লন্ডন: ব্রিটেনে বসবাসরত বাংলাদেশিদের প্রশংসায় আবারও পঞ্চমুখ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন।
বুধবার (১১ মার্চ) ইংল্যান্ডের বার্মিংহামে দেশ ফাউন্ডেশনের ব্রিটিশ-বাংলাদেশি বিজনেস অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে ব্রিটেনের বাংলাদেশি কমিউনিটিকে মাল্টিকালচারাল ব্রিটেনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে বাংলাদেশিদের প্রশংসা করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরন তার বক্তব্যে বলেন, ব্রিটিশ অর্থনীতির সমৃদ্ধিতে বাংলাদেশি কমিউনিটির অবদান অনস্বীকার্য। এখানকার কয়েক লাখ বাংলাদেশি আমাদের অর্থনীতির অন্যতম যোগানদার হিসেবে নিরলসভাবে ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন।
‘বাংলাদেশিদের শুরু করা রেস্তোরাঁ শিল্প পুরো ব্রিটিশ জাতির খাদ্যাভাসই বদলে দিয়েছে’, এমন মন্তব্য করে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ শুধু রেস্তোরাঁ সেক্টরই নয়, অন্যান্য ব্যবসায়িক সেক্টরেও বাংলাদেশিরা সফলতার সাথে এগিয়ে যাচ্ছেন।
সম্প্রতি হালাল মাংস নিয়ে সৃস্ট জটিলতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঐতিহ্যগতভাবেই ব্রিটেন একটি মাল্টিকালচারাল, মাল্টি রিলিজিয়াস দেশ। স্বাধীন ও নির্বিঘ্নে প্রতিটি সম্প্রাদায়ের নিজ নিজ ধর্ম ও সংষ্কৃতি চর্চার অধিকার রয়েছে এ সোসাইটিতে। সুতরাং বৃটেনে হালাল মাংস থাকবে কি না এনিয়ে বিতর্কের কোনো সুযোগ নেই। অবশ্যই হালাল মাংস খাওয়ার সুযোগ থাকবে মুসলিম সম্প্রাদায়ের।
ব্রিটিশ-বাংলাদেশ বিজনেস অ্যাওয়ার্ড প্রবর্তনের প্রশংসা করে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই অ্যাওয়ার্ড নতুন নতুন ব্যবসা সেক্টরের প্রতি আগামী প্রজন্মকে আকৃষ্ট করবে, যা শুধু তাদের নিজেদের জন্যেই নয়, আমাদের অর্থনীতির জন্যেও হবে লাভজনক।
তিনি বৃটিশ বাংলাদেশিদের আরও ভালো ভালো কাজের সাথে সম্পৃক্ত হবার আহবান জানিয়ে বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি কমিউনিটি ঐক্য সুদৃঢ় রাখতেও বাংলাদেশিরা যার যার অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখবেন বলে আমি আশাবাদী।
ক্যামেরন বলেন, যেকোন অপশক্তি মোকাবেলায় ঐক্যের শক্তি নিয়েই আমাদের ভূমিকা রাখতে হবে।
যুক্তরাজ্যের বার্মিংহামে বুধবার (১১ মার্চ) প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয় ‘বৃটিশ-বাংলাদেশি বিজনেস অ্যাওয়ার্ড’।
স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হওয়া এই চোখধাঁধানো বর্ণিল অনুষ্ঠান চলে রাত ১০টা পর্যন্ত।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরন অনুষ্ঠানে ছিলেন প্রায় ৩৫ মিনিটের মতো। বক্তৃতা শেষে তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের সাথে কুশল বিনিময় করেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, লর্ড অব উইম্বলডন তারিক আহমদ, ব্রিটেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশনার আবুল হাসান ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আই’র পরিচালক শাইখ সিরাজ।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন দেশ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও ব্রিটিশ বাংলাদেশি বিজনেস অ্যাওয়ার্ডের ফাউন্ডার মিসবাউর রহমান। দেশ ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ নাসির ও এমডি শামীম চৌধুরীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বিবিসি’র মিডল্যান্ড টু ডে’র উপস্হাপক মাইকেল কলি ও অভিনেত্রী শমী দাশ।
বৃটেনে বসবাসরত বাঙালি ব্যবসায়ীদের স্বীকৃতি প্রদান করতেই আয়োজন করা হয় ব্রিটিশ-বাংলাদেশি বিজনেস অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানের। ব্রিটিশ অর্থনীতি ও কমিউনিটি উন্নয়নে ভূমিকা রাখছেন এমন ২১টি ক্যাটাগরিতে মোট ২৮জন ব্যবসায়ী, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও সমাজ সংগঠককে অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।
দেশ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এ আড়ম্ভরপূর্ণ অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও ব্রিটেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার আব্দুল হান্নানসহ বৃটেন ও বাংলাদেশ থেকে বেশকয়েকজন ভিআইপি অতিথি অংশগ্রহণ করেন।
বেস্ট বিজনেস এন্টারপ্রেনার অব দ্য ইয়ার হিসেবে ফারজানা হোসেন নীলা, এন্টারপ্রেনার অব দ্য ইয়ার ফরিদ নাবিল, সুপারমার্কেট অব দ্য ইয়ার রফিক হায়দার, লিডার অব দ্য ইয়ার আহবাবুর রহমান মিরন, কমিউনিটি এক্সিলেন্স মাজেদুল চৌধুরী, লাইফ টাইম বিজনেস এচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড আলজাজ মনজুর আলীসহ ২৮জনকে অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।
বাংলাদেশের কৃষি ও কৃষকদের উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখার জন্য মিডিয়া ব্যক্তিত্ব সাইখ সিরাজকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয় বিবিবি অ্যাওয়ার্ডে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৩০ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০১৫