ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বইমেলা

কেনার চেয়ে বাছাইয়ে মনোযোগী পাঠকরা, বিক্রি বাড়ার আশায় প্রকাশকরা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৩
কেনার চেয়ে বাছাইয়ে মনোযোগী পাঠকরা, বিক্রি বাড়ার আশায় প্রকাশকরা ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: আব্দুল কাদের হানিফ, আশিকুর রহমান ও জুয়েল রহমান। তিন বন্ধুই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন।

কর্মজীবনে যাওয়ায় পূর্বের মতো একসঙ্গে আড্ডা দেওয়া হয়ে ওঠে না। শিক্ষা ক্যাডার হিসেবে কর্মরত জুয়েল ছুটি পেয়ে চলে আসলেন ঢাকায়। স্মৃতি রোমন্থনের জন্য নির্বাচন করলেন বইমেলার বিকেল বেলা। তিন বন্ধুই স্মৃতি রোমন্থন, আর নতুন স্মৃতি জমিয়ে ফিরেছেন।  

বইকেনার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলানিউজকে তারা বলেন, বইমেলায় প্রতিবারই এক-দুবার আসা হতো। আজকে প্রথমবার আসলাম। তাই বই কিনি নাই। তবে বেশ কয়েকটি বই পছন্দ করেছি। প্রকাশকরাও এখনো সব আনতে পারেননি। শেষদিকে এসে তালিকা করে বই কিনব একইসঙ্গে উপহারও দেব।
 
রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) ব‌ইমেলায় বই কেনার চেয়ে বই নির্বাচন আর ঘোরাঘুরিতে পাঠক-দর্শনার্থীদের আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে। তবে সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিক্রিও ভালো হবে মনে করছেন প্রকাশকরা। এদিন বিকেল ৩টায় উন্মুক্ত করা হয় মেলার দ্বার। পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব সহকারে উচ্ছ্বাস নিয়ে মেলায় প্রবেশ করেন তারা। এবার পরিধি বাড়ায়, আর পানি ছিটানোর কারণে পরিচ্ছন্ন মেলা দেখে কর্তৃপক্ষের প্রশংসা করছেন পাঠক-দর্শনার্থীরা। শিশুদের বইয়ের স্টলগুলোয় ছিল নান্দনিকতার ছোঁয়া।
 

মেলার সার্বিক পরিস্থিতি জানতে চাইলে পাঞ্জেরী প্রকাশনীর প্রকাশক কামরুল হাসান শায়ক জানান, মেলার প্রাথমিক পর্যায় হিসেবে এখন পর্যন্ত আমরা ভালো সাড়া পাচ্ছি। মেলার প্রথমদিকে বিক্রি স্বাভাবিকভাবেই কম হবে। এটা প্রতিবছরই হয়। তবে দিন যত যাবে ব‌ইয়ের বিক্রি আরও বাড়বে অবশ্যই। এখন মানুষ বই দেখছে। দেখে শুনে ব‌ই পছন্দ করবে এবং সিদ্ধান্ত নেবে কোন বইটা কিনবে। সুতরাং মেলার শেষের ১৫ দিন থেকে আমরা বিক্রি বাড়ার প্রত্যাশা করছি। আমাদের এই বার প্রায় ৭৫টির মত নতুন বই আসবে এবং এখন পর্যন্ত ৩৫টির মত বই মেলায় এসেছে।  
 
কাকলী প্রকাশনীর নাসির আহমেদের মতে, এবার মেলার প্রথম দিক হিসেব করলে বিক্রি ভালোই। তিনি বলেন, করোনার পর এইবার আবারও আগের মতো মেলা হচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে ভালো সাড়া পাচ্ছি। আমাদের এখনো সব বই মেলায় আসেনি। সবগুলো বই মেলায় এলে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেচা-বিক্রির পরিমাণ আরও বাড়বে।  
 
