খড়দহের বইমেলা এবার ১৯ বছরে পা দিয়েছে। সেইসঙ্গে অন্যান্য বারের মতোই শহরতলির মানুষের ঢল নেমেছিল মেলাটির শুক্রবারের (২১ ডিসেম্বর) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে।
তিল ধারণের স্থান ছিল না সভাস্থলে। আর সেই অনুষ্ঠানে ২৫ মিনিটের বক্তব্যে সবার মন জয় করে নেন ‘দেশ ভাগের পর’, ‘কালো ঘোড়া’, ‘পরাধীনতা’র মতো কালজয়ী বইয়ের লেখক ইমদাদুল হক মিলন।
এসময় জনপ্রিয় এ কথাসাহিত্যিক বলেন, একসময় পশ্চিমবঙ্গের লেখকরা বাংলাদেশের বিভিন্ন বইয়ের উদ্বোধন করতেন। এখন এই বইমেলায় বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে উদ্বোধন করতে আসা সত্যিই গৌরবের।
‘কলকাতা থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে ছোট্ট শহরতলি খড়দহ। উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বেশকিছু প্রথম সারির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কারণে খড়দহের একটি নিজস্ব বুদ্ধিজীবী সমাজ আছে এবং বই নিয়ে চর্চার একটা চলন আছে। আর আছে বাংলাদেশের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ’, বলেন বইমেলা কমিটির আশিস মুখোপাধ্যায়। ‘এখানে বসবাসরত অধিকাংশ মানুষেরই শিকড় বাংলাদেশে। আজও বাংলাদেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে আছেন এখানকার মানুষের আত্মীয়-স্বজন। তাই আমরা বইমেলায় বাংলাদেশের কাউকে আনার চেষ্টা করি। মিলন ভাইকে আনতে পেরে আমরা খুব খুশি’, আশিস এও বলেন।
‘পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে যতো বইমেলা হয়, সেগুলোর মধ্যে খড়দহের মেলার আলাদা স্থান আছে। কারণ এখানে অনেক বই বিক্রি হয়। স্বল্প পরিসরের মেলাটিতে এতো মানুষের উপস্থিতি বুঝিয়ে দেয় যে, সাহিত্য চর্চা হয় খড়দহে’ বলেন ইমদাদুল হক মিলন।
নিজের বক্তব্যে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বাংলা ভাষা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি কী কী বলেন, তা খড়দহের মানুষকে শুনিয়েছেন এই কথাসাহিত্যিক। তিনি বলেন, এমন একটি ভাষা আমাদের, যার জন্য হাজার হাজার মানুষ প্রাণ দিয়েছেন। তার বক্তব্যে বারবার ফিরে এসেছে- মুক্তিযুদ্ধের কথা আর পাকিস্তানি হানাদার এবং তাদের সহযোগী রাজাকার বাহিনীর কথা।
সভাস্থলে উপস্থিত অনেকেই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন যখন তিনি পাক সেনাদের বর্বরতার ১০টি কাহিনী শোনান। আট দিনের শিশুকে গরম জলে নিক্ষেপ করার গল্পটা শুনে চোখে জল এসে যায় লক্ষ্মী সাহার।
‘আমরা খুলনার মানুষ। পরিবারের অনেকেই মুক্তিযুদ্ধের সময় এপারে চলে আসে। বাবার কাছে শোনা গল্পগুলো আজ তাজা করে দিলেন মিলন ভাই’, বললেন ৪০ বছর বয়সী এক গৃহবধূ। অনুষ্ঠানে অনেকেই আবেগে ভাসলেন। অনেকেরই পুরোনো স্মৃতি তাজা হলো। তবে স্মৃতিচারণার সঙ্গে সঙ্গে ইমদাদুল হক মিলন সাহিত্যিকদের দায়িত্বের কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। সমাজের অনেক নাজায়েজ প্রথা দূর করার ক্ষেত্রে সাহিত্য যে কতোটা কার্যকরি ভূমিকা নিতে পারে, তা বলতে গিয়ে ‘নূরজাহান’ গল্পের উল্লেখ করেন তিনি।
ফতোয়া দেওয়া আজ অনেক কমে গেছে, আশার আলো শুনিয়ে বক্তব্য শেষ করেন ইমদাদুল হক মিলন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৮
টিএ