নাট্যধারা’র প্রযোজনা চার্লি
২০১৮’র অন্যতম নতুন প্রযোজনা ‘চার্লি’ নিয়ে মঞ্চে আসে নাটকের দল নাট্যধারা। নাটকটি রচনার পাশাপাশি এর নির্দেশনা দিয়েছেন লিটু সাখাওয়াত।
নাটক সম্পর্কে নাট্যকার ও নির্দেশক বলেন, আমাদের চার্লি আসলে এক অপূর্ণতা; যার পূর্ণতায় জীবনের মানে খুঁজে পাওয়া যাবে। আট আনার অর্থনৈতিক মুক্তি, আট আনার সাংস্কৃতিক মুক্তি, আট আনার সাম্প্রদায়িক মুক্তি আর আট আনার মানবিক মুক্তি। মোট দুই টাকা। দুই টাকার প্রাপ্তিতে জীবনের মানে মিলবে। তাই তো পুরো নাটক জুড়ে আমরা চার্লিকে দেখি সদা ব্যস্ত দুই টাকার সন্ধানে।
শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার হলে এ বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় নাটকটির উদ্বোধনী প্রদর্শনী।
‘হাছনজানের রাজা’ নিয়ে প্রাঙ্গণেমোর
বাংলাদেশের প্রথম সারির নাট্যদল প্রাঙ্গণেমোর মঞ্চে এনেছে মরমী গীতিকবি হাছন রাজাকে নিয়ে নাটক ‘হাছনজানের রাজা’। এটি প্রাঙ্গণেমোরের ১৩তম প্রযোজনা। সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, রামপাশা, লক্ষণ শ্রী আর সিলেটের একাংশ নিয়ে পাঁচ লাখ বিঘার বিশাল অঞ্চলের জমিদার ও মরমী গীতিকবি হাছন রাজা। তাকে নিয়ে নাটকটি লিখেছেন শাকুর মজিদ এবং নির্দেশনা দিয়েছেন অনন্ত হিরা।
নাটকে গতানুগতিক ধারায় হাসন রাজার জীবনী তুলে ধরার পরিবর্তে হাসন রাজা এসেছেন এই প্রজন্মের তারুণ্যের আড্ডায়, ফেসবুকে। তরুণেরা নৌকায় ভ্রমণে বের হন ভরা পূর্ণিমা রাতে। একসময় তাদের সঙ্গে দেখা হয় হাসন রাজার। তরুণদের সেই আড্ডায় সঙ্গিনীদের নিয়ে মিশে যান হাসন রাজা। কখনো তার সঙ্গে সেলফি তোলেন, তাকে নিয়ে ফেসবুকে লিখছেনও তরুণেরা! কখনো বাস্তবে, কখনো কল্পনায়।
গান-সংলাপ-আলো-ছায়ায় বাংলাদেশে ভাটি অঞ্চল হয়ে উঠবে মঞ্চ। সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, লক্ষ্মণছিড়ি আর রামপাশা মিলিয়ে যে বিশাল ভাটি বা হাওর অঞ্চল, সেখানকার পাঁচ লাখ বিঘায় জমিদারি ছিল যার, মঞ্চে দেখা যাবে সেই দেওয়ান হাসন রাজা চৌধুরী জমিদারের বর্ণিল ও বৈচিত্র্যময় জীবন। সেই জীবনের এক প্রান্তে হাসন রাজা অত্যাচারী প্রেমিক, স্বেচ্ছাচারী, বেখেয়ালি।
অন্য প্রান্তে হাসন ত্যাগী, মানবদরদি। বিশাল জমিদারি ভাগ-বাঁটোয়ারার মাধ্যমে জনহিতকর কাজের জন্য ওয়াক্ফ করে পিয়ারির সন্ধানে ভাওয়ালি নৌকায় উঠে বসা। যার যাত্রার অন্তিম উপলব্ধি পিয়ারির মাঝে নিজেকে এবং সৃষ্টিকর্তাকে খুঁজে পাওয়ার মধ্য দিয়ে। নাটকের শেষে দেখা যাবে, আলো নিভে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মিলিয়ে যেতে থাকেন হাসন রাজা। বাস্তবে ফিরে আসেন তরুণেরা।
২০ এপ্রিল বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে নাটকটির উদ্বোধনী প্রদর্শনী হয়।
নাট্যলোকের প্রযোজনা রূপসুন্দরী
নাট্যকার মাহবুব আলম ‘রূপসুন্দরী’ নাটকে নারীর এক পরিবর্তিত রূপ নির্মাণের চেষ্টা করেছেন। এতে তিনি তুলে ধরেছেন নারীর চিরায়ত নির্যাতনের একটি চিত্র। যুগে যুগে নারীরা কিভাবে ভোগবাদী পুরুষের দ্বারা নির্যাতিত হয়ে আসছে তারই এক শৈল্পিক রসায়ন ফুটে উঠেছে এই নাটকে। যা নির্দেশক অনিক কুমার সাহার প্রাণবন্ত দৃশ্যকাব্যে রূপায়ন করেছেন। তার অনবদ্য সৃজনালোয়ে নাট্যলোক-এর উদ্যোমী নাট্যকর্মীদের নিরলস পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে নির্মিত হয়েছে নাটকটি।
