ঢাকা, বুধবার, ২২ আশ্বিন ১৪৩২, ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ রবিউস সানি ১৪৪৭

প্রবাসে বাংলাদেশ

ডেনমার্কে বাংলাদেশিদের কারণেই চরম সংকটে দেশীরা

সাগর আনোয়ার, জার্মানি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২:৪৯, অক্টোবর ৭, ২০২৫
ডেনমার্কে বাংলাদেশিদের কারণেই চরম সংকটে দেশীরা ছবি: সংগৃহীত

ইউরোপের সমৃদ্ধ দেশ ডেনমার্কে চরম সংকটের মুখোমুখি বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা। আর এ সংকটের মূলে রয়েছে বাংলাদেশিরাই।

বাংলাদেশের কিছু শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী ভিসাকে ডেনমার্কে প্রবেশের সুযোগ হিসেবে ব্যবহার, শিক্ষার্থী ভিসায় পরিবার নিয়ে বসবাস, এডুকেশন কনসালটেন্সি ফার্মের বিরুদ্ধে মানবপাচার ও পড়াশোনা না করে বেশি সময় কাজের অভিযোগ এখন ডেনমার্কের সংসদ, রাজপথ থেকে টক অব দ্য কান্ট্রি।

ডেনমার্কে বসবাসরত একাধিক শিক্ষার্থী ও বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষুদ্র একটি অংশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ বাংলাদেশিদেরই একাংশ ডেনমার্কের গণমাধ্যমকে জানায়। এগুলো দেশটির বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। আর এ সংবাদগুলোকে অভিবাসন বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচির অংশ করায় এখন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা চরম বুলিং ও হেনস্তার শিকার হচ্ছেন ডেনমার্কে। যদিও দূতাবাস বিবৃতির মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। তবে দূতাবাসের এ বিবৃতি যথেষ্ট নয় বলেও মনে করছেন শিক্ষার্থীরা।

বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য এমন প্রতিকূল পরিস্থিতি কেন সৃষ্টি হলো জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডেনমার্কের একাধিক বাংলাদেশি কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের একাংশের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড্রপ আউটের হার বেশি। তাদের একাডেমিক রেজাল্টও খারাপ। ডেনমার্কের শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবলেম সলভ বেইজট। এখানে প্রজেক্টের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। বাংলাদেশি অনেক শিক্ষার্থীই এই কারিকুলামের সঙ্গে অভ্যস্ত নন। এজন্য শুরুতেই তারা হিমশিম খায়। এছাড়া ডেনমার্কের জীবনযাত্রার ব্যয় পৃথিবীর অন্যতম ব্যয়বহুল। টিউশন ফি ও জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহের জন্য বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের কাজের পেছনে বেশি সময় ব্যয় করতে হয়। এতে করে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এমনকি গত ২/৩ বছরে যেসব বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ডেনমার্কে এসেছেন তাদের বেশিরভাগই বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসেননি। যার কারণে, এসব শিক্ষার্থীদের মান নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। সবচেয়ে বড় অভিযোগ এডুকেশন কনসালটেন্সি ফার্মের বিরুদ্ধে। ডেনমার্কের সরকার অভিযোগ করেছে, বাংলাদেশি কনসালটেন্সি ফার্মগুলো শিক্ষার্থীদের ভুল বুঝিয়ে মানবপাচারের মতো করে শিক্ষার্থীদের ডেনমার্কে পাঠিয়েছে। এটাই এ সংকটের মূল কারণ।

ডেনমার্কের একাধিক শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বাংলাদেশিরা অভিযোগ করেন, বেশকিছু দিন ধরে ডেনমার্কের সংসদে নেপাল ও বাংলাদেশের কিছু শিক্ষার্থীদের কর্মকাণ্ড নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। রাজপথেও বিক্ষোভ করেছে রক্ষণশীল দলগুলো। আগামী বছর ডেনমার্কের জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এর আগে আগামী মাসে দেশটিতে স্থানীয় সরকার নির্বাচন। সেই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের শিক্ষার্থী ইসু্যকে সামনে এনে অভিবাসন বিরোধী ডানপন্থীরা ভোটার টানার চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যে রসকিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা অনুষদের প্রধান পদত্যাগ করেছেন। বিভাগটি আগামী বছর থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু ডানপন্থীরা পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ই বন্ধের দাবি তুলেছে।

ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে বসবাসকারী বাংলাদেশি শিক্ষার্থী কনিকা বাংলানিউজকে জানান, বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি ডেনমার্কে এসেছেন। এখানে এসে নতুনরা কাজ পাচ্ছিলেন না। আবার পুরাতনরা শিক্ষার্থী হয়েও তাদের অনুমোদিত কাজের সময়ের অতিরিক্ত কাজ করতেন। এটা নিয়ে নতুন শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে লেখালেখি করেন। ওই লেখা ও অভিযোগগুলো ডেনমার্কের পত্রিকায় সংবাদ আকারে প্রকাশ পায়। এসব খবর ডেনমার্ক সরকারের নজরে আসে। এতে করে ডেনমার্ক সরকার খোঁজ-খবর নেওয়া শুরু করলে উঠে আসে ভয়াবহ চিত্র। যার ফলশ্রুতিতে এখন নতুন পুরাতন সবাই বিপদে। কাজ নেই, বাসা ভাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। আর এ মাস থেকে গণহারে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রিজেকশন লেটার দিচ্ছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশিদের ভাবমূর্তি এখন ডেনমার্কে তলানিতে। তবে বাংলাদেশি কমিউনিটি সংগঠকরা ডেনমার্কের গৃহীত নীতিমালাকে শুধুমাত্র বাংলাদেশ বিরোধী হিসেবে না দেখে সামগ্রিক নীতিমালার পরিবর্তন হিসেবে দেখছে।  

জানা গেছে, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদেরই এ ক্ষুদ্র অংশের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ডেনমার্কের উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা মন্ত্রণালয় সম্প্রতি একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

প্রকাশিত প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ও নেপাল থেকে আগত শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় অনাগ্রহ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে দেখানো হয়, ২০২২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ডেনমার্কে চীনা শিক্ষার্থীদের মাত্র ১ শতাংশ এবং আমেরিকান শিক্ষার্থীদের মাত্র ২ শতাংশ শিক্ষার্থী তাদের স্বামী বা স্ত্রীকে নিয়ে ডেনমার্কে থাকছেন। অন্যদিকে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এই হার ৫৮ শতাংশ এবং নেপালি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে ৭৪ শতাংশ। ভারতের ক্ষেত্রে এই হার ২৩ শতাংশ।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, শিক্ষার্থী ভিসাকে বাংলাদেশ ও নেপালের কেউ কেউ পরিবার নিয়ে ডেনমার্কে বসবাসের সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করছেন। এই রিপোর্টে ডেনমার্কের আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়। বিশ্লেষণে বলা হয়, আরহুস বিশ্ববিদ্যালয়ে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও শিক্ষার্থীদের এক-তৃতীয়াংশই ক্লাসে যান না। বরং তাদের মূল আগ্রহ ডেনমার্কে বসবাস। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রথম বর্ষে ড্রপ আউটের হার ২০২৩ ও ২০২৪ সালে ছিল ১৩ শতাংশ, যেখানে অন্যান্য আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে মাত্র ৪ শতাংশ। বাংলাদেশিদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অনুপস্থিতির হার ছিল ১৪ থেকে ২৫ শতাংশ। অন্যান্য আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে তা মাত্র ৫ থেকে ৬ শতাংশ। বাংলাদেশিদের পাসের হারও ছিল তুলনামূলকভাবে কম। বাংলাদেশিদের মাত্র ৫৫ থেকে ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেন মাত্র গ্রেড ২ নিয়ে (যা সর্বনিম্ন)। বাকিরা কৃতকার্য হতেই ব্যর্থ হন। অথচ অন্য দেশের শিক্ষার্থীদের পাসের হার প্রায় ৯০ শতাংশ।

