ছি যে, ম্যুরালটি ঠিক হবে না দিলে। আমার পাপ হবে। তো কেন দিব? দিব না, আমি তো কানা লোক না, আমাক বুঝাই দিছে। এ জন্য আমি ওটাকে চেঞ্জ করছি। ’

সোমবার (২২ নভেম্বর) রাত থেকে মেয়র আব্বাসের এমন দুটি অডিও রেকর্ড ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুক ও ম্যাসেঞ্জারে। এরই মধ্যে দাবি উঠেছে গাজীপুরের মেয়রের মতো কাটাখালী পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থাসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার।

১ মিনিট ৫১ সেকেন্ডের অডিও ক্লিপটিতে মেয়র আব্বাসকে বলতে শোনা যায়, ‘ওই গেটটি দ্রুত নির্মাণ হবে। তবে আমরা যে ফার্মকে কাজটি দিয়েছি, তারা গেটের ওপরে বঙ্গববন্ধুর যে ম্যুরাল বসানোর ডিজাইন দিয়েছে, সেটি ইসলামি দৃষ্টিতে সঠিক না। তাই আমি সেটিকে বাদ দিতে বলেছি। ’

পৌর মেয়র বলেন, ‘যেভাবে বুঝেছে তাতে আমার মুনে হইছে যে, ম্যুরালটা হইলে আমার ভুল হয়্যা যাবে। এ জন্য চেঞ্জ করছি। এই খবরটাও যদি আবার যায় তো আবার রাজনীতি শুরু হয়ে যাবে। ওই বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল দিতে চাইয়া দিচ্ছে না! বঙ্গবন্ধুক খুশি করতে যাইয়া নারাজ করব নাকি? এইডা লিয়েও রাজনীতি করবে কিন্তু আমি সিওর। ’

আব্বাস আলী কাটাখালী পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক। ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে তিনি প্রথমবার মেয়র নির্বাচিত হন। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন।

আরও পড়ুন: 
মেয়রের অডিও ফাঁস, আন্দোলনে উত্তাল রাজশাহী
মেয়র আব্বাসের নামে ডিজিটাল আইনে মামলা 
মেয়র আব্বাসকে আ.লীগ থেকে অব্যাহতির সুপারিশ

বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০২১
এসএস/জেএইচটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।