পর্তুগাল থেকে: অর্থনীতির উন্নতির জন্য অনেক মানুষ দেশ ছেড়ে শুরু করে প্রবাস জীবন। তাদের আশা, পরিবারের সদস্যরা যেনো সব সময় ভালো থাকে।
এদিকে প্রবাসীদের চাওয়া, তাদের মৃত্যু যদি প্রবাসেই হয়ে যায় তাহলে মরদেহ যেন হাসপাতালের মর্গে মাসের পর মাস পড়ে না থাকে। অথবা প্রবাসের মাটিতে দাফন না হয়ে তাদের মরদেহ দেশে নেওয়ার জন্য সহকর্মীদের অন্য মানুষের কাছে যেন ভিক্ষা করতে না হয়। মরদেহ দেশে পাঠাতে যেন পরিবারের ভিটে-মাটি বিক্রি করে কয়েক লাখ টাকা জোগাড় করতে না হয়।
প্রায় অর্ধশত প্রবাসীর মরদেহ দেশে পাঠানোর সাক্ষী পর্তুগালের রানা তাসলিম উদ্দিন ও জহিরুল আলম জসিম।
রানা তাসলিম উদ্দিন ১৯৮৯ সাল থেকে প্রবাস জীবন শুরু করেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার ও পর্তুগালে সোস্যালিস্ট পার্টির নেতা। শুধু পর্তুগালেই জীবনের ৩২ বছর পার করেছেন তিনি। এখন পর্যন্ত শুধু পর্তুগাল থেকেই প্রায় ৩০ জন প্রবাসীর মরদেহ দেশে পাঠানোর সাক্ষী তিনি।
রানা তাসলিম জানান, ১৯৯৭ পর্তুগালে বাংলাদেশ দূতাবাস ছিল না শুধু মাত্র কনস্যুলেট সেবা চালু ছিল। তখন থেকে এখন পর্যন্ত পর্তুগাল থেকে প্রায় ৩০ জন প্রবাসীর মরদেহ তিনিসহ বাংলাদেশ কমিউনিটির উদ্যেগে দেশে পাঠানো হয়েছে।
তিনি বলেন, একজন প্রবাসীর মরদেহ দেশে পাঠাতে অনেক টাকার প্রয়োজন হয়। অনেক পরিবারের পক্ষে এত টাকা বহন করতে সক্ষম হয় না। তবে এখন পর্যন্ত কোন প্রবাসীর মরদেহ টাকার জন্য পর্তুগালে দাফন হয়নি। আমরা পর্তুগালে বাংলাদেশ কমিউনিটির সহযোগিতায় মরদেহ দেশে পরিবারের কাছে পৌঁছে দিয়েছি। তবে এর মধ্যে কিছু পরিবার নিজ খরচে মরদেহ দেশে নিয়েছেন।
রানা তাসলিম উদ্দিন বলেন, প্রবাসীরা দেশের জন্য বিদেশের মাটিতে দিনরাত কাজ করে দেশকে রেমিট্যান্স দিচ্ছেন। এতে সমৃদ্ধ হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। তাই সরকারের কাছে একজন রেমিট্যান্স যোদ্ধা হিসেবে দাবি জানাচ্ছি- বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যে কোনো বাংলাদেশি রেমিট্যান্স যোদ্ধার মরদেহ যেন সরকারি খরচে দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
রানা তাসলিমের মত জহিরুল আলম জসিমও বসবাস করেন পর্তুগালে। মাদারীপুর সদর উপজেলার মিটাপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন জসিম। প্রায় ২৫ বছর ধরে থাকেন পর্তুগালে। বর্তমানে তিনি পর্তুগালের আওয়ামীলীগের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন।
রানা তাসলিম উদ্দিনের মতো তিনিও প্রায় ২৮ জনের বেশি প্রবাসীর মরদেহ পর্তুগালে বাংলাদেশ কমিউনিটির উদ্যেগে দেশে পাঠানোর সাক্ষী হয়ে আছেন তিনি। এছাড়া আরও ২০ জন প্রবাসীর মরদেহ পর্তুগালে দাফন করেছেন।
জহিরুল আলম বলেন, প্রবাসে কেউ মারা গেলে মরদেহ দেশে পাঠানোর জন্য দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রবাসী বাংলাদেশিরা নিজেরাই চাঁদা তুলে প্রবাসীর মরদেহ দেশে পরিবারের কাছে পাঠান।
বাংলাদেশ সরকারের কাছে তার দাবি- ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে যেখানে প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন মৃত্যুর পর বাংলাদেশ সরকারের উদ্যেগে যেনো মরদেহ দেশে পাঠানো হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০২২
এনএইচআর