ঢাকা: অমর একুশে বইমেলার পর্দা উঠেছে বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি)। শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) ছিল প্রথম শিশুপ্রহর।
শুক্রবার বেলা ১১টায় বইমেলার শিশু চত্বরে শুরু হয় শিশুপ্রহর। আর প্রথম দিনেই শিশুদের পদচারণার মুখরিত হয়ে উঠে শিশু চত্বর। বই পড়ায় শিশুদের আগ্রহী করে তুলতে প্রতিবছরই বইমেলায় শিশুপ্রহরের আয়োজন করা হয়।
সরেজমিনে বইমেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, সরকারি ছুটির দিনে সকালে বইমেলার অন্যান্য অংশে পাঠক ও দর্শনার্থীদের তেমন ভিড় ছিল না। তবে শিশু চত্বর ছিল পাঠক ও দর্শনার্থীতে ভরা। অভিভাবকরা ছুটির দিনে তাদের সন্তানদের নিয়ে মেলায় ঘুরতে এসেছেন। শিশুরাও মেলায় ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন ধরনের বই দেখছে। কেউ কেউ তাদের পছন্দের গল্প, কবিতা, ছড়া বা কার্টুনের বই কিনছে।
রাজধানীর গেণ্ডারিয়া থেকে ছেলে, মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে বইমেলায় এসেছেন সরকারি চাকরিজীবী মীর সাব্বির আলী। তিনি বলেন, প্রতিবছর শিশু প্রহরে ছেলে-মেয়েকে নিয়ে মেলায় আসি। এখানে শিশুদের জন্য বিভিন্ন ধরনের আয়োজন থাকে। এসব দেখে তারা (ছেলে-মেয়ে) যেমন খুশি হয়, তেমনি বই পড়ার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়। তারা এ শিশুপ্রহর উপভোগ করে।
মীর সাব্বির আলীর ছেলে মীর আমানত আলীর বয়স ১১ বছর। সে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী। বইমেলা কেমন লাগে জানতে চাইলে মীর আমানত আলী বলে, প্রতিবছর বইমেলায় আসি। ঘুরতে ভালো লাগে। বই দেখতে ভালো লাগে। বেশি ভালো লাগে গল্পের বই। আর সিসিমপুরের কার্টুন ভালো লাগে। আমার পছন্দ হালুম।
বাবার সঙ্গে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে বইমেলায় এসেছে ৭ বছর বয়সী ইনহাম আজোয়া আলম। সে স্ট্যান্ডার্ড ওয়ানের শিক্ষার্থী। মেলা থেকে আন্ডার দ্য সি নামে একটি বই কিনেছে সে। বইমেলা কেমন লাগে জানতে চাইলে সে বলে, অনেক ভালো লাগে। বেশি ভালো লাগে গোয়েন্দা ও রহস্যের বই।
জাদুকর হিরিংবিরিং নামে একটি বই কিনেছে তাহনিম তাহি। ছোট এ শিশুটি জানায়, তার ভূত, জাদু এসবের বই ভালো লাগে।
তাহির বাবা আমিনুল শামীম বলেন, চেষ্টা করি প্রতিবছর সন্তানদের নিয়ে মেলায় আসতে। এতে তারা এ পরিবেশের সঙ্গে পরিচত হতে পারে। বই পড়ায় আগ্রহ বাড়ে।
বইমেলায় শিশু চত্বরে এবার দ্বৈতা প্রকাশ, জনতা প্রকাশ, টুনটুনি প্রকাশনী, শিশুর পড়া, নলেজ মিডিয়া পাবলিকেশন, সাত ভাই চম্পা প্রকাশনী, প্রগতি পাবলিশার্স, ঝিলমিল, শিশুকানন, শিশুবেলা, চিরন্তন প্রকাশ, বাবুই, তাকধুম, ঝিঙেফুল, সোনামনি, ইকরি বিকরি, ডাকসহ আরও অনেক শিশুদের বইয়ের স্টল রয়েছে।
শিশুপ্রহরের প্রথম দিনেই শিশুদের আনাগোনা বাড়ায় খুশি এসব স্টলের বিক্রয়কর্মী ও প্রকাশকরা।
ডাকের প্রকাশক ফেরদৌস আলম বলেন, আজ শিশুদের আনাগোনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শিশুরা তাদের অভিভাবকের সঙ্গে মেলায় আসছে। দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে, আবহাওয়াও ভালো আছে। এখনও খুব ভালো বেচাকেনা শুরু হয়নি। মেলার প্রথম দিকে বেশিরভাগই বই দেখতে আসে। দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে বেচাকেনা বাড়বে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।
বাবুই-এর বিক্রয়কর্মী আঞ্জুমান জারা বলেন, আজ মেলার দ্বিতীয় দিন হিসেবে পাঠকদের ভালোই সাড়া পাচ্ছি। শিশুরা দোকানে আসছে, বই দেখছে, অভিভাবকরা তাদের বই কিনে দিচ্ছেন। শিশুরা মজার মজার গল্প, জোকস ও গোয়েন্দা বই বেশি দেখছে ও কিনছে। এখনও তো মেলা অনেক বাকি। এ বছর ভালো বিক্রি হবে বলে আশা করেন তিনি।
শিশু চত্বরে শিশুদের জন্য বিভিন্ন বইয়ের স্টলের পাশাপাশি থাকে সিসিমপুরের বিশেষ আয়োজন। শিশুপ্রহরের প্রথম দিনে উদ্বোধন করা হয় সিসিমপুর কিডস কর্নারের। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা উপস্থিত হয়ে সিসিমপুর কিডস কর্নারের উদ্বোধন করেন।
সিসিমপুর কিডস কর্নারের উদ্বোধনের পর সিসিমপুরের কার্টুন চরিত্র হালুম, ইকরি, শিপু ও টুকটুকিরা মঞ্চে উঠে। এ সময় উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে শিশুরা। কার্টুন চরিত্রগুলো নেচে-গেয়ে নিজেদের পরিচয় দেয় শিশুদের সামনে। পাশাপাশি বই পড়তে তাদের আগ্রহী করতে গান ও নাচ পরিবেশন করে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০২৪
এসসি/আরবি