এভাবেই নিজেকে ব্যক্ত করেন বিখ্যাত ভ্রমণ বিষয়ক লেখক অমরেন্দ্র চক্রবর্তী।
শুক্রবার (০৬ ডিসেম্বর) সকালে ‘কলম ও ক্যামেরায় অমরেন্দ্র চক্রবর্তী’ শীর্ষক আলোচনায় নিজের জীবনের বিভিন্ন সময়ের কথা বলেন, পাঠকদের সামনে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন তিনি।
লাল-কালো চেক শার্টের সঙ্গে বেশ মিল করে কালো চশমা পরে অনুষ্ঠানে দর্শকদের সামনে হাজির অমরেন্দ্র চক্রবর্তী। একটু পরেই হাসতে হাসতে বললেন, এই চশমা ইচ্ছাকৃত নয়। অ্যান্টার্টিকা ভ্রমণের সময় চোখে সমস্যা তৈরি হওয়ায় ডাক্তার বলেছে নিয়মিত চশমা পরতে। বলা যায় আমি অ্যান্টার্টিকা গিয়েই চোখের সমস্যায় পড়েছি। এ জীবনের এক তিক্ত অভিজ্ঞতা। তবে জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতাগুলোও একসময় হাসিমুখে গল্প করা যায়, কেননা জীবন অনেক বড়!
অ্যান্টার্টিকা ভ্রমণের বর্ণনা দিয়ে বলেন, যাত্রা পর্বে যখন পৌঁছাচ্ছি, তখন সমুদ্রে যতদূর চোখ যায়, শুধু সাদা। সমুদ্রের পানিতে ছড়িয়ে আছে বরফের অসংখ্য টুকরো। সেগুলো দেখতে আমাদের দেশের গ্রীষ্মের কাঠফাটা রোদে ফেটে যাওয়া মাঠের মতো। এরপর পেঙ্গুইন আর দানবাকৃতির পাখিদের মধ্যে পেঙ্গুইন বন্ধুসুলভ হলেও পাখিগুলো তা নয়। তাদের ইয়া বড় বড় ডানা। সে ডানার আঘাতে মৃত্যুও হয়েছে অনেকের। আর বরফের চাড়, তুষার, রোদ, সবকিছু মিলিয়ে অনন্য এক সৌন্দর্য।
তিনি বলেন, আমি ঘুরতে ভালোবাসি। আমার টেবিলের উপর সবসময় একটা ম্যাপ খোলা থাকে। পৃথিবীর উত্তর থেকে দক্ষিণ আমি ঘুরেছি নিজেকে আনন্দিত করার জন্য। ভ্রমণে শরীর আনন্দ পায়, চোখ আনন্দ পায়, মন আনন্দ পায়। তাই যত মন, তত ভ্রমণ।
বাংলাদেশ নিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের অনেক জায়গায় এখনো আমার যাওয়া হয়নি। আমি সিলেট যাইনি, বরিশাল যাইনি, সুন্দরবন যাইনি। তবে আমার এদেশে আরও ঘোরার ইচ্ছে আছে। যেটা আমরা ছোট্ট একটা জায়গা ভাবি, তা আসলে ছোট নয়, একটা বিশাল জায়গা।
ভ্রমণের তিক্ত অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, একবার জার্মানি গিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল। একটা শপিংমলে দুই হাজার ইউরো থেকে ১০০ ইউরো দিয়ে কিছু জিনিস কিনলাম। বাকি ১ হাজার ৯০০ ইউরো আমার ব্যাগে ছিল। তো এরপর ওখান থেকে রওয়ানা হয়ে স্টেশনে এসে ট্রেনে উঠবো। আমার সঙ্গে আরও একটা ব্যাগ ছিল। আমি ট্রেনের এক যাত্রীকে আমার হাতের ব্যাগটা ধরতে দিয়ে বড় ব্যাগটা ওঠাচ্ছি, তখন দেখি তিনি আর নেই, অন্যদিক দিয়ে চলে গেছেন! অথচ আমার ইউরোগুলো ছিল ওই ব্যাগেই। এরপর পুলিশ আসতে আসেত অনেকক্ষণ। তারপর বুক পকেটে কিছু খুচরো ছিল, সেটি দিয়েই হোটেলে এলাম। তখন আমি দীর্ঘদিন দুপুরে না খেয়ে থাকতাম। আর সকালে তো হোটেল থেকে নাশতা দিত। রাতেও ঠিক তেমনি নাশতার মতো কিছু একটা কম দামে কিনে খেতাম।
বিশ্ব পর্যটক হিসেবে পরিচিত অমরেন্দ্র বলেন, আমি ঘুরতে বেরুলেই সেখানকার মানুষের মুখগুলো লক্ষ্য করি, তাদের সঙ্গে কথা বলি। কেননা কথা বলার সময় যার মুখে হাসি আসে না, সেই শহরের সংস্কৃতি ভালো নয়।
এসময় তিনি নতুন লেখকদের কাহিনীতে বাস্তব চরিত্রের অভাব আছে বলে উল্লেখ করে বলেন, এখন এমন অনেক লেখা হচ্ছে যেখানে লেখক ওই দেশের কয়েকটি চরিত্রকে আমাদের সামনে তুলে আনছে। কিন্তু বাস্তবে আসলে তা নয়। দেখা যায় তিনি ওখানে কারোর সঙ্গে কথা বলেননি। চরিত্র সৃষ্টি করেছেন নিজের মনের মতো। যেন গল্পটা আরও রোমাঞ্চকর হয়। তবে এ ধরনের লেখা না লিখে বরং সত্যিই তাদের সঙ্গে কথা বলে লেখা উচিত আমাদের। তাতে লেখা আরও সমৃদ্ধ হয়।
অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বাতিঘরের কর্ণধার দীপঙ্কর দাশ। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন পাখি বিশেষজ্ঞ এবং ভ্রমণ প্রেমী লেখক এনামুল হক। আসরের শেষে অমরেন্দ্র চক্রবর্তীর তৈরি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০১৯
এইচএমএস/এইচএডি