ঢাকা: বই বেঁচে থাকে লেখার গুণে। আর লেখাকে প্রাণ দেন লেখক।
শনিবার (২০ নভেম্বর) লেখক প্রশান্ত মৃধার ৫০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত 'পঞ্চাশের মগ্নতায়' শীর্ষক অনুষ্ঠানে তার লেখা নিয়ে এমনটাই মন্তব্য করলেন তার লেখক বন্ধুরা। রাতে এই আয়োজন অনুষ্ঠিত হয় রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বাতিঘরে। এ সময় লেখককে ঘিরে প্রিয়জনদের স্মৃতিচারণ, শুভেচ্ছা জানানো এবং লেখক বন্ধুদের গল্প-গানে মুখর হয়ে জন্মদিনের আয়োজন।
অনুষ্ঠানে লেখক প্রশান্ত মৃধাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে কথাসাহিত্যিক মাহবুব মোর্শেদ বলেন, বর্তমান সময়ে একটা বিষয় লক্ষ্য করি। তা হলো কবি-সাহিত্যিকরা ৫০ পেরুচ্ছেন, কিন্তু অনেকক্ষেত্রেই তাদের মূল্যায়ন সঠিকভাবে হচ্ছে না। এর কারণ হলো আমরা পড়া থেকে সরে আসছি। ফলে যেটা হয়, কবি-সাহিত্যিকরা অনেক কিছু লিখে ফেললেও তারা কী লিখেন, আমরা তা জানিনা। এই জায়গাটা থেকে আমাদের সরে আসা উচিত। আর প্রশান্ত মৃধা তো তার লেখনীর মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে আলাদা স্থান দখল করে নিয়েছেন।
কথাশিল্পী স্বকৃত নোমান বলেন, যেসকল অগ্রজ লেখক তাদের অনুজদের লিখতে অনুপ্রাণিত করেন এবং পথপ্রদর্শন করেন, প্রশান্ত মৃধা তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি একদিকে যেমন লেখার প্রশংসা করেন, তেমনি ভুলত্রুটিও ধরিয়ে দেন; যা অন্য কেউ করে না। এটি অনেক বেশি অনুপ্রেরণার। তাকে নিয়ে বললে বা লিখলে অনেক বেশি লেখা যায়।
কবি আলতাফ শাহনেওয়াজ বলেন, আমাদের এখানে একটা চল আছে- যে কবিতা লিখে সে কেবল কবিতায় লেখে, যে কথা সাহিত্যিক সে কেবল কথাসাহিত্যিকই। তবে প্রশান্ত মৃধা তা নয়, তার লেখায় বিচিত্রতা আছে। তিনি খুব ভালো গল্প করতে পারেন।
লেখক শামীম রেজা বলেন, অন্য দেশে যখন কোন লেখকের পঞ্চাশ বছর পূর্ণ হয়, তখন তাদের লেখাগুলো নিয়ে আলাদা করে বিশ্লেষণ হয়, গবেষণা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে সেই চলটি নেই। তবে সময় এসেছে সেটি শুরু করার। আর প্রশান্ত মৃধার লেখাগুলো তেমনি বিশ্লেষণ ও গবেষণার দাবিদার।
কবি শিমুল সালাহ্উদ্দিন বলেন, লেখক প্রশান্ত মৃধা শুধুমাত্র একজন লেখক নয়, বরং তিনি একজন ইন্টেলেকচুয়ালও। তার জায়গা থেকে তিনি আমাদের জন্য অনেক লিখেছেন। এখন আমাদের কাজ তার লেখাগুলো পাঠ করা।
লেখকের বন্ধু আহমদ মোস্তফা কামাল বলেন, এমন হয়েছে যে তার কিছু লেখার ধারা আমার কাছে কেমন যেন লেগেছে। একটু অতিরিক্ত বর্ণনা। আমি তার সঙ্গে যখন সেগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি, তখন সে তার উত্তর না দিয়ে বরং আরও দারুণ করে লিখে উত্তর দিয়েছে। এটা আমাকে মুগ্ধ করে। সে বিভিন্ন ধাঁচে লিখতে পারে। এখন আমাদের উচিত তার লেখাগুলো আরও বেশি করে পড়া।
আয়োজনে লেখককে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে আরও কথা বলেন লেখকের ছেলে তাঁতা, গল্পকার মোস্তফা অভি, প্রকাশক রবিন আহসান, সুফি সুফিয়ান, লেখক মুজতবা আহমেদ মোরশেদ, অধ্যাপক মাসুদুজ্জামান, নিয়াজ মোহাম্মদ তারিক, শাহেদ কায়েস, মার্জিয়া লিপি, রাখাল রাহা, মশিউর আলম, রাজীব নূর, ফাতেমা আবেদীন, শামীমুল হক শামীম, আলফ্রেড খোকনসহ আরও অনেকে।
এ সময় বক্তারা বলেন, সত্যিকারের সৃজনের পথে যারা হাঁটেন, তাদের মধ্যে লেখক প্রশান্ত মৃধা অন্যতম। সে তার লেখনীর মধ্য দিয়ে বাংলা সাহিত্যে একটি জায়গা তৈরি করে নিয়েছে। একদিকে যেমন আন্তরিক এবং সহজ, সরল, সুন্দর মনের মানুষ, ঠিক তেমনি তার ছাপ রেখেছেন লেখনীতেও।
আয়োজনের শেষ পর্যায়ে লেখককে নিয়ে কথা বলেন লেখক পত্নী ফারজানা সিদ্দিকা রনি। এ সময় তিনি লেখক প্রশান্ত মৃধাকে ব্যাখ্যা করেন বিভিন্ন দিক থেকে। বলেন তার সুখ-দুঃখের গল্প, লেখার গল্প, লেখা না আসার গল্প। সেই গল্পে আপ্লুত হন লেখক নিজেও। তারপর নিজের অনুভূতিতেই লেখক বলেন- বিগত দিনে যা করেছি, আগামী দিনগুলোতেও যেন তাই করতে পারি এটাই প্রত্যাশা। আর শিল্প-সাহিত্য একটা ব্যাপক যুদ্ধ। সমাজ-সংস্কৃতি সকলের সঙ্গেই এখানে যুদ্ধ করা লাগে। আমার এই যুদ্ধে যারা সহযোগিতা করেছেন, পাশে ছিলেন তাদের সবার প্রতি শ্রদ্ধা ভরে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
নাগরী প্রকাশনীর উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে গল্প কথার মাঝে মাঝে সঙ্গীত পরিবেশন এবং লেখককে ফুলের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন লেখকের বিভিন্ন বন্ধু ও শুভানুধ্যায়ীরা। আর পুরো আয়োজন সঞ্চালনা করেন লেখক লোপা মমতাজ।
বাংলাদেশ সময়: ২৩১১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০২১
এইচএমএস/কেএআর