ঠান্ডু রায়হানের আলোকায়নে নাটকের আবহ সঙ্গীত করেছেন শিশির রহমান এবং কোরিওগ্রাফি করেছেন ফারহানা কাঙ্ক্ষিত। ১৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় সিরাজগঞ্জের ভাসানী মিলনায়তন মঞ্চে উদ্বোধনী মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে থিয়েটার অঙ্গনে যাত্রা করে ‘রূপসুন্দরী’।
দ্যাশবাংলা প্রযোজনা ‘কালিন্দী’
ধর্ম তান্ত্রিক পরিবারের কন্যা কালিন্দী। বাবা ভাসান গায়ক। তার জীবনের চারপাশ যেনো মনসার সাপের ফনায় ঘেরা। কিন্তু তার ধমনিতে প্রবাহিত শিল্প-প্রেমের স্রোত তাকে জীবনের দিকে টানতে থাকে। সে বেরিয়ে এসেছিল ধর্মের খোলস ভেঙে প্রাণ ও প্রণয়ের টানে। শিল্প-যাত্রায় সহযাত্রী হয়েছিল মানুষের সুখ দুঃখের ভজন গায়ক আলাল গায়েন। যে গায়েন তার শিল্প-সৃজনে অনুপ্রেরণা মেনেছিল কালিন্দীর দু’টি চরণ।
কালিন্দী যাচনা করেছিল প্রেম। কিন্তু গায়েন মাঝ পথে উল্টো যাত্রা করে, পীরের মুরিদ হয়। পরকাল ও কবরের অন্ধকারে জীবনের অধিক সুখ খোঁজে। তার সুর ও পয়ারে মুখরিত আসরের আলো ক্রমশ নিভে যায়। ভেঙে যায় শিল্প-সংসার। ক্ষত-বিক্ষত হয় কালিন্দীর জীবন। পীর পূজার নিরন্তর সঙ্গীতে বদলে যাওয়া ভুবনে আত্ম বিসর্জন দেয় কালিন্দী।
এমন কাহিনী নিয়েই নাট্যদল দ্যাশবাংলা প্রযোজনা করেছে তাদের ১২তম প্রযোজনা কালিন্দী। নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের ‘যৈবতী কন্যার মন’ কথা নাট্যের দু’টি অংশ ‘কালিন্দী’ ও ‘পরী’ থেকে ‘কালিন্দী’ অংশকে নতুন করে মঞ্চে নিয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন রশিদুল ইসলাম রাজা। গত ১৭ এপ্রিল সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার পরীক্ষণ থিয়েটার হলে নাটকটির উদ্বোধনী মঞ্চায়ন অনুষ্ঠিত হয়।
নন্দীমুখ প্রযোজনা আমার আমি
শ্রীমতি বিনোদিনী দাসী। মাত্র ১২/১২ বছর বয়সে তিনি প্রথম মঞ্চে প্রদীপের আলোয় নিজেকে উদ্ভাসিত করেন কলকাতার গ্রেট ন্যাশনাল থিয়েটারে। ‘শত্রুসংহার’ নাটকের মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে ক্রমেই তার অভিনয় দক্ষতা মুগ্ধ করেছিল মানুষের হৃদয়। মনীষীদের প্রশংসা এবং সেই সময়ের খবরের কাগজের পাতায় বড় বড় করে লেখা হতো তাকে নিয়ে হেডলাইন। কিন্তু এতসবের পরও খ্যাতি ও ক্ষমতার চরম সিদ্ধির লগ্নে ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দের পহেলা জানুয়ারি রঙ্গালয়ে তার অভিনয় জীবনের ইতি টানেন তিনি।
প্রশ্ন হলো কেন তিনি অভিনয় ছেড়ে দিলেন? কি এমন ঘটনা ঘটেছিল? শ্রীমতি বিনোদিনী দাসী তার আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘আমার খাতা’, ‘আমার কথা’ ও ‘আমার অভিনেত্রী জীবন’-এ তার হৃদয়ের বপন করা যন্ত্রণার কথা তুলে ধরেন। সেই যন্ত্রণারই এক প্রামাণ্যচিত্র নন্দীমুখের প্রযোজনা ‘আমার আমি’।
ইতিহাস আশ্রিত এ নাটকটি ইতিহাসের চরিত্রকে উপজীব্য করে নির্মিত হয়েছে। নাটকটি রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন অসীম দাস। এর প্রথম মঞ্চায়ন হয় ১০ ফেব্রুয়ারি।
বাংলাদেশ সময়: ০৫৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১, ২০১৯
এইচএমএস/জেআইএম