ক্রেতাদের‌ও অভিমত এখন ব‌ই দেখার সময়। মেলায় এবার নতুন কি বই এলো, ব‌ইয়ের দাম সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে ব‌ই কিনবেন বলে জানান তারা। বইয়ের টানে আসা ষাটোর্ধ্ব জোবায়দুল হক বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিবছর ব‌ইমেলায় আসি। সামনে আরেকবার আসবো। তাই এখন বই কেনার জন্য তাড়াহুড়ো করতে চাচ্ছি না। ‌ কিছু ব‌ই আগে থেকে তালিকায় আছে পাশাপাশি মেলা ঘুরে নতুন বই, যেগুলো সম্পর্কে জানিনা এখন সেগুলো দেখব এবং মনে ধরলে কিনব।
 
মেলার পঞ্চম দিনে নতুন বই এসেছে ৭৩টি। বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্মরণ: সমরজিৎ রায় চৌধুরী শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাহিদ মুস্তাফা। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মইনুদ্দীন খালেদ এবং মুস্তাফা জামান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শিল্পী হাশেম খান।
 

প্রাবন্ধিক বলেন, বাংলাদেশের বরেণ্য শিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী হাতে লেখা বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম নকশাবিদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান লোগোসহ অনেক প্রতিষ্ঠানের লোগোর প্রণেতা। তিনি ছবি আঁকতেন আমাদের দেশের রূপবৈচিত্র্যকে বিষয়বস্তু করে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়েও ছবি এঁকেছেন তিনি। এছাড়া নিসর্গ ও মানুষ ছিল তাঁর প্রিয় বিষয়। গ্রামীণ দৃশ্যাবলি, সেই সঙ্গে তাঁর শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত দৃশ্যাবলি তাঁকে অনুপ্রাণিত করেছে। শিল্পী সমরজিৎ তাঁর জীবনব্যাপী প্রগতিশীল আদর্শ ও চেতনাকে ধারণ করেছেন। শান্তির অন্বেষায় তাঁর চিত্রপটে রং, রেখা, রূপ সব একাকার হয়ে আছে।

সভাপতির বক্তব্যে শিল্পী হাশেম খান বলেন, শিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী ছিলেন নিষ্ঠাবান একজন শিক্ষক। দৃঢ় মনোবলের অধিকারী এই শিল্পী চাটুকারিতাকে কখনও প্রশ্রয় দেননি বরং ভালোবাসা দিয়েই সহকর্মী ও শিক্ষার্থীদের মন জয় করেছিলেন। তিনি তাঁর নিজের চিত্রভাষা নির্মাণ করতে পেরেছিলেন।
 
লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কুদরত-ই-হুদা, বায়তুল্লাহ্ কাদেরী, আবু সাঈদ তুলু, ফরিদুর রহমান।  
 
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি আলতাফ হোসেন, আসলাম সানী এবং মারুফ রায়হান। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তি শিল্পী মীর বরকত, ইকবাল খোরশেদ এবং কাজী বুশরা আহমেদ তিথি।  

এছাড়া ছিল ফয়জুল আলম পাপ্পুর পরিচালনায় আবৃত্তি সংগঠন ‘প্রকাশ সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংগঠন’-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী ইয়াকুব আলী খান, সালাউদ্দিন আহমদ, সুজিত মোস্তফা, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী এবং প্রিয়াংকা গোপ। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন সুবীর চন্দ্র ঘোষ (তবলা), ইফতেখার হোসেন সোহেল (কী-বোর্ড), ফিরোজ খান (সেতার) এবং মো. হাসান আলী (বাঁশি)।  
 
সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে স্মরণ: কাজী রোজী এবং স্মরণ: দিলারা হাশেম শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন নাসির আহমেদ এবং তপন রায়। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন আসলাম সানী, শাহেদ কায়েস, আনিসুর রহমান এবং শাহনাজ মুন্নী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন অসীম সাহা।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০২৩
এসকেবি/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।