ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

প্রথম ছুটির দিনে জমে উঠেছে বইমেলা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০০৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৩
প্রথম ছুটির দিনে জমে উঠেছে বইমেলা ছবি: দেলোয়ার হোসেন বাদল

ঢাকা: শুক্রবার (৩ ফ্রেব্রুয়ারি) বইমেলার প্রথম ছুটির দিন। রমনা কালি মন্দিরের পাশে অবস্থিত শিশু চত্বরে সোনামনিদের ছোটাছুটি আর দুষ্টুমিতে ভালোলাগার দৃশ্য নির্মাণ তৈরি হয়েছিলো এ চত্বরে।

আজ সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ছিল বইমেলার প্রথম শিশুপ্রহরে। এ প্রহরের টানা দুই ঘণ্টা দুষ্টুমিতে মেতে ওঠে শিশুরা। এ সময় বাবা-মায়ের কাছ থেকে বায়নাকৃত কমিকস, কার্টুন ও গল্পের বই আদায় করে নেয় ক্ষুদে পাঠকরা।

সকালে শিশুদের উচ্ছ্বাস শেষে বিকালে বড়দের আগমনে সফলতার রূপ ফুটে উঠে মেলার তৃতীয় দিন প্রথম ছুটির লগ্নে। এদিন বিকালে শাহবাগ থেকে টিএসসি ও দোয়েল চত্বর সর্বত্রই ছিল বইপ্রেমীদের জটলা। সুশৃঙ্খল ও সারিবদ্ধভাবে মেলায় প্রবেশে চিত্রিত হয় একুশের শাণিত চেতনায়। বাংলা একাডেমি ও স্বাধীনতার স্মৃতি বিজড়িত সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মেলার দুই প্রাঙ্গণেই এদিন ছিল বইপ্রেমীদের ভিড়।

অমর একুশে গ্রন্থমেলা শুরুর পর আজ প্রথম শুক্রবার। আজ (৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বইমেলা ঘুরে দেখা যায়, ছুটির দিনটিতে মেলার পরিবেশ ছিল জমজমাট। সব বয়সী বইপ্রেমীদের ছিল ভিড়। স্টল-প্যাভিলিয়নে বই হাতে নিয়ে মলাট উল্টিয়ে দেখছিলেন তারা। মেলা শুরুর তিন দিনের মাথায় বেচাকেনা শুরু হওয়ায় খুশি প্রকাশনা সংস্থাগুলো। যদিও মেলার পরিধি বাড়িয়ে দেওয়ায় বই খুঁজতে অনেক পথ হেঁটে ক্লান্ত হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ ক্রেতা-দর্শনার্থীদের।

মেলায় আগত চাকরিজীবী রইসা আহমেদ বলেন, এ দু’দিন মেলায় মানুষ নেই শুনছিলাম। ছুটির দিন দেখে আজ মেলায় এসেছিলাম। এসে তো দেখি প্রচুর ক্রেতা-দর্শনার্থী। বইয়ের প্রতি এতো মানুষের টান দেখে ভালোই লাগছে।

বিভিন্ন স্টলের বিক্রয়কর্মীরাও জানিয়েছেন, ছুটির দিন হওয়ায় বেচাবিক্রি কিছুটা ভালো। কাল শনিবার। এ দিনটিও মোটামুটি ভালো যাবে বলে আশা করি।

শুক্রবার মেলা চলে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। আজ নতুন বই এসেছে ৯৬টি। বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় "স্মরণ: আবুল মাল আবদুল মুহিত" শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কুতুব আজাদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন, জালাল ফিরোজ এবং এম আবদুল আলীম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নূহ-উল আলম লেনিন।

প্রাবন্ধিক বলেন, আবুল মাল আবদুল মুহিত লেখক-পাঠক-ভাবুক-বিশ্লেষক-গবেষক-অর্থনীতিবিদ ও রাজনীতিক এক বর্ণিল ও বিচিত্র প্রতিভা। ধর্মনিরপেক্ষতা, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ভাষা-আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ ছিল তার আজীবন চলার পাথেয়। তার বিপুল গ্রন্থরাজি, পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত নানা প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও গবেষণাপত্র দেশব্যাপী পাঠককুলের সঙ্গে তাকে এক মেলবন্ধনে আবদ্ধ করে। সবকিছু ছাপিয়ে তিনি একজন সংস্কৃতিবান ও রুচিবান আত্মনিবেদিত দেশকর্মী। নানা বিবেচনায় মনস্বী আবুল মাল আবদুল মুহিতের নির্মোহ মূল্যায়ন প্রয়োজন।

আলোচকবৃন্দ বলেন, বর্ণিল কর্মজীবনের অধিকারী আবুল মাল আবদুল মুহিত একাধারে লেখক, গবেষক, রাজনীতিবিদ এবং অর্থনীতিবিদ। বাংলাদেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ডকে তিনি সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়েছেন। শিক্ষাদীক্ষা ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বেড়ে উঠেছিলেন বলে আজীবন তিনি ছিলেন বইপ্রেমী। গবেষণা ও লেখালেখির প্রতি তার যেমন আগ্রহ ছিল, তেমনি বাঙালির মূলধারার আন্দোলনের সঙ্গেও ছিলেন ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত। দীর্ঘ কর্মময় জীবনে তিনি যেমন প্রশাসক, কূটনীতিক ও অর্থনীতিবিদ হিসেবে সফল, তেমনি নিষ্ঠাবান গবেষক ও লেখক হিসেবেও অনন্য।

সভাপতির বক্তব্যে নূহ-উল আলম লেনিন বলেন, আবুল মাল আবদুল মুহিত একজন বিরলপ্রজ বাঙালি। মেধা-মননে, শিক্ষাদীক্ষায় আলোকিত আবদুল মুহিত একজন সার্থক অর্থমন্ত্রীই ছিলেন না; মানুষ হিসেবেও তিনি ছিলেন সত্যনিষ্ঠ, সত্যবাদী এবং দেশপ্রেমিক। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী তার জীবন ও কর্ম তরুণ প্রজন্মকে সামনে এগিয়ে যাবার প্রেরণা জোগাবে।

আজ লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন আহমদ বশীর, সুজন বড়ুয়া, রাজীব সরকার এবং হারিসুল হক। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি তারিক সুজাত, কুমার চক্রবর্তী এবং সুপ্রিয়া কুন্ডু। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী রেজিনা ওয়ালী, ঝর্ণা সরকার এবং আহসানউল্লাহ তমাল। নৃত্য পরিবেশন করেন নৃত্যসংগঠন ‘বুলবুল একাডেমী অব ফাইন আর্টস (বাফা)’-এর নৃত্যশিল্পীরা। সংগীত পরিবেশন করেন সাজেদ আকবর, সালমা আকবর, শাহনাজ নাসরিন ইলা, মো. হারুন অর রশীদ এবং মুহা. আব্দুর রশীদ।

আগামীকাল ৪ঠা ফেব্রুয়ারি শনিবার অমর একুশে বইমেলার ৪র্থ দিন। এদিন মেলা শুরু হবে সকাল ১১টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।

বাংলাদেশ সময়: ০০০৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০২৩
এইচএমএস/জেডএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।