ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

আড়ম্বর মেলা, অনাড়ম্বর লিটলম্যাগ চত্বর

ফাহিম হোসেন, বিশ্ববিদ্যালয় করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২৪
আড়ম্বর মেলা, অনাড়ম্বর লিটলম্যাগ চত্বর

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: অমর একুশে বইমেলায় অষ্টম দিন চলছে। অন্যবারের তুলনায় এ বছর পাঠক-দর্শনার্থীদের উপস্থিতিতে সন্তুষ্ট প্রকাশক-বিক্রয়কর্মীরা।

মেট্রোরেলের সুবাদে দূরের যাত্রীরাও মেলায় ভিড় করছেন। তবে মেলা জমজমাট হলেও জৌলুস হারিয়েছে লিটলম্যাগ চত্বর। নেই পাঠকের উপস্থিতি; অধিকাংশ স্টলে শুধু ব্যানার ঝুলছে।  

এ বছর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত মঞ্চের কাছাকাছি গাছতলায় লিটলম্যাগ চত্বর স্থানান্তরিত হয়েছে। স্টল বরাদ্দ পেয়েছে প্রায় ১৭০টি সংস্থা।  

সরেজমিনে দেখা যায়, মেলায় ছোট পরিসরে স্টল খুলেছেন লিটলম্যাগ প্রকাশকরা। সেখানে লেখক-পাঠকের কোনো আগ্রহ নেই। মাঝেমধ্যে কেউ কেউ হয়তো আসছেন। তবে অধিকাংশ স্টলেই বিক্রয়কর্মীরা অবসর সময় ব্যয় করছেন। নেই আড্ডা, তর্কবিতর্ক; আগের আমেজ।  
মরিচিকা

লিটলম্যাগ চত্বরে কোনো কোনো স্টল খালি পড়ে আছে। কোনটিতে শুধু লাগানো আছে ব্যানার। কোথাও স্টল-বই আছে, তবে পাঠক না থাকায় তাড়া নেই প্রকাশক-বিক্রয়কর্মীদের। মেলায় ধাবমান, ঢাকা মেট্রো, ঘুংঘুর, চিরহরিৎ, তৃষ্ণাতুর, টুপটাপ, খই, ক্ষ্যাপাসহ কয়েকটি স্টলে কোনো প্রকাশনা বা বিক্রয়কর্মীর দেখা মেলেনি।  

বইমেলায় লিটলম্যাগ স্টল বসে ২০০১ সাল থেকে। সেবছর বাংলা একাডেমির বহেড়াতলায় লিটলম্যাগ নিয়ে কয়েকজন বসেছিলেন। ২০০৬ সাল থেকে বইমেলায় লিটলম্যাগ কর্নার যুক্ত হয়। সেসময় লিটলম্যাগে কবি-লেখকদের আড্ডা হতো। পক্ষে বিপক্ষে তর্কবিতর্ক হতো। তরুণ-প্রবীণ প্রথাবিরোধী লেখকদের মিলনমেলা ছিল এটি।  

বইমেলার পরিসর বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ২০১৯ সালে লিটলম্যাগকে নিয়ে আসা হয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ থেকে সরে আসার পর থেকেই লিটলম্যাগ তার জৌলুস হারিয়েছে বলে অনেকেই মনে করেন। এবারের মেলাতেও লিটলম্যাগের অবস্থা ম্যাড়ম্যাড়ে; অনাড়ম্বর।   

পাঠকরা বলছেন, বইমেলায় একপাশে পড়ায় এবং অপ্রতুল ও গতানুগতিক লেখার কারণে আগ্রহ হারাচ্ছে লিটলম্যাগ। মেলায় আসা সোহেল নামে এক পাঠক বাংলানিউজকে বলেন, এখানে তেমন কোনো আগ্রহোদ্দীপক বই দেখতে পাইনি। ফলে বেশিক্ষণ থাকিনি।  

বিক্রয়কর্মী ও প্রকাশনা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লিটলম্যাগকে যে স্থান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, সে স্থানের কারণে লেখক-পাঠকের উপস্থিতি কম। এর অবকাঠামো, বসার স্থান না থাকা এবং আলোক স্বল্পতা নিয়ে তারা অভিযোগ করেছেন।  

বাসাপের বিক্রয়কর্মী শামসুদ্দোজা নবাব বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিবছরই কিছু না কিছু বিক্রি হতো। এবার লিটলম্যাগ এমন স্থানে দেওয়া হয়েছে, মানুষই আসছে না।  

কবিতা চর্চার নির্বাহী সম্পাদক আকা আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, লিটলম্যাগে সবসময়ই বিক্রি একটু কম হয়। তবে এখানে বার্তা আদান-প্রদানের যে একটি বিষয় থাকে, তা এবছর একদমই হচ্ছে না। কারণ চত্বরের অবকাঠামো সরু করে এমনভাবে করা হয়েছে যে, এখানে আড্ডার কোনো সুযোগ নেই। কোথাও বসার কোনো ব্যবস্থা নেই।

তিনি বলেন, আলোর স্বল্পতাও রয়েছে। দুটি স্টলের জন্য একটি বাতি দেওয়া হয়েছে, তাও আলো কম। এগুলো নিয়ে আমরা অভিযোগ করেছি, তবে একাডেমি কর্ণপাত করেনি।  

লেখমালার সম্পাদক ও লেখক মামুন মুস্তাফা বাংলানিউজকে বলেন, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে থাকার সময় লিটলম্যাগের যে অবস্থা ছিল, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আনার পর বৈশিষ্ট্য, আমেজ, চরিত্রে— কোনোদিক থেকেই লিটলম্যাগের আগের অবস্থা থাকেনি। যে সাজসজ্জা এখানে করা হয়, তা কোনোভাবে মানা যায় না। এসব নিয়ে প্রতিবারই আমরা অভিযোগ করি, কিন্তু কর্তৃপক্ষ উদাসীন।  

তিনি বলেন, সুযোগ পেয়ে লিটলম্যাগ প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত নয়, এমন অনেক সংস্থাও বইমেলায় প্রবেশ করেছে। তাদের বাদ দিয়ে যারা প্রকৃত লিটলম্যাগ চর্চা করে তাদের বরাদ্দ দিতে হবে। এ ছাড়া লিটলম্যাগের জন্য স্থান নির্দিষ্ট করে দিতে হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ২০১৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২৪
আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।