ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

আমার শিক্ষক, আমার গুরু বেলাল চৌধুরী

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৮
আমার শিক্ষক, আমার গুরু বেলাল চৌধুরী বেলাল চৌধুরী

নতুন রুচির সাপ্তাহিক পত্রিকা বলতে ১৯৭৮-৭৯ সালে ‘সচিত্র সন্ধানী’কেই বোঝাতো। বেলাল চৌধুরী ছিলেন তার নির্বাহী সম্পাদক। গাজী শাহাবুদ্দিনের ৫৬ সালের সিনেমা পত্রিকার নতুন রূপের ‘সন্ধানী’ তখনকার সাপ্তাহিক বিচিত্রার বিপরীতে নতুন এক ধারার জন্ম দিলো বেলাল ভাইয়ের নেতৃত্বে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে খণ্ডকালীন কন্ট্রিবিউটর হিসেবে গদ্য প্রতিবেদনের হাতেখড়ি হয় বেলাল ভাইয়ের অপার সান্নিধ্য ও প্রশ্রয় পেয়ে। এসব মনে হলে কেন জানি না নিজের মধ্যে অহঙ্কার জন্মায়, গর্ববোধও করি।

আমার দায়িত্ব ছিল ‘বিশাল বাংলা’ বলে একটি পাতার ফিচার লেখা।

ফিল্ম সোসাইটির খসরু ভাই (মুহম্মদ খসরু)  আমাকে প্রথম বেলাল ভাইয়ের কাছে নিয়ে যান। ইতিমধ্যে জেনেছি তিনি অনেকদিন কলকাতায় ছিলেন, কেন ছিলেন জানি না। কিন্তু কলকাতার সব বড়ো বড়ো লেখকের সাথে তার সুসম্পর্ক আছে জেনে তার সামনে গেলে আমার কেমন যেন একটা অনুভূতি কাজ করতো। প্রথম দিনেই আমাকে বললেন, কী লিখতে চাও? বললাম, আপনি বলেন। তিনি একটা ইংরেজি বই আমাকে দিলেন।  একজন বাংলাদেশি ব্যাংকার ফজলুল কাদের কাদেরী তখন তার পাশে বসা। তিনি তার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললেন, এই বইটি ইনি সঙ্কলন করেছেন, বাংলাদেশে যুদ্ধের সময় বিদেশি পত্র-পত্রিকায় কী কী রিপোর্ট হয়েছে তার অনেক এখানে আছে। তুমি এগুলো নিয়ে একটা একটা বাংলা রচনা লিখো।

বেশ ক’দিন পড়াশুনা করে লিখলাম যা সন্ধানীর প্রচ্ছদে টাইটেল করে ছাপা হলো, আমার লেখা প্রথম রচনা ‘বিদেশী পত্র-পত্রিকায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ’। বেলাল ভাই যখন-মন-যা-চাইতো বলতেন, আমি লিখেও ফেলতাম। একদিন বললেন, আচ্ছা সায়ীদ ভাইরে ধরো (সাইয়িদ আতীকুল্লাহ), প্রথম প্রেম নিয়ে একটা রচনা করো। সাহস করে বাংলাসাহিত্যের এক রাগী লেখকের অফিসে গিয়ে হাজির হলাম;  সফলও হলাম। , ছাপা হলো ‘নিকষিত হেম’ নামে। বেলাল ভাই বললেন, আজ থেকে ছুটির পরে তুমি নিয়মিত আমার সাথে আড্ডায় যাবা!

মনে হয় এই সেদিনের কথা! মঈনুদ্দিন খালেদ আর আমি কুমিল্লা গেলাম ময়নামতি শালবন বিহার নিয়ে প্রচ্ছদ লিখতে। কলকাতা গেলাম নাচের শিল্পী বুলবুল চৌধুরীর নাচের স্ক্রিপ্ট নিয়ে কাজ করতে হবে। বেলাল ভাইয়ের নির্দেশ, 'এইসব তো কেউ জানে না, তুমি এইটা ধরো, আই পি টি এ নিয়ে লিখো'। চিঠি লিখে দিলেন বুলবুল চৌধুরীর স্ত্রী আফরোজা বুলবুলের কাছে। সেই চিঠি পেয়ে যখন আফরোজা বুলবুলের কাছে গেলাম, এক নতুন জগতের সন্ধান পেলাম।  

'বেলাল পাঠিয়েছে? আমি তোমাকে সব বলবো'। প্রতিভা মোদক যিনি পরে আফরোজা বুলবুল হয়েছিলেন, আমাকে বাংলা নাচের এক নতুন ইতিহাস পড়ালেন। বুলবুল চৌধুরীর লেখা উপন্যাস ‘প্রাচী’ হাতে পেলাম। বেলাল ভাই বললেন, 'উনার গল্প আছে, সুধীন দত্ত ছেপেছেন ‘পরিচয়’ পত্রিকায়, বের করো। আর এসব বের করে করে লিখেছি নানা রকম ইতিহাসমাখা ফিচার। '

এই জ্ঞান-অন্বেষণে ডুবিয়ে দিয়ে বেলাল ভাই আমাকে কোথা থেকে কোথায় নিয়ে এলেন, শেষ জীবনে তাকে সব জানাতে পারলাম না। সৌভাগ্যবশত জীবনের প্রথম পারিশ্রমিকটাও তার হাত থেকেই নিয়েছিলাম।  

বেলাল ভাই, আপনি-ই আমার লেখকজীবনের প্রথম গুরু, আমার বিনম্র শ্রদ্ধা।

রেজা সেলিম: পরিচালক, আমাদের গ্রাম

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৮
এমজেএফ/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।