জেনেভা (সুইজারল্যান্ড): বাংলা নববর্ষকে উদযাপনে হাজার বছর ধরে উৎসব করে আসছে বাঙালি। এখন সেই উৎসবের ধারা দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বজুড়ে।
সেই ঐতিহ্যগত বিবেচনায় প্রতিবারের মত এবারও বাংলা নতুন বছরকে উৎসবে আনন্দে স্বাগত জানালো সুইজারল্যান্ড প্রবাসী বাঙালিরা। এ উপলক্ষে গত ১৩ বৈশাখ (২৮ এপ্রিল) দেশটির রাজধানী জেনেভার খ্যাতনামা একটি সম্মেলনকক্ষে বর্ণাঢ্য উৎসবের আয়োজন করা হয়। দিনব্যাপী ওই বৈশাখী উৎসবের আয়োজক ছিল জেনেভার সামাজিক সংগঠন ‘বাংলাদেশ ক্লাব’।
উৎসবে সম্মেলনক্ষের তিন কক্ষ বিশিষ্ট প্রশস্ত মিলনায়তনজুড়ে ছিল নানারকম খাবার, ঝালমুড়ি, ফুচকা, হালিম, মুখরোচক মিষ্টি, গহনা আর কাপড়ের পসরা সাজিয়ে বসেছিল বাঙালির চিরায়িত ঐতিহ্য বৈশাখী মেলা। মেলার অন্য পাশে বৃহৎ ডাইনিং রুমে দুপুরের খাবার পরিবেশন করেন বাংলাদেশ ক্লাবের নেতারা।
জেনেভার বাঙালি সমাজের প্রিয় শেফ মোশারফ দেওয়ান ও তার সহকর্মী আবদুর রব, ইউসুফ ফরাজী ও আরিফের মূল তত্ত্বাবধানে দুপুরের খাবারের মেন্যুতে ছিল সাদা ভাত, পোলাও, গরুর ঝাল মাংস, চিকেন তান্দুরী, সবজি ও ডাল।
বিকেল ৪টায় উৎসবের মূল মঞ্চে শুরু হয় বাঙালির ঐতিহ্য আর চিরচেনা বাউল সংগীত। খ্যাতনামা শিল্পী পবন দাশ বাউল ও তার দলের মুগ্ধতা ছড়ানো পরিবেশনার পর প্যারিসের খ্যাতনামা ব্যান্ড গ্রুপ আরিখ রানা-কুমকুমের সুরের মূর্ছনায় হলভর্তি অতিথিরা উল্লাসে মাতেন।
এরপর অনুষ্ঠান মঞ্চে পরিবেশিত হয় স্থানীয় শিশুশিল্পী আনিশা ও দিহানের যুগল নৃত্য। সেইসঙ্গে দেশাত্মবোধক গান গেয়ে সকলের মন কাড়েন শিশুশিল্পী তুলি বড়ুয়া। প্যারিস থেকে আগত জনপ্রিয় নৃত্যশিল্পী নোভাও মাতিয়ে তোলেন তার লোকনৃত্যে।
রহমান খলিলুরের প্রাঞ্জল উপস্থাপনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলে রাত ৮টা পর্যন্ত। এরমধ্যে সন্ধ্যা ৬টায় উৎসব মঞ্চে আসেন আয়োজনের প্রধান অতিথি জেনেভা স্থায়ী বাংলাদেশ মিশনের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স নজরুল ইসলাম। তিনি বর্ষবরণ উৎসবের সংগঠক, উদ্যোক্তা, দর্শক-শ্রোতা ও শিল্পীদের প্রতি নববর্ষের শুভেচ্ছা ও দূতাবাসের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানিয়ে বক্তব্য রাখেন।
উৎসবে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ক্লাবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব শাহীন মজুমদার। অনুষ্ঠানের মাঝপথে উপস্থাপকের মাধ্যমে সবার সঙ্গে পরিচিত হন আয়োজক বাংলাদেশ ক্লাবের নেতারা। ক্লাবের বর্তমান সভাপতি আমজাদ চৌধুরীর সঙ্গে একযোগে মঞ্চে আসেন ক্লাবের সাবেক সভাপতি শ্যামল খান, জমাদার নজরুল ইসলাম, আশরাফুল ইসলাম আজাদ, সাধারণ সম্পাদক আকবর আলী, উৎসবের অন্যতম সংগঠক মশিউর রহমান সুমন, মাসুম খান, নিজাম উদ্দীন ও শামীম সিকদার।
আয়োজনের সভাপতি আমজাদ চৌধুরী তার শুভেচ্ছা বক্তব্যে ক্লাবের পক্ষ থেকে অতিথিদের নববর্ষের শুভেচ্ছা ও অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান।
আয়োজনের সমাপ্তি পর্বে অনুষ্ঠিত হয় আকর্ষণীয় ৠাফেল ড্র। এ প্রতিযোগিতার প্রথম পুরষ্কার ছিল জুরিখের ‘স্কাই ট্রাভেলস’র সৌজন্যে ‘সুইজারল্যান্ড-ঢাকা-সুইজারল্যান্ড’ প্লেন টিকেট। লটারির মাধ্যমে পুরস্কারটি জিতে নেন লুজান শহরের ব্যবসায়ী ও সমাজ সেবক আবদুল হক মোল্লা।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১২ ঘণ্টা, মে ০২, ২০১৫
এইচএ