আলবর্গ বিশ্ববিদ্যালয় ও কোপেনহেগেন বিজনেস স্কুল আরও ভয়াবহ তথ্য প্রকাশ করে। বিশ্ববিদ্যালয় দুটির অভিযোগ, বাংলাদেশ, ভারত ও নেপাল থেকে ভর্তি সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান বা এজেন্ট প্রায়ই তাদের কাছে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য আবেদন করেন। সরাসরি শিক্ষার্থীরা তাদের কাছে আবেদন করেন না। এসব এজেন্টরা ডেনমার্ককে ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় সহজে রেসিডেন্স পারমিট পাওয়া যায় এমন ধারণা দিয়ে বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়।

জানা গেছে, এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ১৮ সেপ্টেম্বর ডেনমার্কের অভিবাসন মন্ত্রণালয় ঘোষণা দেয়, তারা পড়াশোনার উদ্দেশে আসা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা শেষ না করেই চাকরির বাজারে প্রবেশ প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে। মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বাংলাদেশ ও নেপালের নাম উল্লেখ করে এ দুই দেশের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা কঠোরভাবে মূল্যায়নের কথাও বলে। এছাড়া এ দুই দেশের শিক্ষার্থীদের ইউনিভার্সিটি ড্রপ আউটের অনুপাতও অন্যান্য আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের তুলনায় অনেক বেশি বলে উল্লেখ করা হয়।

কোন বিশ্ববিদ্যালয় কী করছে

রসকিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়: বাংলাদেশিদের জন্য রসকিল্ড বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড লিডারশিপ নামে একটি মাস্টার্স প্রোগ্রাম ২০২৬ থেকে আর কোনো বাংলাদেশিকে ভর্তি করাবে না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, এ প্রোগ্রামে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ছিল বেশি কিন্তু তারা ক্লাসে অংশ নিতেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় প্রধান ইতোমধ্যে পদত্যাগও করেছেন।

আরহুস বিশ্ববিদ্যালয়: আরহুস বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ রিপোর্টে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আবেদনকারীর সংখ্যা এক বছরে দ্বিগুণ হলেও ড্রপ-আউট ও খারাপ ফলাফলের কারণে ভর্তি প্রক্রিয়ায় কড়াকড়ি আনা হয়েছে। ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি সেশনে বেশিরভাগ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীই অফার লেটার পায়নি বলে জানা গেছে।

এসডিইউ ( সাউদার্ন ডেনমার্ক বিশ্ববিদ্যালয়): আগামী ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি সেশনে নন-ইইউ (বাংলাদেশসহ) শিক্ষার্থীদের ভর্তি সম্পূর্ণভাবে স্থগিত করেছে। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের গণহারে রিজেকশন লেটার পাঠানো হয়েছে।

টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব ডেনমার্ক ও ইউনিভার্সিটি অব কোপেনহেগেন:  এ দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশি ও নেপালি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার মান ও উপস্থিতি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে। সরাসরি বাংলাদেশিদের জন্য প্রোগ্রাম বন্ধের ঘোষণা না দিলেও বাংলাদেশি ও নেপালের শিক্ষার্থীদের তারা ভর্তির সুযোগ দিচ্ছে না।

ডেনমার্কের সরকারের অবস্থান

ডেনিশ সরকার জানিয়েছে, অনেক শিক্ষার্থী পড়াশোনার পরিবর্তে ডেনমার্ককে কাজের বাজারে প্রবেশের উপায় হিসেবে ব্যবহার করেছে। অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা কাজ, পরিবারের সদস্য আনার সুযোগ ও পড়াশোনা শেষে ডেনমার্কে থাকার সুবিধার মতো নীতিতে আমূল পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এতে করে পড়াশোনা শেষে বাংলাদেশিরা তিন বছরের চাকরি খোঁজার সুযোগ পেতেন সেটা আর পাবেন না। শিক্ষার্থীরা স্বামী বা স্ত্রীকে ডেনমার্কে আনতে পারবেন না। এছাড়া যারা ইতোমধ্যে আছেন তাদের বিপুল অংকের টাকা টিউশন ফি দিতে হবে।

