ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

সম্পাদনার সঙ্গে পাঠরুচি তৈরিতে ভূমিকা ছিল আবুল হাসনাতের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০১৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০২১
সম্পাদনার সঙ্গে পাঠরুচি তৈরিতে ভূমিকা ছিল আবুল হাসনাতের

ঢাকা: ‘প্রখ্যাত সাহিত্য-সম্পাদক, চিত্রসমালোচক, কবি আবুল হাসনাত তার কাজের মধ্য দিয়ে বাঙালির মনোগঠনের পরিচ্ছন্ন ভাবধারা, স্বরূপের অনুসন্ধান ও বহুত্ববাদী সংস্কৃতির ভাবনাচিন্তায় যে-মাত্রা সঞ্চার করেছিলেন তা এদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার ক্ষেত্রকে প্রসারিত করেছে। বিশেষত এদেশে শিল্পকলা বিষয়ে মানুষকে উৎসাহী এবং গ্রন্থপাঠে আগ্রহী ও পাঠরুচি তৈরিতে তার ভূমিকা অনস্বীকার্য।

শুক্রবার (২৯ অক্টোবর) রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে প্রয়াত কবি আবুল হাসনাত স্মরণ অনুষ্ঠানে এসব কথা বললেন বক্তারা।

বিকেলে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত স্মরণ অনুষ্ঠান ও ‘আবুল হাসনাত স্মারক গ্রন্থ’ প্রকাশ উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

 স্বনামধন্য শিল্পী অদিতি মহসিনের রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশনার মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর আবুল হাসনাতের জীবনের উপর নির্মিত একটি সংক্ষিপ্ত তথ্যচিত্র দেখানো হয়।

অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, কবি তারিক সুজাত, ডা. সারওয়ার আলী এবং আবুল খায়ের লিটু। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন লুভা নাহিদ চৌধুরী।

আয়োজনে সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, হাসনাতের কাছে আমার অনেক ঋণ। সংবাদে দীর্ঘদিন আমি গাছপাথর নামে লিখি, সেটা আবুল হাসনাতের জন্য হয়েছিল। আহসাব হাবীবের পর আমরা পাই আবুল হাসনাতকে, এমন সম্পাদক আমরা আর পাইনি। সে লেখক তৈরি করতে পারতো। লেখা আদায় করে নিতে পারতো। আজ বাংলাদেশে প্রয়োজন সাংস্কৃতিক জাগরণ। আবুল হাসনাত এই সাংস্কৃতিক জাগরণের কাজটিই করতেন। আজ দেশের দুঃসময়ে আবুল হাসনাতের বড় প্রয়োজন ছিল।

ডা. সারওয়ার আলী বলেন, হাসনাত ছিল আত্মপ্রচার বিমুখ মানুষ। এই ধরনের  তাই আমরা সকলে তার সম্পর্কে জানতে পারছি মৃত্যুর পরে। জেনেছি সে আমাদের কতভাবে ঋণী করে গেছে। হাসনাত ছিল শিল্প-সাহিত্যের জ্ঞানের ভাণ্ডার।

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, তরুণ লেখক সৃষ্টিতে, তাদের উৎসাহ দিতে আবুল হাসনাত ছিলেন নিবেদিত প্রাণ। শিল্প বা সাহিত্য বিষয়ক যেকোন তথ্যের প্রয়োজনে আবুল হাসনাতের কাছ থেকে আমি সাহায্য পেয়েছি, পেয়েছি তার দিকনির্দেশনা।

রামেন্দু মজুমদার বলেন, যতই সাম্প্রদায়িক অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠুক, আমরা নিশ্চয়ই হাসনাতের স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলব।

তারিক  সুজাত তার বক্তব্যে বলেন, হাসনাত ভাই হঠাৎ চলে যাবেন, আমরা ভাবিনি। সাদামাটা হাসনাত ভাই কখনো নিজের কাজ ও কর্মকাণ্ড নিয়ে গর্ব করতেন না। ছিলেন একান্ত নিভৃতচারী। তিনি কিংবদন্তি সম্পাদক। আজ যখন মুক্তিযুদ্ধের  ৫০ বছর উদযাপন করছি তখন আমাদের মনে রাখতে হবে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম কবিতা সংকলন তিনিই করেছিলেন।

এ সময় আবুল হাসনাত একুশে পদক,  স্বাধীনতা পদক না পাওয়ায় তারিক সুজাত বলেন, ‘এতটা অবহেলা তার প্রাপ্য নয়। ’
মতিউর রহমান বলেন, হাসনাতের মৃত্যুর পর তাকে যেন আরও বেশি করে জানছি প্রতিনিয়ত। সেই বায়ান্নর আন্দোলন থেকেই একসাথে পাড়ি দিয়েছি বহু পথ। হাসনাত আমাদের সময়ের সেরা মানুষ।

এসময় বক্তব্য শেষে তিনি আবুল হাসনাতের ‘নষ্ট হয়ে যাচ্ছি’ কবিতা পাঠ করেন। আয়োজনে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন আবুল হাসনাতের স্ত্রী সাংবাদিক নাসিমুন আরা হক মিনু। স্মরণানুষ্ঠানে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ আবুল হাসনাতের কবিতা পাঠ করেন। অনুষ্ঠানে আবুল হাসনাতকে নিয়ে বেঙ্গল পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত ‘আবুল হাসনাত স্মারক’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

সমাপনী বক্তব্যে আবুল হাসনাত এর সহধর্মিণী নাসিমুন আরা হক বলেন ‘হাসনাত বই অনেক ভালোবাসত, পড়তে ভালোবাসত। আর প্রিয় ছিল চিত্রকর্ম। পরিবার, দেশ, জাতির প্রতি হাসনাতের ছিল প্রচণ্ড ডেডিকেশন। সাহিত্য ছিল তার প্রাণের উৎস। সে একদিকে যেমন ভীষণ সন্নাসী, তেমনি ভীষণ গৃহী। এতটা সাহিত্যের ঝোঁক থাকলেও পরিবারের প্রতি সে কখনও অবহেলা করেনি।

বাংলাদেশ সময়: ০০১৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০২১
এইচএমএস/এনএইচআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।