ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

আরও দুটি উপন্যাস লিখতে চেয়েছিলেন হাসান আজিজুল হক

রাবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০২১
আরও দুটি উপন্যাস লিখতে চেয়েছিলেন হাসান আজিজুল হক হাসান আজিজুল হক

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি): ‘ছোটগল্পের বরপুত্র’ হাসান আজিজুল হক। অসংখ্য কালজয়ী লেখার স্রষ্টা তিনি।

ছোটগল্প দিয়ে যার যাত্রা শুরু। আজীবন সাহিত্যকীর্তির প্রায় পুরোটাজুড়ে যিনি ছোটগল্পের ফুল ফুটিয়ে গেছেন। বলেছেন মানুষের জীবন সংগ্রামের গল্প। সেই জ্যোতির্ময় নক্ষত্রতুল্য কিংবদন্তি চিরবিদায় নিলেন।  

সোমবার (১৫ নভেম্বর) রাত সোয়া ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় হাউসিং সোসাইটির (বিহাস) বাসভবনে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তার প্রিয় কর্মস্থল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে তাকে সমাহিত করা হয়েছে।

বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তি এই লেখক জীবনাবসানের আগে ‘তরলাবালা’ ও ‘মাটির বাড়ি যতোদিন চন্দ্র-সূর্য' নামে দুটি উপন্যাস উপহার দিতে চেয়েছিলেন। এই সাহিত্যকর্ম দুটিকে সাহিত্যচর্চায় নতুন মাত্রা এনে দিবে বলে আশাবাদী ছিলেন।

এমনটাই জানালেন হাসান আজিজুল হকের ঘনিষ্ঠজন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের সভাপতি ও গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ বকুল।

বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজন নারীকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া বিয়োগান্তক ঘটনা নিয়ে বড় পরিসরে ‘তরলাবালা’ উপন্যাসটি তিনি লিখতে চেয়েছিলেন। তবে, তা আর হয়ে ওঠেনি। বেশ ছোট পরিসরে তা লিখে বাংলাদেশে তার বেশ কিছু বইয়ের প্রকাশক ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশের জহিরুল আবেদীন জুয়েলের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। এটি এখনো প্রকাশিত হয়নি। তবে, যে মাপের উপন্যাস হিসেবে এটি লিখতে চেয়েছিলেন তা আর হয়ে ওঠেনি।

আরেকটি উপন্যাস লেখার খুব ইচ্ছে ছিল তার। এর নাম তিনি দিয়েছিলেন ‘মাটির বাড়ি: যতোদিন চন্দ্র, সূর্য’। উপন্যাসটি পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের যবগ্রামে ছেলেবেলায় তার বাবার মাটির বাড়ি তৈরির গল্প। এই গল্পেও আগুনপাখির মতো উঠে আসত সে সময়ের রাঢ়বঙ্গের জীবন, সংস্কৃতি, সংগ্রাম, হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতির চিত্র। কিন্তু মাত্র ১০-১১ পৃষ্ঠা লেখার পরে করোনা মহামারিতে গৃহবন্দী হয়ে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ায় আর শেষ করা হয়ে ওঠেনি।
 
ড. সাজ্জাদ বকুল বাংলানিউজকে বলেন, ‘তরলাবালা’ মূলত একটি নারীর বাস্তব পারিবারিক ও সাংসারিক জীবন নিয়ে ট্রাজিটিক উপস্থাপনা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এটি তিনি শুরুই করতে পারেননি। ‘মাটির বাড়ি যতদিন চন্দ্র-সূর্য’ তার গ্রাম যবগ্রামে বাড়ি নির্মাণের বিষয় নিয়ে একটি লিখা।

তিনি আরও বলেন, এই দুটি লিখা শেষ করে যেতে পারলে তিনি হয়তো খুশি হতেন। বাংলা সাহিত্যের জন্যও এটি নতুন সংযোজন হতো। আরও উন্নত হতো। তিনি কয়েকবারই বলেছিলেন এটি তার আরেকটি খুব ভালো লেখা হতে যাচ্ছে। মাঝেমধ্যে তিনি আমাকে ডাকতেন। তাকে লিখতে সহযোগিতা করতাম। তিনি বলতেন; আমি কম্পোজ করে দিতাম। কিন্তু মাত্র ১০-১১ পৃষ্ঠা লেখার পরে করোনা মহামারিতে গৃহবন্দী হয়ে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ায় আর শেষ করা হয়ে ওঠেনি।

হাসান আজিজুল হক ১৯৩৯ সালে ভারতের বর্ধমান জেলার যব গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫৮ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে দর্শনে স্নাতক এবং ১৯৬০ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি লাগ করেন। তিনি ১৯৭৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন এবং ২০০৪ সালে প্রফেসর হিসেবে অবসরগ্রহণ করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেবার পূর্বে ১৯৬০ সাল থেকে তিনি কয়েকটি কলেজে শিক্ষকতা করতেন। তিনি ২০০৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ হিসেবে যোগদান করেন।

হাসান আজিজুল হক তার অসাধারণ সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ দেশ-বিদেশ থেকে অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন। তিনি ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৯৯ সালে একুশে পদক ও ২০১৯ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন। এর পাশাপাশি তিনি লেখক শিবির পুরস্কার, অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, অগ্রণী ব্যাংক সাহিত্য পুরস্কার, ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার-সম্মাননা অর্জন করেন।  

সাহিত্যচর্চার স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি ২০১৮ সালে 'সাহিত্যরত্ন' উপাধি লাভ করেন। ২০১২ সালে ভারতের আসাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং ২০১৮ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সন্মানসূচক ডি-লিট ডিগ্রিতে ভূষিত করে।

তার রচিত জনপ্রিয় গল্পগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে সমুদ্রের স্বপ্ন শীতের অরণ্য, আত্মজা ও একটি করবী গাছ, জীবন ঘষে আগুন, নামহীন গোত্রহীন, পাতালে হাসপাতালে, আমরা অপেক্ষা করছি, রোদে যাবো, রাঢ়বঙ্গের গল্প ইত্যাদি। আগুনপাখি ও শামুক যথাক্রমে তার রচিত প্রথম ও শেষ উপন্যাস। তার লেখা গল্পগুলো হিন্দি, উর্দু, রাশিয়ান ও জাপানিজ ইত্যাদি ভাষায় অনূদিত হয়েছে।

তিনি মৃত্যুর সময় তিন কন্যা এবং এক পুত্র রেখে গেছেন। তার সহধর্মিনী শামসুন নাহার ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ইন্তেকাল করেন।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০২১
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।