ঢাকা: বিদেশে বিএনপির লবিস্ট নিয়োগের বিষয়টি মিথ্যা দাবি করে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বানোয়াট।
বুধবার (১৯ জানুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে শেরে বাংলানগরে জিয়াউর রহমানের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সাংবাদিকদের তিনি কথা বলেন।
ড. মোশাররফ বলেন, যখন আমেরিকা থেকে একটি সংস্থা এবং উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা এসেছে, যখন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক সামিটে দাওয়াত পায় না, তখন কিন্তু এই কথাগুলো উঠছে। আমাদের প্রশ্ন, আগে কেন এ কথা উঠলো না। আমরা কিছুদিন আগে থেকে পত্রিকায় দেখছি আওয়ামী লীগ এদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে, চুরি ডাকাতি করে অর্থ লুণ্ঠন করছে, এগুলো যাতে ধামাচাপা দেওয়া যায় সেজন্য বিদেশে তারা লবিস্ট নিয়োগ করেছে গত ১৪ বছর ধরে। এটা যখন পত্রিকায় বেড়িয়েছে তখন এই সরকার কতগুলো ভিত্তিহীন বানোয়াট ডকুমেন্ট দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য এ ধরনের কথা বলছে। এগুলো সম্পূর্ণ বানোয়াট। আমাদের বক্তব্য পূর্ণাঙ্গভাবে একটি প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে জানাবো।
তিনি বলেন, আজকে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এখানে ফাতেহা পাঠ ও শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ১৫ মার্চ কালরাতে যখন গণহত্যা শুরু করেছিল তখন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তৎকালীন মেজর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে রিভল্ট করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শেষে তিনি বীর উত্তম উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ক্ষমতায় এসে এদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। এর আগে দেশে বাকশাল ছিল। বাকশালের হাত থেকে দেশকে বহুদলীয় গণতন্ত্র দিয়েছেন। তিনি আধুনিক স্বনির্ভর বাংলাদেশ গঠনে ঊনিশ দফা কর্মসূচি দিয়েছেন। আজকের বাংলাদেশের অর্থনীতি যে তিনটি খুঁটির ওপর দণ্ডায়মান, সে তিনটি খুঁটি জিয়াউর রহমান স্থাপন করে গেছেন।
তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান খাল কেটে এদেশের কৃষিতে বিপ্লব ঘটিয়েছেন। আজকে আমাদের বিদেশ থেকে যে বিপুল পরিমাণ রেমিটেন্স আসে, তিনিই প্রথম বিদেশে শ্রমিক পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশের যে পোশাক খাত, সেটাও তিনিই শুরু করেছিলেন। জিয়াউর রহমান যে ভিত্তি স্থাপন করে গেছেন আজকে সেই ভিত্তির ওপরেই বাংলাদেশ চলছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক যে, জিয়াউর রহমান যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, আজকে যারা ক্ষমতায় তারা গণতন্ত্রকে হত্যা করে নির্বাচন ব্যবস্থাকে তছনছ করে দিয়েছে। আজকে দেশে মানবাধিকার নেই। মানবাধিকার লঙ্ঘন করে এই সরকার বিদেশে বদনাম অর্জন করেছে। গণতান্ত্রিক সামিটে বাংলাদেশ আমন্ত্রণ পায় নি। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বাংলাদেশ আজকে একটি স্বৈরাচারী শাসনের অধীনে দেশ চলছে।
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, আজকে সবচেয়ে বেশি মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে আমাদের নেত্রী গণতন্ত্রের মাতা তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি। বানোয়াট মামলায় একটি নির্দেশিত রায়ে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে খালেদা জিয়া কারাগারে ছিলেন। আজকে তিনি হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। বিদেশে চিকিৎসা করতে যাওয়ার যে মানবিক অধিকার সেটা থেকেও তাকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় মানবাধিকার লঙ্ঘন।
তিনি বলেন, দেশপ্রেমিক সব জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে আমরা এই দেশে এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই, যে পরিবেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে, বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরে স্বাধীনভাবে রাজনীতি করার সুযোগ পাবেন। সেই লক্ষ্যে দেশের সব জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাবো।
তৈমুর আলম খন্দকারকে বহিষ্কারের বিষয়ে ড. মোশাররফ বলেন, এটাতো দল থেকে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়ে গেছে। এ বিষয়ে আর কোনো বক্তব্য নেই।
সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া আমরা কোনো নির্বাচনে যাব না। সুতরাং নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে আমাদের কোনো আগ্রহ নেই। শুধু তাই নয় আমরা নির্বাচনে যাবো না এবং প্রতিহত করবো।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, সদস্য সচিব আমিনুল হক, মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০২২
এমএইচ/এমআরএ