একাধিক বাংলাদেশি জানিয়েছেন, বর্তমানে ডেনমার্কে অভিবাসন সহনশীল সমাজতন্ত্রী দল ক্ষমতায়। কিন্তু অভিবাসন বিরোধী দল এই ইস্যুগুলো সামনে আনায় সরকার বেকায়দায় পড়ে বিদেশিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হচ্ছে। কিছুদিন পর স্থানীয় সরকার নির্বাচন, তারপরই জাতীয় নির্বাচন। এজন্যই অভিবাসী ইস্যুগুলো সামনে আনা হয়েছে। আর বলির পাঠা হচ্ছে বাংলাদেশিরা।

বাংলাদেশ দূতাবাস ডেনমার্কের প্রতিক্রিয়া

ডেনমার্কের কোপেনহেগেনের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে বাংলানিউজকে জানানো হয়, সম্প্রতি ডেনমার্কের গণমাধ্যম ও সরকারি মহলে যে আলোচনা চলছে তা ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বাংলাদেশ দূতাবাস। শিক্ষার্থীদের একটি ক্ষুদ্র অংশের চ্যালেঞ্জকে কেন্দ্র করে সব শিক্ষার্থীকে একইভাবে দেখা অন্যায় ও হতাশাজনক। অধিকাংশ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী তাদের মেধা, যোগ্যতা, অধ্যবসায় ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে ডেনিশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছেন। কিন্তু ঢালাওভাবে স্থানীয় মিডিয়ায় নেতিবাচক প্রচারণার কারণে আমাদের ছাত্র-ছাত্রী ও প্রবাসীরা বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন ও বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে।

এ সংকট থেকে উত্তরণের জন্য দূতাবাস কি করছে জানতে চাইলে ডেনমার্কের বাংলাদেশ দূতাবাস জানায়, বাংলাদেশ দূতাবাস ডেনমার্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা ও গবেষণা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ ও ইতিবাচক আলোচনার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিচ্ছে। দূতাবাসের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। রসকিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়, কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়, সিবিএস, নেলস ব্রুক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ইতোমধ্যে বৈঠক হয়েছে। আরহুস, অ্যালবর্গ, ডিটিইউ ও এসডিইউ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও আলোচনার প্রক্রিয়া চলছে। স্থানীয় বাংলাদেশি গবেষক, সামাজিক সংগঠক, সোশ্যাল মিডিয়া সংশ্লিষ্ট গ্রুপগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন অংশীজন, ডেনমার্কে বাংলাদেশি অ্যালামনাইদের সঙ্গেও যোগাযোগের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ডেনমার্কের গণমাধ্যমে প্রকাশিত বাংলাদেশ নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণার বিরুদ্ধে প্রতিবাদলিপি পাঠানো হয়েছে, ডেনমার্কের গণমাধ্যমগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। এ সংকটকালে ডেনমার্কে বাংলাদেশের শিক্ষার্থী ও প্রবাসীরা একা নন, দূতাবাসও তাদের পাশে রয়েছে।

দূতাবাস আরও জানায়, ডেনমার্কের গণমাধ্যমগুলোতে বাংলাদেশিদের সাফল্য তুলে ধরার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সমন্বয় করে দূতাবাসের পক্ষ থেকে হেল্পলাইন বা অভিযোগ চ্যানেল চালু করা ও বাংলাদেশি গবেষক এবং প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের নিয়ে নবীনদের জন্য মেন্টরশিপ চালু করারও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ দূতাবাস দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, বাংলাদেশের শিক্ষার্থী ও প্রবাসীরা শুধু ডেনমার্কের বিশ্ববিদ্যালয় বা অর্থনীতির জন্য নয় বরং দুই দেশের বন্ধুত্বের জন্যও কাজ করছেন। বাংলাদেশ দূতাবাস বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।