ঢাকা, সোমবার, ১৩ মাঘ ১৪৩১, ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ২৬ রজব ১৪৪৬

অন্যান্য

আইএমএফের প্রেসক্রিপশনে দেশ চালাচ্ছে সরকার

আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০২৫
আইএমএফের প্রেসক্রিপশনে দেশ চালাচ্ছে সরকার আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রেসক্রিপশন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার দেশ চালানোর চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থনীতিতে কোনো নজর নেই।

বর্তমান সরকারের কার্যক্রমে অর্থনীতি অগ্রাধিকার পাচ্ছে না, এটা পরিষ্কার। আমরা দেখতে পাচ্ছি, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার আইএমএফের প্রেসক্রিপশন নিয়ে দেশ চালানোর চেষ্টা করছে।

তবে বর্তমানে দেশের যে অবস্থা সেখানে এই প্রেসক্রিপশন কাজে দেবে না। ’

গতকাল শনিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যের চ্যালেঞ্জ নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিসিআই।

আনোয়ার-উল-আলম অভিযোগ তুলে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক সংকোচনমূলক নীতি নিয়েছে; তারল্য সরবরাহ কমিয়েছে—এ ধরনের নানা উদ্যোগ আছে।

এগুলো দেশের অর্থনীতির জন্য, শিল্পের জন্য, ব্যবসায়ীদের জন্য অনুকূল নয়। আমরা আইএমএফের প্রেসক্রিপশন নিয়ে কিছু জায়গায় প্রস্তুতি নিতে পারি; কমপ্লায়েন্স পূরণ করার জন্য অনেক জায়গায় কাজ করতে পারি। কিন্তু আইএমএফের প্রেসক্রিপশন পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে গেলে সেটি আমাদের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। ’

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিসিআইয়ের সিনিয়র সহসভাপতি প্রীতি চক্রবর্তী, পরিচালক শহিদুল ইসলাম, দেলোয়ার হোসেন, এস এম শাহ আলম, জিয়া হায়দার, জাহাঙ্গীর আলম, রেহানা রহমান, শাহ আলম লিটু, নাজমুল আনোয়ার ও খায়ের মিয়া।

বিসিআই সভাপতি বলেন, সরকার একদিকে সুদহার বাড়িয়ে রেখেছে, পাশাপাশি রয়েছে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি। অন্যদিকে এখন পর্যন্ত জ্বালানি সমস্যার সুরাহা হয়নি, বরং নতুন করে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে কথা হচ্ছে। এই বিষয়গুলো পরিষ্কার করে দেয় যে সরকারের কার্যক্রম শিল্প খাতের জন্য ইতিবাচক নয়। এভাবে চললে নতুন শিল্প স্থাপন দূরের কথা, বিদ্যমান শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য টিকে থাকা কঠিন হবে।

রাজনৈতিক দলগুলোও অর্থনীতি নিয়ে চিন্তিত নয় বলে জানান বিসিআই সভাপতি।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোও অর্থনীতি নিয়ে চিন্তিত নয়। তারা একে অপরকে নিয়ে নানা কথা বললেও অর্থনীতি নিয়ে কিছু বলছে না।

আনোয়ার-উল-আলম বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় চলে যাওয়া উচিত। তাতে সবার মধ্যে স্বস্তি আসবে।

গণতান্ত্রিক সরকার ছাড়া কখনো স্বস্তি আসবে না উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার এটি বুঝে যত দ্রুত সম্ভব প্রয়োজনীয় সংস্কার করে বাকি সংস্কারের জন্য একটি পথনকশা করে দিতে পারে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, সরকারের অর্থনীতি নিয়ে কোনো আগ্রহ নেই। ’ 

সরকারের কর্তাদের বক্তব্য বিভ্রান্তিমূলক
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ব্যাংকঋণের সুদহার বাড়লেও ব্যবসায়ীদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। আর অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ভ্যাট যা বাড়ানো হয়েছে, তাতে জিনিসপত্রের দাম তেমন একটা বাড়েনি। সরকারের শীর্ষ নীতিনির্ধারকদের এমন বক্তব্যকে বিভ্রান্তিমূলক বলে মন্তব্য করেছেন বিসিআই সভাপতি।

দু-চারজন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী, যারা ব্যাংক লুট করেছে, তাদের দায় সবার ওপর চাপানো হলে সেটি অবিচার হবে বলে মনে করেন বিসিআই সভাপতি। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা বর্তমানে হতাশায় ভুগছেন। ব্যবসায়ীরা চান ইজ্জত-সম্মান নিয়ে চলতে। কিন্তু ব্যবসায়ীদের ঢালাওভাবে খেলাপি বলা হয়; কেন খেলাপি হলেন সেটি দেখা হয় না। বিগত সময়ে বিভিন্ন কারণে যে পরিমাণে ব্যাবসায়িক খরচ বেড়েছে সেটি সবার পক্ষে সামলানো সম্ভব হয়নি। এই কারণে অনেকে খেলাপি হয়েছেন। এ জন্য কি সেই উদ্যোক্তারা দায়ী?

আনোয়ার-উল-আলম বলেন, খেলাপি নিয়ে সরকারের যেমন নীতি আছে, প্রতিষ্ঠানের সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্বও সরকারের। আর সুরক্ষা দিতে না পারলে উদ্যোক্তাকে ব্যবসা থেকে বিদায় নিতে হবে। কিন্তু এ সম্পর্কিত কোনো দেউলিয়া আইন দেশে নেই। এটি নিয়ে সম্প্রতি গভর্নরের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি নীতিগতভাবে এ বিষয়ে সম্মত হয়েছেন।

লেখক: বিসিআই সভাপতি

সূত্র: কালের কণ্ঠ

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০২৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।